হাজেরা (রা.) যখন শিশু ইসমাঈল (আ.)-এর জন্য উৎকণ্ঠিত, একটুখানি পানির আশায় এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছেন, পৃথিবী যখন অন্ধকার হয়ে আসছিল চোখের সামনে, আশার কোনো আলো দেখা যাচ্ছিল না, সমাধানের কোনো উপায় বুঝে আসছিল না, তখনই নেমে আসে রহমতের বারিধারা। আবে যমযম।
বান্দা যদি আল্লাহর ফয়সালা মেনে নেয়, আল্লাহমুখী হয়, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখে তাহলে আল্লাহর রহমত তার শামিলে হাল হয়Ñ এ যমযম তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। যমযম আমাদের আল্লাহর রহমতের আশাবাদী হতে উদ্বুদ্ধ করে। বিপদের ঝঞ্ঝাবায়ুর মাঝেও মুক্তি লাভের আশায় বুক বেঁধে রাখার প্রেরণা যোগায়। আল্লাহর রহমতের প্রত্যাশী করে।
যমযমে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি : হাদিস শরীফে যমযমের অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) নবীজী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন : যমযম ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী : ১১১৬৭)।
এ হাদিসে যমযমের পানির দু’টি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। ১. এতে রয়েছে খাবারের বৈশিষ্ট্য। ২. এ পানি পান করে সুস্থতা লাভ হয়। মানুষ জীবন বাঁচানোর তাগিদে খাদ্য গ্রহণ করে। খাবারের মাধ্যমে দেহে শক্তি সঞ্চার হয়। কর্মপ্রেরণা সৃষ্টি হয়। জীবনের পথে মানুষ এগিয়ে চলে। খাদ্যের এই বৈশিষ্ট্য আল্লাহ তাআলা যমযম পানির মধ্যেও রেখেছেন। যমযম পান করেও ক্ষুধা নিবারণ হয়। মানুষ কর্মশক্তি লাভ করে।
হযরত আবু যর গিফারি (রা.) ইসলাম গ্রহণের পূর্বে নবীজী (সা.)-এর সত্যতা যাচাই করার জন্য মক্কা এসে ত্রিশ দিন পর্যন্ত অবস্থান করেন। এ পুরোটা সময় তিনি শুধু যমযম পানি পান করে কাটিয়েছেন। (দীর্ঘ হাদিসের একাংশে) আবু যর (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এসে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করেন। এরপর তিনি ও তার সাথী তাওয়াফ করে নামায আদায় করেন। নবীজী নামায শেষ করলে আমি তাকে সালাম দিই।
নবীজী জিজ্ঞাসা করেন, কে তুমি? গিফার বংশের লোক আমি। কোথায় ছিলে? ত্রিশ দিন পর্যন্ত এখানেই ছিলাম। কে তোমাকে খাবার খাইয়েছে। উত্তরে তিনি বললেন : যমযম ছাড়া আমার আর কোনো খাবার ছিল না। শুধু এ পানি পান করেই দিন কাটিয়েছি। এমনকি মোটা হয়ে গেছি। (এ দীর্ঘ সময়ে) আমি কখনো ক্ষুধা অনুভব করিনি। নবীজী তখন বলেন : এটা বরকতময় পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য। (দ্র. সহীহ মুসলিম : ২৪৭৩)।
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহ. বলেন, আমি এমন মানুষও দেখেছি, যিনি অর্ধ মাস কিংবা তারও বেশি সময় শুধু যমযম পানি পান করেই কাটিয়েছেন। কখনো ক্ষুধা অনুভব করেননি। অন্যদের সাথে খুব স্বাভাবিকভাবেই তাওয়াফ করতেন। তিনি আমায় বলেছেন, একবার তো শুধু যমযম পান করেই চল্লিশ দিন কাটিয়েছেন। (যাদুল মাআদ : ৪/৩৯৩)।
এ তো কিতাবের পাতায় উল্লেখিত কয়েকটি ঘটনা মাত্র। জানা নেই, যুগে যুগে কত শত আল্লাহর বান্দা শুধু যমযম পান করেই দিনের পর দিন কাটিয়েছেন এবং ঈমানী শক্তিতে উজ্জীবিত হয়েছেন। উপরোক্ত হাদিসে যমযমের দ্বিতীয় যে বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো রোগ থেকে মুক্তিলাভ। আল্লাহ তাআলা যমযমের পানিতে রোগ থেকে মুক্তি লাভের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রেখেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন : যমযম ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠ পানি। এতে রয়েছে খাদ্যের বৈশিষ্ট্য ও রোগ থেকে মুক্তি। (আলমুজামুল কাবীর, তবারানী : ১১১৬৭)।
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন : যে উদ্দেশ্যে যমযম পান করা হবে তা পূরণ হয়। যদি তুমি রোগমুক্তির জন্য তা পান করো আল্লাহ তোমাকে সুস্থ করে দেবেন। (মুসতাদরাকে হাকেম : ১৭৩৯)। রাসূল (সা.) রোগীদের ওপর যমযমের পানি ছিটাতেন এবং তাদের তা পান করতে দিতেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) নিজেও রোগমুক্তির জন্য যমযমের পানি পান করতেন এবং এ দুআ পড়তেন : হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে উপকারী ইলম, প্রশস্ত রিযিক ও সব রোগ থেকে মুক্তি চাই। (মুসতাদরাকে হাকেম : ১৭৩৯)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন