চলতি মাসে সৌদি আরব সফরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এক সময় সৌদি আরবকে অপছন্দের একটি রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেছিলেন তিনি। এছাড়া ক্ষমতা গ্রহণ করেই সৌদির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) কড়া সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তেলের সংকট দেখা দেয়ায় এবার ভোল পাল্টাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। শিগগিরই তিনি সৌদি সফরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমগুলো।
সৌদি আরব বাইডেনের দুই অগ্রাধিকার তেল উৎপাদন বৃদ্ধির এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ইয়েমেনে শান্তি চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে সহায়তা করার বিষয়ে সম্মত হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর এমন সিদ্ধান্ত নিলেন বাইডেন।
ওয়াশিংটন পোস্ট ও ভয়েস অব আমেরিকার খবরে বলা হয়েছে, আগামী সপ্তাহে এই সফরে যাবেন বাইডেন। সেখানে তিনি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। যুবরাজের বর্বরতার জন্য একবার তিনি তাকে এড়িয়ে গিয়েছিলেন। বিশ্বজুড়ে জ্বালানির আকশচুম্বী দামের মধ্যে ওপেক প্লাস আরও তেল উৎপাদনের ঘোষণা দেয়ার পর এই সফরের ঘোষণা দেয়া হয়।
বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা সৌদি কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিরাপত্তা ও তেলের ক্ষেত্রে অভিন্ন স্বার্থ নিয়ে আলোচনা করে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য পর্দার আড়ালে কাজ করছেন।
সৌদি আরবের পরে বিশ্বের ২ নম্বর অপরিশোধিত তেল রপ্তানিকারক রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের ফলে এই প্রচেষ্টার সূচনা হয়। তেল উৎপাদনে সৌদি-রুশ তরফে তেল উৎপাদনের সীমা বেঁধে দেওয়ায় অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে এবং এর ফলে আমেরিকানরা রেকর্ড পরিমাণ উচ্চমূল্যে পাম্প থেকে তেল কিনছেন।
বাইডেন এবং ডেমোক্র্যাটরা তেলের উচ্চমূল্যের জন্য ভোটারদের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছেন যার ফলে তেল সরবরাহের সংকট শীর্ষ রাজনৈতিক দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে ।
যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ওপেক প্লাসের (ওপেক দেশগুলো প্লাস রাশিয়া) কাছে তেল উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য আবেদনের ফলাফল বৃহস্পতিবার দেখা গেছে। ওপেক দেশগুলো ঘোষণা করেছে, তারা জুলাই এবং আগস্টে প্রতিদিন ৬ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়াবে যা তেলের দামের কারণে জুঝতে থাকা বিশ্ব অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দেবে।
উৎপাদনের এই বৃদ্ধির ফলে সরবরাহের স্বল্পতা সম্পর্কে উদ্বেগ কমতে দেখা যায়নি। ওপেক প্লাস উত্পাদন বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়ার পরও তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিএনএন জানায়, বাইডেন সৌদি আরবের কার্যত নেতা ৩৬ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মাদ বিন সালমানের সাথে বৈঠক করবেন। ২০১৮ সালে দেশটির ভিন্নমতাবলম্বী সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার জন্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা তাকে অভিযুক্ত করে। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সৌদির সম্পর্ক তিক্ততার পর্যায়ে চলে যায়।
২০১৮ সালে সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ডের পর সৌদি যুবরাজকে খুনি বলে অভিহিত করেছিলেন জো বাইডেন। ২০১৯ সালে নির্বাচনী প্রচারণা চলাকালে সৌদি রাজপরিবারকে একঘরে করার কথাও বলেছিলেন তিনি।
কাজেই সৌদি যুবরাজের সঙ্গে যে কোনো সাক্ষাতকে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এতদিনকার রাজনৈতিক অবস্থান থেকে এক ধরনের পিছু হটা বলে অভিহিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন