গত আলোচনাগুলোতে কওমে লূতের পরিণতি ও কোরআনের আয়াতগুলো থেকে প্রমাণিত হয়, সমকামিতা নামক কুকর্ম একটি বড় ধরনের অপরাধ। জঘন্যতম অশ্লীল কাজ। ইসলামে শরীয়াতে যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ইসলামী আদালত কারোর ব্যাপারে সমকামের প্রমাণ পেলে তাকে ও তার সমকামী সঙ্গীকে শাস্তিস্বরূপ হত্যা করার আদেশ দিবে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেন : কাউকে সমকাম করতে দেখলে তোমরা উভয় সমকামীকেই হত্যা করবে। (সুনান আবু দাউদ : ৪৪৬২; তিরমিজি : ১৪৫৬)। উক্ত হত্যার ব্যাপারে সাহাবীগণের ঐকমত্য রয়েছে। তবে হত্যার ধরনের ব্যাপারে তাদের পরস্পরের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (রা.) বলেন, তোমরা উপর-নিচের উভয়কেই রজম করে হত্যা করো। (ইবন মাজাহ : ২৬১০)। আবু বকর, ‘আলী, ‘আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর (রা.) এবং হিশাম ইবন আব্দুল মালিক (রহ.) সমকামীদের আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন।
খালিদ ইবন ওয়ালীদ (রা.) একদা আবু বকর (রা.) নিকট এ মর্মে একটি চিঠি পাঠালেন যে, তিনি আরবের কোনো এক মহল্লায় এমন এক ব্যক্তিকে পেয়েছেন, যাকে দিয়ে যৌন উত্তেজনা নিবারণ করা হয়, যেমনিভাবে নিবারণ করা হয় মহিলা দিয়ে। তখন আবু বকর (রা.) সকল সাহাবীগণকে একত্রিত করে এ ব্যাপারে তাদের পরামর্শ চেয়েছেন। তাদের মধ্যে হযরত আলীও (রা.) তখন উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, এটি এমন একটি গোনাহ যা বিশ্বে শুধুমাত্র একটি উম্মতই সংঘটন করেছে। আল্লাহতায়ালা ওদের সঙ্গে যে ব্যবহার করেছেন তা সম্পর্কে আপনারা অবশ্যই অবগত। অতএব আমার মত হচ্ছে, তাকে আগুনে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে। উপস্থিত সকল সাহাবারাও উক্ত মতের সমর্থন করেন। তখন আবু বকর (রা.) তাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার ফরমান জারি করেন। (বায়হাক্বী/শু‘আবুল ঈমান : ৫৩৮৯)।
উপরের হাদীসগুলো থেকে ইসলামী শরীয়তে সমকামিতার শাস্তি সম্পর্কে জানা যায়। যেই পাপের জন্য আল্লাহ রাগান্বিত হয়ে একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, সেই কুকর্মের জন্য পরকালীন কি শাস্তি রয়েছে, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। হাদীস শরীফের মাধ্যমে জানা যায়, সমকামীদের প্রতি আল্লাহতায়ালা কখনো রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না। ইরশাদ হয়েছে : আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেন, আল্লাহতায়ালা এমন ব্যক্তির প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে কখনো তাকাবেন না, যে সমকামে লিপ্ত হয় অথবা কোনো মহিলার মলদ্বারে গমন করে। (তিরমিজি : ১১৬৫)।
এ তো গেল ইসলামী আইন ও পরকালীন শাস্তির কথা। এই পাপের জন্য দুনিয়াতেই রয়েছে কষ্টদায়ক ও নিকৃষ্টতম লাঞ্ছনাদানকারী শাস্তি। যে ব্যক্তি আল্লাহর সৃষ্টিগত বিধান ও প্রকৃতির পরিকল্পনার বিরুদ্ধাচারণ করে সমকামিতার মাধ্যম যৌন আনন্দ লাভ করে, সে একই সঙ্গে কয়েকটি অপরাধ করে। প্রথমত সে নিজের এবং নিজের স্বাভাবিক দৈহিক ও মানসিক কাঠামোর সাথে যুদ্ধ করে এবং তার মধ্যে বিরাট বিপর্যয় সৃষ্টি করে।
বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে সমকামীরা অনেক বিরল এবং দূরারোগ্য যৌনরোগে আক্রান্ত হয়। যে রোগের কথা আগে মানুষ কখনো শোনেনি, তেমন নতুন নতুন রোগে তারা আক্রান্ত হয়। বর্তমান সময়ে মাঙ্কিপক্স নামক এক ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, বিকৃত যৌনাচার ও সমকামিতার ফলে মাঙ্কিপক্স হয়। ইঁদুর বা এ জাতীয় অন্যান্য প্রাণীর মাধ্যমেও মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
এছাড়াও এইচআইভি এইডস। সিফিলিস, গনোরিয়, হার্পিস সিমপ্লেক্স, ভাইরাল হেপাটাইটিস টাইপ বি ও সি, ক্ল্যামিডিয়া ইনফেকশন, অ্যানাল ক্যান্সার, ক্রিপ্টোস্পোরিডিওসিস, আইসোস্পোরিয়াসিস, মাইক্রোস্পোরিডিওসিস, জিয়ার্ডিয়া ল্যাম্বলিয়া ডিজিজ। স্কিন ও অ্যানো-জেনিটাল ওয়াট, হেপাটাইটিস এ, এন্টামিবা হিস্টোলাইটিকাজাত এমিবিয়াসিস, শিগেলোসিস, সালমোনেলোসিস, পেডিকুলোসিস, স্ক্যাবিস, ইনফেকশাস মনোনিউক্লিওসিস, ক্যাম্পাইলোব্যাক্টেরিওসিস, মেনিনজাইটিস ও মেনিঞ্জোকক্কেমিয়া। হুক ওর্ম ইত্যাদি নামক ভয়ংকর রোগে সমকামি ও বিষমকামীরা আক্রান্ত হয়। তখন এসব রোগ শুধুমাত্র আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সুস্থ মানুষের মধ্যেও সংক্রমণ হয়। এসব কারণে মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা হুমকির মুখে পড়ে। যার জন্য দায়ী হলো সমকামীরা এবং তাদের বৈধতা দানকারীরা।
সুতরাং, মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য এই পাপ থেকে বিরত থাকার বিকল্প নেই। সৃষ্টির প্রাকৃতিক বিধান উল্টে দিয়ে স্রষ্টার সাথে বিদ্রোহ করে এই পৃথিবীতে টিকে থাকাও সম্ভব নয়। যেমন টিকতে পারেনি কওম লূত। এসব পাপের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আবার কোনো ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসার আগেই আমাদের আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে হবে। মানব সভ্যতা ও মানবতাবিরোধী এই পাপ থেকে আল্লাহতায়ালা আমাদের হেফাজত করুন। বাংলাদেশসহ উন্নত বিশে^র পলিসি মেকারদের কওমে লূতের পরণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তৌফিক দান করুন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন