শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ত্যাগ চাই মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্শী | প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০২২, ১২:০১ এএম

মর্যাদপূর্ণ এই মুহাররম মাসে মুমিন মুসলমানদের অধিক হারে নেক আমল করা এবং আল্লাহ পাক যে কাজকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন, তা বর্জন করা। আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : “হে প্রিয় নবী (সা.) যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমলসমূহ করেছে আপনি তাদের এমন জান্নাতের সুসংবাদ দিন, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান থাকবে।” (সূরা বাকারাহ: আয়াত ২৫)। এই আয়াতে কারীমায় জান্নাতের সুসংবাদ লাভের জন্য ঈমান ও বিশ্বাসের সাথে সাথে নেক আমল অর্থাৎ সৎকাজের শর্তও আরোপ করা হয়েছে। এ জন্য সৎকর্মশীল ঈমান মানুষকে জান্নাত লাভের সুসংবাদের অধিকারী করতে পারে না। যদিও ঈমান শুধুমাত্র স্থায়ী জাহান্নামবাস হতে অব্যাহতি দান করতে পারে। সুতরাং মুমিন যত গোনাহগারই হোক না কেন, কোনো না কোনো সময়ে সে জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করে জান্নাতে প্রবেশ করবে। কিন্তু নেক আমল ব্যতীত কেউ জাহান্নামের শাস্তি থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি ও নিষ্কৃতি লাভের অধিকারী হতে পারবে না।
কেন পারবে না, কি জন্য পারবে না, এ বিষয়ে চিন্তা করলে অবশ্যই বোঝা যায় যে, চলমান হিজরি ১৪৪৪ সালের মাহে মুহাররামের ও বিশ্বজোড়া মুসলমাদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, দুনিয়ায় মোহ এবং আখেরাতের প্রতি উদাসীনতা তাদের সকল অপরাধের মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহান আল্লাহ পাক আপেক্ষ করে আল কুরআনে ইরশাদ করেছেন : “তবে কি তোমরা আখেরাতের (জীবনের) পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে”? (সূরা তাওবাহ: আয়াত ৩৮)। এতে স্পষ্টতঃই বোঝা যায় যে, দুনিয়ার মোহ এবং আখেরাতের প্রতি উদাসীনতা সকল অপরাধের মূল। শুধু কেবল মুসলমানগণই নয়, বরং দুনিয়ার সকল জাতি গোষ্ঠী এই একই অপরাধে অপরাধী। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.) দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন : “হুব্বুদ্ দুন্ইয়া রা’ছু কুল্লি খাত্আিতিন্” অর্থাৎ দুনিয়ার প্রীতি ও মোহ সকল গোনাহ ও অপরাধের মূল। তাই, চলমান দুনিয়ার সকল জাতি গোষ্ঠী এর পেছনেই হন্যে হয়ে ঘুরছে। ঘুরছে তো ঘুরছেই। লাগামহীনভাবে পাপাচার, কামাচার, হত্যা ও লুণ্ঠনের মাত্রা বাড়িয়েই চলেছে। এই চলার শেষ কোথায় তা তারা নিজেরাও জানে না। আর জানে না বলেই অপরাধ জর্জরিত বস্তুবাদী উন্নতির এখন যৌবনকাল। বিশ্বের যে দিকে তাকানো যায়, সে দিকেই শুধু অপরাধ আর অপরাধ। কিন্তু অপরাধ দমনে বিশ্বের সকল দেশের ও জাতির চেষ্টা-তদবিরের অন্ত নেই। দেশে দেশে আইন আদালত, অপরাধ দমনকারী সংস্থা, উন্নত ব্যবস্থা সবই আছে। কিন্তু এতদসত্ত্বেও আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, প্রত্যেক দেশ ও জাতির মধ্যে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। এর যোগান দিয়ে যাচ্ছে মিথ্যাচার ও ধোঁকাবাজি। মূলত এ সকল পাপাচার ও অনিয়মের সঠিক প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলেই আজকের এ অস্থিরতা ও অন্যায়ের সয়লাব। যার তীব্র স্রোতের ধাক্কার উঁচু-নিচু সবই কুপোকাত হয়ে যাচ্ছে। এর মূলে রয়েছে বস্তুবাদী ধ্যান-ধারণা, দুনিয়ার প্রতি আসক্তি এবং আখেরাতের প্রতি উদাসীনতা। আমাদের দৃষ্টিতে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা হলোÑ আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.)-এর যিকির ও স্মরণ এবং আখেরাতের চিন্তা-ভাবনাকে প্রাধান্য দেয়া। যে দেশে এবং যে সমাজে এই অমোঘ প্রতিকার প্রয়োগ করা হয়, সেদেশেও সমাজ হয় মানবতার মূর্ত প্রতীক এবং ফিরিস্তাগণেরও ঈর্ষার স্থল। পিয়ারা নবী মোহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.)-এর স্বর্ণযুগ এবং সাহাবায়ে কেরামের শাসনকাল তারই জ্বলন্ত প্রমাণ।

আজকের অন্যায় ও অবিচারে ভরপুর বিশ্ব, পাপাচার ও অন্যায় প্রবণতার উচ্ছেদ চায় বটে, কিন্তু আল্লাহ ও পরকাল থেকে উদাসীন হয়ে পদে পদে এমন সব ব্যবস্থা বলবৎ করে রেখেছে, যার ফলে আল্লাহ, রাসূল (সা:) ও আখেরাতের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই, আমরা প্রত্যক্ষ করছি যে, অপরাধ দমন তো দূরের কথা, তীব্র ঝড়ের বেগে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। নিতান্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, আজকের চিন্তশীল মহল উপরোক্ত কুরআনভিত্তিক প্রতিকারের ব্যবস্থা প্রয়োগ করার প্রতি মোটেই আগ্রহী নয়, এমনকি উদসীনও বটে।

প্রকৃতপক্ষে মুহাররম মাস পবিত্র ও মর্যাদাপূর্ণ। এই মাসের মূল শিক্ষা হচ্ছে সকল প্রকার অন্যায়, অবিচার, অসত্য ও পাপের উচ্ছেদকল্পে বাস্তবভিত্তিক কর্মপন্থা গ্রহণ করা এবং দুনিয়ার জীবনকে পরকালের অনন্ত জীবনের ওপর প্রাধান্য না দেয়া। আল কুরআনে মহান রাব্বুল আলামীন রাসূলুল্লাহ (সা:)-কে খেতাব করে অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন : “হে প্রিয় রাসূল (সা:)! আপনার জন্য পরকাল ইহকাল অপেক্ষা উত্তম”। (সূরা আদ্দুহা : আয়াত ৪১)। সুতরাং যা উত্তম, তা অবলম্বন করাই শ্রেয়। আল্লাহ পাক আমাদের প্রয়োজনীয় তাওফিক এনায়েত করুন, আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন