ইসলামী আরবী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহাররাম গুণবাচক বিশেষণে পাঁচটি বর্ণ আছে। অনুরূপভাবে পাঁচ অক্ষরবিশিষ্ট গুণবাচক বিশেষণরূপে চিহ্নিত আরো বহু শব্দ আল কুরআনে ব্যবহৃত হয়েছে। তন্মধ্যে ‘ওয়াছীলাতুন’ শব্দটি একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এই শব্দে পাঁচটি বর্ণ রয়েছে। যথাÑ ওয়াও, ছিন, ইয়া, লাম এবং তা। আল-কোরআনে ইরশাদ হয়েছে : হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তার নৈকট্য অন্বেষণ করো এবং তার পথে জিহাদ করো যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার। (সূরা আল-মায়েদাহ : আয়াত ৩৫)। আল-কোরআনে ওয়াছিলাতুন্ শব্দটির ব্যবহার আরো একবার লক্ষ করা যায়। ইরশাদ হয়েছে : যাদেরকে তারা আহ্বান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মধ্যস্থ তালামল করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আমল করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ। (সূরা বানী ইসরাাঈল : আয়াত ৫৭)। আরবী ‘ওয়াছিলাতুন’ শব্দটি ওয়াছলুন ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ সংযোগ স্থাপন করা, আগ্রহ ও সম্প্রীতি সহকারে সাক্ষাৎ করা। আর ওয়াছিলাতুন ঐ বস্তুকে বলা হয়, যা একজনকে অপর জনের সাথে আগ্রহ ও সম্প্রীতি সহকারে সংযুক্ত করে দেয়।
আর ‘ওয়াছিলাতুন’ শব্দটির সম্পর্ক আল্লাহর সাথে হলে ঐ বস্তুকে বোঝানো হবে যা বান্দাহকে আগ্রহ ও মহব্বত সহকারে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়। তাই, বিশেষজ্ঞ তাফসীরকারগণ এই শব্দের তাফসীর করেছেনÑ এবাদত, নৈকট্য, ঈমান ও সৎকর্ম দ্বারা। কেউ বলেছেন : উল্লেখিত আয়াতে কারীমাদ্বয়ে ওয়াছিলা শব্দ দ্বারা নৈকট্য ও আনুগত্য বোঝানো হয়েছে। আল্লাহর আনুগত্য ও সন্তুষ্টির কাজ করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করাই হলো ‘ওয়াছিলা’।
সহীহ হাদিসে এসেছে রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন : জান্নাতের একটি উচ্চ স্তরের নাম ‘ওয়াছিলা’। এর ঊর্ধ্বে কোনো স্তর নেই। তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করো যেন তিনি এই স্তরটি আমাকে দান করেন। (মোসনাদে আহমাদ)।
তিনি আরো বলেছেন : যখন মুয়াজ্জিন আজান দেয়, তখন মুয়াজ্জিন যা বলে, তোমরাও তাই বল। এরপর দরূদ পাঠ করো এবং আমার জন্য ওয়াছিলার দোয়া করো। (সহীহ মুসলিম)। উল্লিখিত হাদিসদ্বয়ের আলোকে সহজেই বোঝা যায় যে, ওয়াছিলার সর্বোচ্চ স্তরটি বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.) লাভ করবেন এবং এর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরগুলো মুমিন মুসলমানগণ প্রাপ্ত হবেন। আর ‘ওয়াছিলা’ শব্দটিতে প্রেম ও আগ্রহের অর্থ সংশ্লিষ্ট থাকায় বোঝা যায় যে, ওয়াছিলার স্তরসমূহের উন্নত্রী আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মহব্বতের ওপর নির্ভরশীল। মহব্বত সৃষ্টি হয় সুন্নাতের অনুসরণের দ্বারা।
ঈমান এবং সৎকর্ম যেমন এর অন্তর্ভুক্ত, তেমনি নবী, রাসূল ও সৎকর্মশীলদের সংসর্গ এবং মহব্বত ও এর মধ্যে শামিল আছে। কারণ এগুলোও আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। এ জন্যই তাদেরকে ওয়াছিলা করে আল্লাহর দরবারে দোয়া করা যায়েজ। এই নিরিখে আরবী ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস। মুহাররমে অধিক হতে অধিকতরভাবে এবাদত-বন্দেগি এবং দরূদ ও সালাম সহকারে আল্লাহ ও রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নৈকট্য ও মহব্বত হাসিল করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানদের একান্ত কর্তব্য। এই পরম কর্তব্য সম্পাদনে যে যত বেশি অগ্রগামী হবে, সে তত বেশি নৈকট্য লাভে ধন্য হবে। এটাই প্রকৃত সফলতার প্রতীক।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন