আজকাল পত্রপত্রিকার পাতা উল্টালেই নারী নির্যাতনের সংবাদ পাওয়া যায়। কিন্তু পুরুষ নির্যাতনের তেমন কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না। প্রশ্ন ওঠা তাই স্বাভাবিক এবং যৌক্তিক, পুরুষরা কি নারী কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে না? এর উত্তরে বলা যায়, হচ্ছে, কমবেশি হচ্ছে। পুরুষরা লজ্জায় সেসব কথা চার দেয়ালের বাইরে আনে না কিন্তু নারী খুব সহজেই চোখের পানি ফেলে তার নির্যাতনের কাহিনী বিভিন্নজনের কাছে অবলীলায় বলে ফেলে। একজন নির্যাতন সহ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে, নিঃশব্দে; অন্যজন নির্যাতন প্রকাশ করে সহজাত চিৎকারে।
আমাদের দেশে যতটা নারীবান্ধব আইনকানুন আছে, পুরুষের ক্ষেত্রে ততটা নেই। কিন্তু কেন? এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা উল্লেখ আছে। অথচ বাস্তবে এর তারতম্য অনেক। পুরুষবান্ধব আইন যদি থাকত, নারীর কারণে নির্যাতিত পুরুষের তাহলে আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ হতো। আরো শান্তিময় হতো পুরুষ জীবন। পুরুষ নির্যাতনে বিভিন্নভাবে নারীর জীবন যেমন বিপন্ন-বিপর্যস্ত হয়ে উঠছে, তেমনি উল্টোটাও ঘটছে। এভাবে কারো কারো সুন্দর গোছানো ঘর ভেঙে যাচ্ছে। হামলা-মামলায় এবং ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে যাচ্ছে নারী-পুরুষের জীবন। অনেকের ঘর না ভাঙলেও তুষের আগুনের মতো ধীরে ধীরে নীরবে পুড়ছে সংসার। নষ্ট হচ্ছে সমাজে তাদের সম্মান ও প্রতিপত্তি। সমাজে নারী-পুরুষের এসব দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পেছনে ফেসবুক, ইন্টারনেট, আপত্তিকর বই, সঙ্গদোষ, লোভ ইত্যাদি বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
আমার পরিচিত কয়েকজন নির্যাতিত পুরুষের কথা এ লেখায় না উল্লেখ করে পারছি না। পাঠক তাহলেই বুঝবেন আমাদের সমাজে ভেতরে ভেতরে কীভাবে পুরুষ নির্যাতিত হচ্ছে।
এক ব্যক্তি বেশ আগে একটি প্রতারণামূলক বিয়ের শিকার হন এবং বিয়ের গোড়াতেই টের পান নববিবাহিত বধূর পূর্ব জীবন প্রশ্নবিদ্ধ। মান-সম্মানের ভয়ে পুরুষটি তা চেপে যান এবং সংসার করতে থাকেন। যেদিন স্ত্রীর অতীত জানতে পারেন স্বামী, সেদিন থেকেই স্ত্রী স্বামীকে নানাভাবে আর্থিক, মানসিক এবং শারীরিকভাবে নির্যাতন করতে থাকেন। স্বামীর সমূদয় অর্থ, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী কৌশলে আত্মসাৎ শুরু করেন। একদিন ভদ্রলোক নিজ বাড়ি ত্যাগ করতে বাধ্য হন। বাড়ির ভেতরে পড়ে থাকে তার চল্লিশ বছরের জীবনের সব সাহিত্যকর্ম, ইতিহাস কর্ম, পা-ুলিপি, দুষ্পাপ্য গ্রন্থ, পুরস্কার এবং সংগৃহীত সব বস্তু। তিনি গোটা জীবনই জাতির জন্য কাজ করেছেন। সুতরাং এগুলো জাতির সম্পদ, রাষ্ট্রীয় সম্পদ। স্বামী-স্ত্রীর পূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে তাদের ভগ্ন প্রায় সংসার আবার জোড়াও লাগতে পারে। এ জন্য চাই সামাজিক মানসম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ।
আর একজন পুরুষকে চিনি। তিনি বিদেশ থাকতেন এবং সেখানে থেকে অতি কষ্টের সকল উপার্জন বিশ্বাস করে স্ত্রীর নামে পাঠাতেন। এক যুগ পর ভদ্রলোক বাড়িতে এসে স্ত্রীর নিকট প্রেরিত অর্থের হিসাব চাইতে গেলে তুমুল দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়, ভেঙে যায় সাজানো সংসার। পরে জানা যায়, এ অর্থ স্ত্রী তার নিজের ভাইকে দিয়ে দিয়েছেন।
অন্য একজন পুরুষের কথা জানি। তিনি রাজধানীতেই বসবাস করেন। মাঝে বাইরে ছিলেন কিছুদিন। এই সময়ে স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে তার স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দুজনেরই একাধিক সন্তান রয়েছে। যারা রাজধানীর নামিদামি স্কুলে শিক্ষারত। একদিন দেখা গেল, ওই মহিলা স্বামীর ওই বন্ধুর হাতে বাড়ির সব দলিলপত্র এবং অর্থকড়ি তুলে দিয়েছেন। শেষের অধ্যায় খুবই করুণ। দুই দিক থেকেই ওই মহিলা প্রত্যাখ্যাত হন। কেউই তাকে ঘরে তুলতে রাজি হন না। সন্তানরাও তার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
এ প্রসঙ্গে একজন মহিলার কথা এ লেখায় না উল্লেখ করলেই নয়। মহিলা ভালো বংশের মেয়ে। সামাজিক প্রতিপত্তিও মন্দ নয়। শিক্ষিত, তবে দেখতে তেমন সুন্দরী নন। তার স্বামী ছোটবেলায় তাদের বাড়ি থেকেই পড়াশোনা করেন এবং উভয় পরিবারের মতামতের ভিত্তিতে তাদের বিয়েও হয়। সন্তানাদি হয়। একদিন স্বামী বড় এক সরকারি কর্মকর্তা হয়ে যান। বিয়ে করেন এক সুন্দরী বিমানবালাকে। এদিকে আগের স্ত্রী হয়ে পড়েন নিঃসঙ্গ, বিপর্যস্ত এবং দিশাহারা। এভাবে নারীরা দেশের আনাচে-কানাচে কম নির্যাতিত হচ্ছে না। এমনকি তাদের জীবনও দিতে হচ্ছে পুরুষের হাতে। কখনো কখনো পুরুষদেরও মাথা কাটা পড়ছে নারীর হাতে।
শুধু আমাদের দেশেই নয়, সমগ্র বিশ্বেই চলছে নারী-পুরুষ দ্বন্দ্ব-সংঘাত। খোদ মার্কিন মুল্লুকের নির্বাচনের কথাই ভাবুন। নারী যে আমেরিকায় কতটা অপছন্দের পুরুষের কাছে, সাম্প্রতিক ওই দেশের নির্বাচনী দলিলই তার বড় প্রমাণ। হিলারি জিততে জিততেও রহস্যময় কারণে নির্বাচনে পরাস্ত হলেন। ভারত-পাকিস্তানে নারী নির্যাতন কম হচ্ছে না। সে তুলনায় আমাদের এখানে কম। নারী এদেশে সম্মানের পাত্রী। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর উত্থানই বুঝিয়ে দেয় যেভাবে পত্র-পত্রিকার নারী নির্যাতনের কথা প্রচার করা হয়, সম্ভবত বাস্তবে তা কম।
নারী-পুরুষের দ্বন্দ্ব-সংঘাত অনেক সময়ই কিছু দুষ্টু মানুষের সৃষ্টি। এসব মানুষ নিজেদের নানা কলঙ্কের জন্য যখন সমাজে দাঁড়াতে পারে না তখন ঈর্ষায় জর্জরিত হয়, মর্ম বেদনায় ভোগে। তখন অন্যরা যারা সমাজে একটু ভালো অবস্থানে আছে, তাদের কৌশলে অন্ধকার পথে নিয়ে যায়, যাতে ওই ভালো মানুষগুলোর অবস্থা তাদের মতোই কলঙ্কিত হয় সমাজে। এতেই তারা তৃপ্তি খোঁজে কিন্তু একবার ভাবে না কলঙ্কের শক্তি এত বেশি, সেখানে যদি কিছু সত্যও থেকে থাকে তাও কলঙ্কিত হয়ে পড়ে, বিতর্কিত হয়ে পড়ে। এ শ্রেণির লোকজন সবসময়ই আলো থেকে অন্ধকারে চলতে অভ্যস্ত। অন্ধকারকেই এদের কাছে প্রকৃত সত্য মনে হয়, আর সত্যকে অন্ধকার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন