জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সারাবিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সরকার রেকর্ড পরিমাণ ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের উপর অমানবিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। অযোগ্য ও অর্থব সরকারকে জনগণ আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। চাল ডাল তেলের দাম কমাতে হবে। অবিলম্বে কারাবন্দি আলেমদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। জ্বালনি তেলের মূল্যবৃদ্ধি,দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অব্যাহত লোডশেডিংয়ের প্রতিবাদ এবং কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবিতে গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ আয়োজিত মিছিল পূর্ব বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। দলের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুকের সভাপতিত্বে এবং মাওলানা জয়নুল আবেদীনের সঞ্চালনায় এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী, মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, মুফতি নাসির উদ্দিন খান, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা বশিরুল হাসান খামদানি, মাওলানা মুজিবুর রহমান চাটগামী, ও মাওলানা হেদায়েতুল ইসলাম।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম যখন ১৩০ ডলার থেকে ৯০ ডলার বা তার চেয়েও নীচে নেমে আসছে, তখনই হঠাৎ করে বিনা নোটিশে রাতের অন্ধকারে জ্বালানি তেলের দাম নজিরবিহীন বৃদ্ধি ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে সাধারণ ভোক্তাদের ওপর। দলের মহাসচিব আল্লামা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, দুর্নীতি অনিয়মে সারাদেশ সয়লাব হয়ে গেছে। সুইস ব্যাংকে হাজার হাজার কোটি কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। এসব পাচারকৃত টাকা ফেরত আনতে হবে। জননিরাপত্তাকে উপেক্ষা করায় উত্তরায় গার্ডার চাপায় মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। তিনি বলেন, ছলচাতুরির নির্বাচন এদেশে আর চলবে না। সকল রাজনৈতিক দলের দাবি নির্বাচনকালিন নিরপেক্ষ সরকারের অধিনেই নির্বাচন দিতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকারের ঈমান নেই। তারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে ভারতের সহায়তা চেয়েছে। তারা জানে না ক্ষমতায় রাখার মালিক একমাত্র মহান আল্লøাহপাক। তিনি অবিলম্বে কারাবন্দি আলেমদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
আল্লামা আব্দুর রব ইউসুফী বলেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষা সঙ্কুচিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ধর্মের ওপর আঘাত এলে তা’ বরদাশত করা হবে না। সভাপতির বক্তব্যে শাইখুল হাদিস আল্লামা উবয়দুল্লাহ ফারুক বলেন, সুপরিকল্পিত নির্যাতন নিপীড়নের পথ থেকে সরকারকে ফিরে আসতে হবে। চাল ডাল, ডিম তেলের দাম কমাতে হবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে কারাবন্দি আলেমদের মুক্তি দিতে হবে। তিনি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান। পরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ এবং কারাবন্দি আলেমদের মুক্তির দাবিতে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলের শ্লোগানে বলা হয়, চাল, ডাল ডিমের দাম কমাতে হবে কমাতে হবে,জ্বালাতি তেলের মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাহার করতে হবে করতে হবে, কারাবন্দি আলেমদের মুক্তি দিন দিতে হবে। মিছিলটি বিজয় নগরে গিয়ে মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়।
ইসলামী ঐক্য আন্দোলন ঃ এদিকে, গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির প্রতিবাদে ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের উদ্যোগে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এতে নেতৃবৃন্দ বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের নেতিবাচক প্রভাবে এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল ও ভোগ্যপণ্যসহ সকল পণ্যের দাম উর্ধমূখী। এ অবস্থায় ভোক্তারা যখন দিশেহারা তখন এক লাফে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি এটি অযৌক্তিক, অমানবিক ও জনবিরোধী। সরকারের এই অমানবিক সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে। জ্বালানী তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনতে হবে। অন্যথায় সারা দেশে সরকার বিরোধী গণরোষ সৃষ্টি হয়ে তা গণআন্দোলনে রূপ নেবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে সরকার জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সারাবিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সরকার রেকর্ড পরিমাণ ও অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের উপর অমানবিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। মূলত এর মাধ্যমে সরকারের বেপরোয়া দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা ও অপরিণামদর্শিতার দায় পুরোপুরি সাধারণ মানুষের কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর নায়েবে আমীর মাওলানা ফারুক আহমাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আন্দোলনের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মাওলানা এএমএম কামাল উদ্দিন। আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মো. আবু বকর সিদ্দিক, হাফেজ মাওলানা হযরত আলী, এফএম আলী হায়দার, মো: আজমল হোসেন, মাওলানা আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ জমিয়তে তলাবায়ে আরাবিয়ার কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশক্তির সভাপতি মো. আব্দুল খালেক।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, সরকার দেশ চালাতে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। বিভিন্ন মেঘা প্রকল্পের নামে লুটপাটের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে দেশকে। রাজস্য আজ শূন্যের কোঠায়। অযোগ্য ও অদক্ষ মন্ত্রী-এমúিদের ব্যর্থতায় সব সেক্টরে আজ অরাজকতা। এ অবস্থা আর চলতে দেয়া যায় না। নেতৃবৃন্দ, অন্যয়ভাবে গ্রেফতারকৃত নিরীহ সকল আলেমদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করেন।
লক্ষ্মীপুরে পীর সাহেব চরমোনাই ঃ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেছেন, জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে জনজীবন দুর্বিষহ করে তুলেছে। তিনি বলেন, সারাবিশ্বে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সরকার রেকর্ড পরিমাণ ও অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করে জনগণের উপর অমানবিক বোঝা চাপিয়ে দিয়েছে। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। চাল ডাল তেলের দাম কমাতে হবে। তিনি বলেন, চা শ্রমিকগণ তাদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করলেও তাদের দাবিকে আমলে নিচ্ছে না। এভাবেই চা শ্রমিকরা নিস্প্রেষণের শিকার হচ্ছে। ১২০ টাকা মজুরি কোন শ্রমিকের হতে পারে না। অবিলম্বে চা শ্রমিকদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিতে হবে। গতকাল সকালে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার কর্মী তারবিয়াতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন-এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি মাওলানা মহিউদ্দিন-এর সঞ্চালনায় লক্ষ্মীপুর শহরের আল কাবীর অডিটোরিয়ামে বিশেষ অতিথি ছিলেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান।
জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম): গতকাল শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) এর উদ্যোগে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং অবাধ সভা-সমাবেশের নিশ্চয়তার দাবীতে আয়োজিত “বিক্ষোভ সমাবেশে দলের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেছেন, অবিলম্বে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহার করতে হবে। শিশুখাদ্য এবং দ্রব্যমূল্যের উপর এর নেতিবাচক প্রভাবে দেশে এখন নীরব কান্না চলছে। দেশের অর্থনীতিকে ভারসাম্যহীন এবং নিপীড়নমূলক বানিয়ে সরকার এখন তামাশা দেখছে।
তিনি বলেন, সফরকারী জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান মিচেল ব্যাচেলেটের কাছে গুম-খুন নিয়ে মিথ্যাচার করেছে সরকার। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ভিন্নমত দমন, নির্যাতন এবং অসংখ্য গুমের নাটক মঞ্চস্থ করে দেশে এক ভয়াল পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। বিক্ষোভ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, এনডিএম এর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হুমায়ুন পারভেজ খান, মোমিনুল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক লায়ন নুরুজ্জামান হীরা। সমাবেশ শেষে একটি মিছিল বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।
মন্তব্য করুন