মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

অভ্যন্তরীণ

বিশেষ পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলক চাষে রেকর্ড পরিমাণ ফলন

বিলুপ্তপ্রায় কাটারিভোগ ধান

নজির হোসেন নজু, সৈয়দপুর (নীলফামারী) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সৈয়দপুরে বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি কাটারিভোগ ধান পরীক্ষামূলক এক বিশেষ পদ্ধতিতে চাষাবাদে রেকর্ড পরিমাণ ফলন পাওয়া গেছে। এতে বিঘা প্রতি ফলন মিলেছে সাড়ে ১০ মণ। সম্প্রতি উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের অসুরখাই গ্রামের কৃষক আহসান-উল-হক বাবু’র চাষকৃত কাটারিভোগ জাতের ক্ষেতের ধান কর্তনের পর পরিমাপ করে ওই ফল পাওয়া গেছে। বিশেষ পদ্ধতিতে চাষ করা কাটারিভোগ ধানের কর্তন উপলক্ষে এক মাঠ দিবসের আয়োজন করা হয়। এতে এক্সিলারেটিং এগ্রিকালচার প্রোডাক্টটিভিটি ইমপ্রুভড প্রকল্পের কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. শাহরুখ আহমেদ, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী মঈনুল আহসান, নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক গোলাম মো. ইদ্রিস, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট (ব্রি) রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ শীলা প্রামাণিক, সৈয়দপুর উপজেলা কৃষি অফিসার (ইউএও) কৃষিবিদ মোছা. হোমায়রা ম-ল, কামারপুকুর ইউপি’র সংশ্লিষ্ট কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাসুদেব দাস ও আসাদুজ্জামান আশা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মাঠ দিবসের আলোচনা বলা হয়, প্রচলিত ধান চাষ পদ্ধতির বাইরে ভিন্ন এক পদ্ধতিতে কাটারিভোগ ধান চাষাবাদ করা হয়েছে। সচরাচর ধান চাষ পদ্ধতিতে চারা রোপণের সময় জমি সমতল এবং ৩/৪ ইঞ্চি পানি জমিয়ে রাখা হয়। কিন্তু কাটারিভোগ ধানের চাষে তৎপরিবর্তে মূল জমিতে রেইজ্ড বেড এন্ড ফারো পদ্ধতিতে অর্থাৎ আলু চাষের সময় দুই পাশ থেকে যেমন মাটি তুলে উঁচু বেড তৈরি করা হয় তদ্রুপ কাটারিভোগ ধান চারা রোপণের আগে উঁচু বেড তৈরি করে নেয়া হয়। ওই বেডের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরে মাত্র একটি করে ধানের চারা রোপণ করা হয়েছিল। আর চারা  ছিল ১৩/১৪ দিন বয়সী। অর্থাৎ বীজতলায় ধান বীজ বপনের মাত্র উল্লিখিত সময়ে মধ্যে তা তুলে এনে জমিতে রোপণ করা হয়েছিল। একটি চারা থেকে ক্রমান্বয়ে সর্বোচ্চ ১৫০টি কুঁসি পাওয়া যায়। তার মধ্যে কার্যকরী শীষের সংখ্যা সর্বোচ্চ ৯০টি এবং সর্বনি¤œ ৪৫টি। আর একেকটি ধানের শীষে সর্বোচ্চ ৩১০টি এবং কমপক্ষে ১৭৫টি ধানের দানা পাওয়া যায়। সবচেয়ে লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সম্পূর্ণ জৈব সার প্রয়োগ করা হয়েছিল। প্রয়োগকৃত জৈব সারের মধ্যে রয়েছে ভার্মি কম্পোস্ট, বায়োগ্যাস স্লারি, খৈল, হাঁড়ের গুঁড়া প্রভৃতি। সৈয়দপুর উপজেলার কামারপুকুর ইউনিয়নের আদর্শ কৃষক মো. আহসান-উল-হক বাবু জানান, আমাদের ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি বিলুপ্ত প্রায় কাটারিভোগ  জাতের ধান আবাদ পুনরায় ফিরিয়ে আনা এবং  তার ফলন বৃদ্ধির লক্ষ্যে তার এ প্রচেষ্টা। তিনি বলেন, প্রথম বারের তিনি এ ধানের চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন। আগামীতে এ ফলন বিঘা প্রতি ২০ মণ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদী তিনি। আর মূূলত জমির উর্বরতা শক্তি ঠিক রাখতে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার প্রয়োগে যে ভাল ফলন পাওয়া যায় তা প্রমাণেও এ উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি সুগন্ধি কাটারিভোগ চালের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে দেশ ও বিদেশ। ফলে এ ঐতিহ্যবাহী বিলুপ্ত প্রায় ধান চাষ করে আমাদের দেশের কৃষক সমাজ লাভবান হবেন বলে তিনি মনে করেন। মাঠ দিবসে নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) গোলাম মো. ইদ্রিস বলেন, কৃষক আহসান-উল-হক বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহী সুগন্ধি কাটারিভোগ ধান পরীক্ষামূলক বিশেষ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেছেন। তিনি ওই কৃষকের চাষাবাদ পদ্ধতি দেখে মুগ্ধ হন এবং প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে তিনি  বলেন ওই কৃষক বিলুপ্ত জাতের কাটারিভোগ ধান চাষ করেই ক্ষান্ত হননি, জমির উ র্বরা রক্ষার জন্য রাসায়নিক সারের বদলে পর্যাপ্ত জৈব সার প্রয়োগ করেছেন। এতে রেকর্ড পরিমাণ ফলনও পাওয়া গেছে। এতে করে সুগন্ধি কাটারিভোগের আবাদের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী। তার এ নতুন চাষাবাদ পদ্ধতি আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে জেলার অন্যান্য কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া উদ্যোগ গ্রহণ করব।  

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন