আজ পবিত্র মুহাররাম মাসের দশম দিবস। আবরী ভাষায় এই দিনটিকে আশুরা বলা হয়। আরবী আশুরা শব্দটি সর্বশেষ মাত্রার বহুবচন সূচক বিধায়, এর মর্যাদা ও মাহাত্ম্য অন্যান্য দিনের তুলনায় একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ‘আশুরা’ শব্দটির শব্দ মূল হচ্ছে আশারা বা আশারাতুন। এর অর্থ হলো দশ বা দশম। তাই, দশই মুহাররাম অর্থে ‘আশুরা’ শব্দটির উল্লেখ সুপ্রাচীন কালে থেকেই পাওয়া যায়। প্রাচীন আরবদের অনেক গুলো ইসলামী অনুষ্ঠান ও রীতি-নীতি বিশেষত: হযরত ইব্রাহীম (আ.)Ñএর বংশধরদের মধ্যে তাঁরই নিদের্শে প্রবর্তিত হয়েছিল। হাদীস শাস্ত্রে এ .... তথ্য পাওয়া যায়। প্রাচীন আরবগণ আশুরার দিনে রোজা রাখত এবং আশুরার দিনে দর্শকদের জন্য কা’বা গৃহের দ্বার খোলা হত।
হাদীসের বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলূল্লাহ (সা.) মদীনার ইহুদীদের নিকট হতে জানতে পারলেন যে, এই আশুরার দিন হযরত মূসা (আ.) কাফের ফিরাউনের বন্দীদশা হতে ইসরাইল সন্তানগণকে উদ্ধার করেছিলেন এবং ফিরাউন সসৈন্য ডুবে মরেছিল। সে কারণে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ হযরত মূসা (আ.) এই দিনে রোজ পালন করেছিলেন এবং একই করণে ইহুদীরা আশুরার রোজা রাখে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন: “তোমাদের অপেক্ষা হযরত মূসা (আ.)Ñএর সহিত আমাদের সম্পর্ক অগ্রাধিকার মূলক এবং নিকটতম।” রাসূলূল্লাহ (সা.) তখন হতে নিজে আশুরার রোজ রাখলেন এবং উম্মতকে এই দিন রোজা পালনের আদেশ দিলেন। (মিশকাতুল মাসাবিহ: নফল রোজা অধ্যায়)।
হাদীস শরীফে আশুরা কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। যথা: (১) রাসূলূল্লাহ (সা.) সাহাবা কেরাম (রা.) কে আশুরার রোজার উৎসাহ ও আদেশ দান করেছেন। (২) কতিপয় সাহাবী রাসূলূল্লাহ (সা.) এর দরবারে আরজ করলেন: ইহুদী ও খৃষ্টানগণ আশুরাকে বড় মনে করে। আমরা কেন দিনটিকে গুরুত্ব প্রদান করব? উত্তরে রাসূলূল্লাহ (সা.) বললেন: আগামী বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকলে আমি মুহাররামের নবম দিবসে ও রোজ রাখব। (৩) মাহে রামাদানের রোজ ফরয হওয়ার পর রাসূলূল্লাহ (সা.) সাহাবীগণকে আশুরার রোজর আদেশ করতেন না এবং নিষেধ ও করতেন না। (৪) তবে তিনি নিজে রামাদানের রোজর অনুরূপ গুরুত্ব সহকারে বরাবর আশুরার রোজ পালন করতেন। (৫) রাসূলূল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন: রামাদানের রোজার পর সর্বাপেক্ষা আফজল মুহাররামের এই রোজা। (মিশকাতুল মাসাবিহ: অধ্যায় পূর্বোবক্ত)। (৬) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (সা.) উপদেশ দিয়েছেন যে, তোমারা নবম এবং দশম মুহাররামে রোজ রাখ এবং ইহুদীদের বিপরীত কর। অর্থাৎ তাদের মত কেবল একদিনের রোজ রেখ না। (মোসনাদে আহমাদ)।
বস্তুত: হযরত মূসা (আ.)Ñএর সাফল্যে শাশ্বত ইসলামের বিজয় মূচিত হয়েছিল। কেননা, বিজয় আল্লাহ পাকের দান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ বান্দাহর কর্তব্য। এই নিরীখে সকল নবীতে বিশ্বাসী রাসূলূল্লাহ (সা.) এবং তাঁর উম্মতগণ এই দিনটিকে মর্যাদাপূর্ণ মনে করেন। আরও বর্ণিত আছে যে, এই দিনটিতে হযরত নূহ (আ.) প্লাবণের পর জাহাজ হতে ভূমিতে অবতরণ করেছিরেন। আবার এই দশম মুহাররামে কারবালা প্রান্তরে রাসূলূল্লাহ (সা.) এর দৌহিত্র হযরত ইমাম হুসাইন (রা.) শাহাদাত বরণ করেছিলেন। চরম বিষাদপূর্ণ হলেও সত্যের পতাকাবাহী ইমাম হুসাইন (রা.)-এর এই অপূর্ব আত্মত্যাগ ইসলামের ইতিহাসে দিবসটিকে আরও গাম্ভীর্যপূর্ণ করে তোলেছে। আল্লাহ পাক আমাদেরকে এ দিবসে অধিক পরিমাণে নেক আমল করার তাওফিক এনায়েত করুন, আমীন !
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন