সিলেট থেকে লন্ডনগামী সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। বিমানবন্দরের রানওয়েতে বন্যার পানি চলে আসায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ফ্লাইট বন্ধ থাকবে আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত। তবে সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকেই পুনরায় ফ্লাইট চালু হবে বলে আশাপ্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, ইংল্যান্ডের বেশিরভাগ যাত্রী সিলেট অঞ্চলের হওয়াতে বাংলাদেশ বিমানের সপ্তাহে চারদিন ঢাকা-সিলেট-লন্ডনের হিথ্রো ও দুই দিন ঢাকা-সিলেট-ম্যানচেস্টার ফ্লাইট হয়। সরাসরি ঢাকা থেকে কোনো ফ্লাইট যায় না। তবে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে বন্যার পানি চলে আসায় বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর বাংলাদেশ বিমানের আগামীকাল বুধবার পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট-লন্ডন ফ্লাইটগুলোও বাতিল করা হয়। বাতিল করা ফ্লাইটের তারিখ পরে জানানো হবে বলে জানিয়েছে বেবিচক। এতে বিপাকে পড়ে যান যাত্রীরা। তবে বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলো ঢাকা থেকে চালু করার দাবি জানিয়েছে যাত্রীরা।
যাত্রীরা জানান, সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। কিন্তু সিলেটের বেশিরভাগ বাসিন্দা ইংল্যান্ডে বসবাস করেন। তবে ফ্লাইট বন্ধ রাখলে ওইসব বাসিন্দা দেশে যাতায়াত করতে পারবে না। কিন্তু বন্যা কবলিত এলাকায় লোকজনের পাশে দাঁড়াতে অনেকেই এখন দেশে আসতে চাচ্ছেন। কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ থাকার কারণে তারা আসতে পারছেন না। তাই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চালু না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইট চালু করার দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।
জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ (জিএম-পিআর) তাহেরা খন্দকার বলেন, ফ্লাইটের বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী বৃহস্পতিবার থেকে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু হতে পারে। বিমান বাংলাদেশ সিলেটের ব্যবস্থাপক দেবব্রত মল্লিক বলেন, আগের ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার (২১ জুন) থেকে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফ্লাইট চালুর কথা থাকলেও গতকাল সোমবার ঢাকা থেকে সিভিল এভিয়েশনের একটি বিশেষজ্ঞ দল রানওয়ে পরিদর্শন করেন। তারা জানিয়েছেন, ২২ জুন পর্যন্ত রানওয়ে বন্ধ থাকবে। পরবর্তীতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) থেকে ফ্লাইট ওঠা-নামা শুরু হবে।
অপরদিকে, চলমান বন্যায় বিমানবন্দরের অবস্থা ও প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষে বিমানবন্দরের প্রস্তুতি সরেজমিনে দেখার জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি গতকাল সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেন। এসময় তিনি বিমানবন্দরের রানওয়ে, এপ্রোচ এরিয়া ও টার্মিনালের বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখেন। পরিদর্শনকালে তার সাথে ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সদস্য ( পরিচালন ও পরিকল্পনা) এয়ার কমোডর সাদিকুর রহমান চৌধুরী।
পরিদর্শন শেষে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি বলেন, এপ্রোচ এলাকার বাতিতে কোনো সমস্যা না থাকলে এবং আর যদি বৃষ্টিপাত না হয়, বন্যার পানি আর না বাড়ে তাহলে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটি উড়োজাহাজ উঠা-নামার জন্য দ্রুতই খুলে দেয়া হবে। যাত্রী ও এয়ারক্রাফটের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিয়ে বিমানবন্দর খুলে দেয়ার ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিমানবন্দরের এপ্রোচ এলাকা থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও এই মুহূর্তেই বিমান চলাচল শুরু করা যাবে না। এপ্রোচ এলাকার বাতিগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না তা পরীক্ষা করতে হবে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি অব বাংলাদেশের একটি টীম ইতোমধ্যে সিলেট বিমানবন্দরে এসেছে এটি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য।
উল্লেখ্য, চলমান বন্যার কারণে রানওয়ে সংলগ্ন এপ্রোচ লাইট এলাকায় পানি উঠে যাওয়ার কারণে গত ১৭ জুন থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ওঠানামা বন্ধ রয়েছে । অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চলাচলের পাশাপাশি সিলেট-লন্ডন আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা হয় এই বিমানবন্দর থেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন