১৯৭৯ সালের ২২ নভেম্বর ঝিনাইদহ-কুষ্টিয়ার মধ্যবর্তী মহাসড়কের সাথে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে ১৭৫ একর জমিতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকরেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। ৩১ মার্চ-৮ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে মক্কায় ওআইসি-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের রাষ্টপ্রধান ও সরকার প্রধানদের এক সম্মেলনে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়। এই সুপারিশের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ করা হয়।
১৯৭৭ সালের ২৭ জানুয়ারি প্রফেসর এম. এ. বারীকে সভাপতি করে ৭ সদস্যবিশিষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিকল্পনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ২০ অক্টোবর ১৯৭৭ সালে রিপোর্ট পেশ করে। কমিটির সুপারিশে থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের অধীন (১) আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন, (২) উলূমুত তাওহীদ ওয়াদ দা‘ওয়াহ, (৩) আল হাদীস ওয়া উলূমুল হাদীস, (৪) আশ-শরীয়াহ ওয়া উসূলুস শরীয়াহ, এবং (৫) আল ফাল সাফাহ ওয়াততাসাউফ ওয়াল আখলাক বিভাগ, মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের অধীন (১) আরবী ভাষা ও সাহিত্য, (২) বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, (৩) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, (৪) অর্থনীতি, (৫) লোক প্রশাসন, (৬) তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব, (৭) ভাষাতত্ত্ব, এবং বাণিজ্য বিভাগ এবং বিজ্ঞান অনুষদের অধীন (১) পদার্থ বিজ্ঞান, (২) গণিত, (৩) রসায়ন, (৪) উদ্ভিদবিদ্যা, এবং (৫) প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করা হয়। এছাড়া রিপোর্টে টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, অনুবাদ ও প্রকাশনা ব্যুরো, মধ্যপ্রাচ্য অধ্যয়ন ও মুসলিম বিশ্বের ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউট এবং ১টি স্কুল-মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কথাও উল্লেখ থাকে।
১৯৮০ সালের ১৮ জুলাই সরকারি আদেশে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুর থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুরের বোর্ড বাজারে স্থানান্তর করা হয়। ২০ সেপ্টেম্বর ১৯৮০ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর জাতীয় সংসদে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আইন (অ্যাক্ট নং ২৭, ১৯৮০) পাস হয়। অ্যাক্টে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যাবলি পরিচালনায় স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন-এর অর্থে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হবে। প্রধানমন্ত্রী হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করবেন ভাইস চ্যান্সেলর। তিনি চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত হবেন। ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরীকে প্রথম উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (সংশোধনী) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ (৪২)-এর ৪(বি) ধারা অনুসারে বোর্ড বাজারে ৫০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৮২ সালে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার বিলুপ্ত করা হয়। ১৯৮৩ সালের ২১ জুলাই তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বোর্ডবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বিতীয়বার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২ অক্টোবর ১৯৮৩ সালে ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ সেন্টার পুনঃস্থাপিত হয়।
১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে থিওলজি এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের আল-কুরআন ওয়া উলূমুল কুরআন এবং উলূমুত তাত্তহীদ ওয়াদ দা’ওয়াহ বিভাগে এবং মানবিক ও সমাজবিজ্ঞান অনুষদের হিসাব বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগে তিনশত ছাত্র ভর্তি করা হয়। ১৯৮৬ সালের ২৮ জুন ৮ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন ছাত্র নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বোর্ড বাজারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। কলেজ ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের আরবি ও ইসলামিয়াত এবং মাদরাসা ছাত্রদের জন্য ১০০ নম্বরের ইংরেজি বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৯৮৫-৮৬ থেকে ১৯৮৭-৮৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রত্যেক বিভাগে মোট ছাত্রের ৫০% মাদরাসা ছাত্র ভর্তি করা হয়।
১৯৮৯ সালের ৩ জানুয়ারি মন্ত্রীসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম বন্ধ ঘোষিত হয়। ১৯৯০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এক আদেশে বিশ্ববিদ্যালয় গাজীপুর থেকে কুষ্টিয়া শহরে স্থানান্তর করা হয়। ১৯৯০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম মহিলা শিক্ষক নিয়োগ ও ১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষে প্রথম ছাত্রী ভর্তি করা হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়। এতে করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট মুখ থুবড়ে পড়ে। ১৯৯২ সাল পর্যন্ত কুষ্টিয়া শহরে পিটিআই এবং প্যারামেডিকেল ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১ নভেম্বর ১৯৯২ সালে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় মূল ক্যাম্পাস শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে নিয়ে আসা হয়।
১৯৯৭-৯৮ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত ৩ বছরের পরিবর্তে ৪ বছরের অনার্স কোর্স এবং ২০০৬-২০০৭ শিক্ষা বর্ষ থেকে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু করা হয়। বর্তমানে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫টি অনুষদের অধীনে ২৫টি বিভাগ রয়েছে। অনুষদগুলি হল: ধর্মতত্ত্ব অনুষদ: আল কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, দাওয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অনুষদ: ফলিত পদার্থবিদ্যা, ইলেকট্রনিক্স ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ফলিত রসায়ন ও রাসায়নিক প্রযুক্তি বিভাগ, ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ, বায়োটেকনোলজি এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ, গণিত বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ: একাউন্টিং এবং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, ব্যবস্থাপনা বিভাগ, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগ, মার্কেটিং বিভাগ, মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ: আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, বাংলা বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, ইংরেজি বিভাগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, লোকপ্রশাসন বিভাগ, ফোকলোর স্টাডিজ বিভাগ, আইন ও শরীয়াহ্ অনুষদ: আইন ও মুসলিম বিধান বিভাগ, আল-ফিকহ বিভাগ
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য ৬টি আবাসিক হল আছে। ১. সাদ্দাম হোসেন হল ২. জিয়াউর রহমান হল ৩.বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল (এখানে বিদেশি ছাত্ররাও থাকেন)। ৪. লালনশাহ হল ৫. বেগম খালেদা জিয়া হল এবং ৬. বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল।
সউদী সরকারের অর্থানুকূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাদশাহ ফাহাদ বিন আবদুল আজিজ কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিটি বিভাগে বিভাগীয় গ্রন্থাগার এবং কম্পিউটার সেন্টার রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে শরীরচর্চা ও ক্রীড়া বিভাগ, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর ও স্কাউটস। এছাড়া ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রসহ রয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্র, স্টেডিয়াম, জিমনেসিয়াম, প্রেস, কেন্দ্রীয় মসজিদ, শহীদ মিনার, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য, ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ এবং নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩টি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন ১৯৯৩ সালের ২০ এপ্রিল, দ্বিতীয় সমাবর্তন ১৯৯৯ সালের ৫ নভেম্বর এবং তৃতীয় সমাবর্তন ২০০২ সালের ২৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০০৪ সালের ৩০ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ বছর পূর্তিতে রজত-জয়ন্তী উৎসব পালন করা হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোট ৯টি জার্নাল প্রকাশিত হয়। অনুষদগুলি থেকে দ্যা ইসলামিক ইউনিভারসিটি স্টাডিজ জার্নাল, আইআইইআর রিসার্চ জার্নাল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জার্নাল, আল-কুরআন এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দ্যা কুরআনিক স্টাডিজ, দাওয়াহ্ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে দাওয়াহ রিসার্চ জার্নাল, আল-হাদীস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে হাদীস রিসার্চ জার্নাল, আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে এরাবিক রিসার্চ জার্নাল, ইংরেজি বিভাগে থেকে ক্রিটিক এবং বাংলা বিভাগ থেকে বাংলা গবেষণা পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস-চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর এ.এন.এম মমতাজ উদ্দীন চৌধুরী। এরপর প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর মুহাম্মদ আব্দুল হামীদ, প্রফেসর ইনআম-উল হক, প্রফেসর মুহম্মদ কায়েস উদ্দীন, প্রফেসর মো. লুৎফর রহমান, প্রফেসর মুহাম্মদ মুস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর এম. রফিকুল ইসলাম, প্রফেসর ফয়েজ মোহাম্মদ সিরাজুল হক, প্রফেসর এম আলাউদ্দীন। প্রফেসর ড.আবদুল হাকিম। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. হারুন-উর রাশিদ আসকারী, প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর: প্রফেসর ড. শাহিনুর রহমান।
ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে দেশের ওলামায়ে কেরামের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের রজত জয়ন্তী স্মারকপত্রে প্রফেসর ড. তাহির আহমদ তার ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকাল প্রবন্ধে উল্লেখ করেছেন। ‘১৯২৯ সালে কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার ছাত্ররাই প্রথম এ দাবি উত্থাপন করে। আসাম বেঙ্গল জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়া নামে মাদরাসা ছাত্রদের নতুন ছাত্র সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আকরাম খাঁ, প্রধান সম্পাদক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী, মাওলানা ছামছুল হক ফরিদপুরী, পীর মোহসীন উদ্দীন দুদু মিয়া, জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, ছারছীনার মরহুম পীর আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ, বিশিষ্ট আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা আবদুর রহীম, মাওলানা নূর মোহাম্মদ আজমী, খতি মাওলানা ওবায়দুল হক, মাওলানা মো. ইয়াকুব শরীফ, জমিয়াতুল মোদার্রেছীনের সভাপতি মাওলানা এম এ মান্নান, মাসিক মদিনার সম্পাদক মাওলানা মহিউদ্দিন খান প্রমুখের নিরলস চেষ্টা, সাধনা নেতৃত্ব ও অনুপ্রেরণায় মাদরাসা ছাত্রদের ঐতিহ্যবাহী একক সংগঠন জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার প্রাণের দাবি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার যে আন্দোলন যুগ যুগ ধরে চলে আসছিল তার প্রতি তৎকালীন সমমনা বহু ছাত্র ও পেশাজীবী সংগঠন যেমন জমিয়াতুল মোদার্রেছীন, জমিয়াতে ইত্তেহাদুল উলামা, জমিয়তে আইম্মায়ে মাসজিদ, জমিয়তে তালাবায়ে কাওমিয়া, ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ, প্রভৃতি জোর সমর্থন জানায়। বৃটিশ সরকার এ দাবির প্রতি কর্ণপাত না করলেও পাকিস্তান সরকার বার বার এ দাবি পূরণ করার প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে।’
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা দেখি, বাংলাদেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয় কোন দিক থেকে পিছিয়ে নেই। কিন্তু যে প্রত্যাশা নিয়ে বহু ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার কোন প্রতিফলন আমরা দেখছি না। কথা ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বাংলাদেশ নয় বরং মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দেবে। উচ্চতর ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান হবে এ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে মুসলিম জাহানের মধ্যে এক সেতুবন্ধন রচনা করবে। আর এটা হবে ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৭ সালে মক্কায় ওআইসি-এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকার প্রধানদের সম্মেলনে বিভিন্ন মুসলিম রাষ্ট্রে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুপারিশের ফসল আজকের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের রাষ্ট্র পরিচালকদের পাশ্চাত্যমুখী মনোভাবের কারণে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমপ্রধান দেশে ইসলামের বিভিন্ন দিক ও বিভাগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের একটি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী বিশ্ববিদ্যলয়ের দিকে কেউ নজর দেয়নি। আজকের ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদরাসা ছাত্রদের জন্য হাতেগোনা কয়েকটি বিষয় রাখা হয়েছে। অথচ কথা ছিল সকল বিষয়ে ৫০% মাদরাসার ছাত্র ভর্তি করা হবে। তারা ইসলামী ও সাধারণ বিষয়ের সমন্বয়ে যুগোপযোগী ইসলামী স্কালার হয়ে বের হবে। সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসনের কাছে জোর দাবি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ইসলামী শিক্ষা ও গবেষণার পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করান। তাতে দেশে বিদেশে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে আপনাদের সম্মান বাড়বে, দেশের সম্মানও বাড়বে।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাক্তণ ছাত্র ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া- ঝিনাইদহ
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন