সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ব্যবসা বাণিজ্য

বাড়ছে বেকারের মিছিল

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:০৯ পিএম, ২৬ নভেম্বর, ২০১৬

মুন্সী কামাল আতাতুর্ক মিসেল, চান্দিনা থেকে : কুমিল্লায় বেকারত্বের হার বেড়ে গেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে আংশিকভাবে কর্মে নিয়োজিত বা আধা বেকারত্বের হারও। বিশেষ করে আধা বেকারত্বের হার বেড়ে উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। দীর্ঘদিন ধরে বেকারত্বের হার প্রায় একই জায়গায় স্থির থাকার পর সা¤প্রতিক সময়ে কুমিল্লায় অটোবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ হওয়ায় খানিকটা বেড়ে গেছে বেকারের সংখ্যা। বর্তমানে আংশিকভাবে কর্মে নিয়োজিত বা আধা বেকারত্বের হার অত্যন্ত বেশি। বর্তমানে এক্ষেত্রে খুবই উচ্চ হার বিরাজ করছে। কুমিল্লার গ্রাম ও শহর দুই জায়গাতেই এ ধরনের বেকারত্বের হার ব্যাপক। আংশিকভাবে কাজ করার সুযোগ পায় বা আধা বেকারের সংখ্যাতেই এর প্রতিচ্ছবি পাওয়া যায়। তাদের বেশিরভাগই মূলত বেকার। জীবন নির্বাহ করার মতো পর্যাপ্ত উপার্জন তাদের নেই। এছাড়াও গত কয়েক বছরে যে তুলনায় শ্রমবাজারে শ্রমশক্তি বেড়েছে, সে তুলনায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। যে কারণে পূর্ণ বেকার ও আংশিক কাজ করার সুযোগ পায়Ñ এমন শ্রমশক্তি আনুপাতিক হারে বেড়ে গেছে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা যায়, কুমিল্লায় যানজট এড়াতে গত ১৫ নভেম্বর থেকে প্রধান সড়ক থেকে আটোবাইক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে স্থানীয় প্রশাসন। এর পর থেকে কুমিল্লায় চলাচলরত অটোরিকশা চালকরা পড়ে যায় বিপাকে। নিত্যপণের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের জীবনযাত্রায় যখন হোঁচট খাচ্ছিল বারবার ঠিক সে সময়ে যানজটের নামে প্রশাসনের একতরফা সিদ্ধান্তের কারণে কুমিল্লার গ্রাম-শহর সব জায়গাতেই বেকারত্ব ও আধা বেকারত্বের হার আগের তুলনায় বেশ বেড়ে গেছে। গত ২০১১ সালে শহরে প্রথমে কয়েকটি অটোবাইক নিয়ে এ পরিবহনের যাত্রা শুরু হয়। তখন এ গাড়ি দেখে অনেকে উপহাস করত। সহনীয় মূল্য, ঝুঁকিহীন ড্রাইভিং এবং ট্রাফিক ঝামেলা না থাকায় দেখতে দেখতে মাত্র পাঁচ বছরে জেলা শহরে প্রায় ১২ হাজার অটোবাইক চলতে শুরু করেছে। জেলা শহরে অটোবাইক ও রিকশা চালকদের মধ্যে অনেকে শিক্ষিত বেকার, কেউ কেউ বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জমা দিয়ে প্রতারিত হয়ে এবং অনেকে বিদেশ থেকে ফিরে এসে এখন ইজিবাইক চালিয়ে মাসে আয় করত ১৫-২০ হাজার টাকা। কিন্তু যানজটের নামে অটোবাইক ও রিকশা প্রধান সড়কে নিষিদ্ধ করায় অনেকেই এখন বেকার হয়ে কষ্টে দিনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। অটোরিকশা চালক জালাল জানান, এভাবে অটোরিকশা বন্ধ করে দেয়ায় চোখেমুখে শুধু অন্ধকার দেখছি। অভাব যেন কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না। অপর চালক বশির হোসেন জানান, বাজারে নিত্যপণের এভাবেই মূল্যবৃদ্ধি। সারাদিন অটোরিকশা চালিয়ে যা কামাই করতাম তা দিয়েই সংসার চালাতে হিমশিম খেতাম। সেখানে বেকার হয়ে যাওয়ায় অভাব-অনটনের মাঝে দিনযাপন করতে হচ্ছে। শহরের তুলনায় গ্রামে বেকারত্বের হার বেশি। তবে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া, কর্মসংস্থান হওয়া মানুষের সংখ্যাও বেড়েছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে দেশের কর্মসংস্থানের খাতগুলোতেও কিছু পরিবর্তন এসেছে। যেমনÑ কৃষি খাতে কর্মসংস্থান আগের তুলনায় কমে গেছে। বেড়েছে অকৃষি খাতের কর্মসংস্থান। একদিকে বেকারত্ব অন্যদিকে নিত্যপণের দাম বৃদ্ধিতে সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়ে গেছে দ্বিগুণ। ইতোমধ্যে নিত্যপণ্যের বাজার অনেকের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম চড়া থাকায় গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাওয়া শুরু করেছে। সীমিত আয়ের মানুষও কেনাকাটা কমিয়ে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে চাকরিজীবী ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা এখন আর আগের মতো ব্যাংকে নিয়মিত সঞ্চয় করতে পারছেন না। বরং গচ্ছিত সঞ্চয় ভাঙতে শুরু করেছেন।
তথ্য অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় সীমিত আয় ও বেসরকারি চাকরিজীবী অনেকে প্রয়োজনীয় পণ্য তালিকা থেকে কিছু পণ্য কেনা বাদ দিচ্ছেন। ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় বাড়ছে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা। এ অবস্থায় স্বল্প আয়ের মানুষও ক্রমান্বয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাজুক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সরকারি প্রশাসনযন্ত্রে দুর্নীতির উচ্চমাত্রা, চাঁদাবাজি, গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো সমস্যা। শিল্প খাত স্থবির হয়ে পড়ায় ও অসংগঠিত খাতের কোনো বিকাশ না ঘটায় স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। দিন দিন বেকারের মিছিল বড় হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা। আয় ও ব্যয়ে সঙ্গতি নেই বেশিরভাগ মানুষের। সঞ্চয় ভেঙে নিঃস্ব হয়েছে অনেকে। ধার-কর্জের ওপর নির্ভর করে নিত্যদিন চালাতে হচ্ছে অনেককেই। এ ধরনের পরিস্থিতিতে দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহে কেউ ঋণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে হাত বাড়াচ্ছে।
কেউবা তার সঞ্চিত অর্থে কেনা সম্পদ বিক্রি বা ক্ষেত্রবিশেষে সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। অথচ খরচ শুধু বাড়ছেই। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়ছেই। আয় বৃদ্ধির কোনো সুযোগ না থাকলেও খরচ বাড়ার হার লাগামছাড়া। অর্থনীতির দুষ্টচক্রের মতো সরকার ও সাধারণ মানুষের খরচও চক্রাকারে ঘুরছে। একটির সঙ্গে অন্যটি সম্পর্কিত। সাধারণ মানুষের খরচ বাড়ার বিষয়ে সরকার এখন নির্বিকার। সিন্ডিকেটের ইচ্ছেমতো এই খরচ বাড়ছে। ক্রমাগত খরচ বাড়লেও জীবনযাত্রার মান বাড়ছে না। বরং আগের চেয়ে কম সেবা নিতে খরচ করতে হচ্ছে বেশি। বিদ্যুৎ, পরিবহন, নিত্যপণ্য ও খাদ্যদ্রব্য খাতে খরচ বেড়েছে। এতে নির্ধারিত আয়ের মানুষের সমস্যা হচ্ছে বেশি। পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে পরিবহন খরচ বাড়ার কথা বলে। ফলে চাল, ডাল, তেলের সঙ্গে বেড়েছে সবজির দামও। বর্তমানে প্রতি কেজি মোটা চাল বাজারে বিক্রি হচ্ছে গড়ে ৩৫ থেকে ৫০ টাকা দরে। মূল্যবৃদ্ধি অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতিটি মানুষের।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন