আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন ধরণের পদক্ষেপ নেবে না আওয়ামী লীগ। আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে এবং তাতে সব দল অংশ নেবে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে। আওয়ামী লীগের হাই-কমাণ্ডের নেতারা বলছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকে বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে যত ধরণের সুবিধা দেয়া যায় বা তাদের দাবি দাওয়া মেনে নেয়ার সুযোগ আছে তা মানা হবে। তবে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোন দাবি মানবে না ক্ষমতাসীনরা। বিএনপি আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কী করবে না এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন করবে, সরকার শুধু সহায়তা করবে মাত্র। এদিকে নির্বাচনের বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের কোন প্রভাব যেন না থাকে সে বিষয়েও কৌশলী হবে আওয়ামী লীগ সরকার।
সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে বলছেন, আওয়ামী লীগের মিষ্টি কথার ফাঁদে এবার বিএনপি পা দেবে না। তাদের দাবি আদায় না হলে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি।
তবে বিএনপির দাবি দাওয়া বা তাদের বক্তব্য নিয়ে চিন্তিত নয় আওয়ামী লীগ নেতারা। বিএনপি সময় হলে নির্বাচনে আসবেই। আর নির্বাচনের যেহেতু অনেকটা সময় বাকী আছে তাই এখনই বিএনপির বিষয়ে বিশেষ কোন চিন্তা করার কারণ নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন ইনকিলাবকে বলেন, সংবিধানের আলোকে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এর বাইরে যাবার কোন সুযোগ নেই। বিএনপি নির্বাচনে না আসলেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, বিএনপি অনেক কথাই বলে। তারা নির্বাচনে আসবে না, আবার নির্বাচনে আসার নাম করে মনোনয়ন বাণিজ্য করবে, এটা তাদের দলের অতীত কর্মকাণ্ড।
বিএনপি নেতাদের হুমকি এবং রাজপথে ফায়সালা করার বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে না এসে ২০১৪ সালের মত জ্বালাও পোড়াও করতে চাইলে শক্ত হাতে তাদের প্রতিহত করা হবে।
তবে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন বিএনপি নেতারা নির্বাচনে না আসার মত ভুল করবে না। তারা দর-কষাকষি হিসেবে নির্বাচনে না আসার বক্তব্য দিচ্ছেন। বিদেশিদের কাছে ধরনা দিয়ে শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আসবে। আওয়ামী লীগের হাই-কমাণ্ডের নেতারা আরো বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশে সরকার পরিবর্তন হবে। এর বাইরে সরকার পরিবর্তনের কোনো সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগকে সরকার পতনের হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে এবং তাতে সব দল অংশ নেবে। সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে স্বচ্ছভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিদিন নির্বাচন নিয়ে কথা বলার অর্থ হচ্ছে, তারা রাজনৈতিক কোনও ইস্যু না পেয়ে রাজনীতির মাঠে টিকে থাকতে ইস্যু বানিয়ে কথাবার্তা বলে। বিদেশিদের কাছে ধরনা দেওয়া বিএনপির রাজনৈতিক দৈন্যতার বহিঃপ্রকাশ।
এদিকে দেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের হস্তক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক সরকার। কিছু ‘সাম্প্রতিক ঘটনার’ পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি ঢাকার সব বিদেশি কূটনীতিক এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের চিঠি পাঠিয়ে কূটনৈতিক রীতিনীতি মেনে চলার কথা ‘মনে করিয়ে’ দিয়েছে। ১৮ জুলাই পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে, সব কূটনীতিক সংস্থা ও ব্যক্তিদেরকে ভিয়েনায় অনুষ্ঠিত কূটনৈতিক সম্পর্ক সংক্রান্ত মহাসম্মেলন (১৯৬১) ও দূতাবাস সম্পর্ক সংক্রান্ত মহাসম্মেলনে (১৯৬৩) সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত কূটনীতিক নীতিমালা মেনে চলার জন্য অনুরোধ করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, বিদেশিদের কাছে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা মোটেও কাম্য নয়। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো নিয়ে যেকোনও সমস্যা আমরা নিজেরাই বসে সমাধান করতে পারি। আর আমরা যদি না পারি কোনও বিদেশি এসে তা সমাধান করতে পারবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন