যে যা বলুক, দেশ আজ গভীর সংকটে নিপতিত। এই সময়ে জ্বালানি, বিদ্যুৎ, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকট প্রতিপাদ্য হলেও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, জাইকা বা চীন থেকে ঋণ নিয়ে অর্থনৈতিক সমস্যা ও জ্বালানি-বিদ্যুতের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হলেও আমাদের দেশ এমন সংকটে কেন পড়ল, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও টেকসই সমাধানের উদ্যোগ না নিলে এ ধরণের সমস্যা বারবার দেখা দেবে। দ্বিতীয়বার এমন অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিলে দেশ দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা খুব প্রবল। এ কারণেই প্রায় দেড়কোটি প্রবাসি কর্মীর রেমিটেন্স এবং ২৫ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্ট রফতানিতে সমৃদ্ধ বাংলাদেশে কেন এমন অর্থনৈতিক-সামাজিক সংকটের মুখোমুখী হল? দেশ থেকে প্রতি বছর অর্ধলক্ষ কোটি বা তারো বেশি অর্থ অবৈধ পথে বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া টাকাগুলো এ দেশের জনগণের। দেশের আমলারা সত্যিকার অর্থেই জনগণের সেবক বা ‘পাবলিক সার্ভেন্ট’। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন হয়, সরকারি বাসভবন, গাড়ী, গাড়ীর ড্রাইভারের বেতন, জ্বালানি খরচ, নিরাপত্তাসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়। ঔপনিবেশিক আমলে বৃটেন থেকে আসা সাদা চামড়ার সাহেবরা এ দেশের কালেক্টরেট, ম্যাজিস্ট্রেট, সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে দায়িত্ব পালন করতেন। এ দেশের হিন্দু-মুসলমান প্রজারা তাদেরকে রাজার জাত বলে ভয়মিশ্রিত সম্মানের আসনে রেখেছিল। কিন্তু ১৯৫৭ সালে পলাশীযুদ্ধে নবাবের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে স্বাধীনতা হারানোর পর থেকেই এ দেশের মানুষ স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছিল। পলাশী যুদ্ধের একশ’ বছরের মাথায় ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার আগে এ দেশের মুক্তিকামী মানুষ কখনো থেকে থাকেনি। মাত্র একযুগের মধ্যে ১৭৭০ সালে ফকির-সন্যাসীরা বিদ্রোহ করেছিল। বাংলায় তিতুমীরের যুদ্ধ, সাঁওতাল বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির মানুষ বারবার ইংরেজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে। ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহের পর বৃটিশরা তাদের আমলা, জমিদার ও পৃষ্ঠপোষকদের জনরোষ থেকে রক্ষার জন্য ১৮৬১ সালে যে নতুন পুলিশ অধ্যাদেশ জারি করেছিল, কার্যত তা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বৃটিশ কলোনিয়াল হোয়াইটকালার পাবলিক সার্ভেন্টরা এ দেশের জনগণকে মানুষ বলেই গণ্য করত না। তাদের ক্লাবগুলোতে লেখা থাকত কুকুর এবং নেটিভদের প্রবেশ নিষেধ। অনেক রক্তের দামে অর্জিত এই বাংলাদেশের যেকোনো ক্ষমতাসীন দলের এমপি, মন্ত্রী, নেতা, সরকারি আমলা, তাদের পিতা ও পূর্ব পুরুষরা এ দেশের তামাটে কৃষকদের, মাঝি-মজুরদের সন্তান। তারা কেন সেই বৃটিশ প্রভুদের সিলসিলা জারি রেখে চলেছেন? কৃষক-শ্রমিকদের ঘাম ঝরানো শ্রমের পয়সায় রাজকীয় জীবনযাপন করে দেশের সাধারণ মানুষকে হেয় জ্ঞান করছেন? গত দেড় দশকে দেশ থেকে প্রায় ১০ লক্ষকোটি টাকা পাচারের পেছনে এ দেশের সরকারি আমলা, ব্যাংকার, মন্ত্রী-এমপি ও উচ্চশিক্ষিত ব্যবসায়ীরা জড়িত।
করোনার সময় দেয়া এক বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, কানাডায় সম্পদ পাচার ও বেগম পাড়ায় বাড়িঘর করা ব্যক্তিদের মধ্যে সরকারি কর্মকর্তাদের সংখ্যাই বেশি। সম্পদ যিনিই পাচার করুন, সরকারি আমলা, শুল্ক গোয়েন্দা, ঋণপত্র গ্রহণকারী ব্যাংকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অনুমোদন ছাড়া এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে দেয়া আদৌ সম্ভব নয়। লোকে বলে ‘অভাবে স্বভাব নষ্ট’। কিন্তু আমাদের দেশ ও সমাজে সবচেয়ে সুবিধাভোগী মানুষগুলোই বেপরোয়া হয়ে জনগনের সম্পদ লুট করে একদিকে দেশে-বিদেশে ব্যক্তিগত-পারিবারিক সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে, অন্যদিকে কোটি মানুষের শ্রমে-ঘামে অর্জিত রেমিটেন্স, লাখো মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকার আমানত ব্যাংক থেকে লোপাট করে দেশকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা সেক্টর, সরকারি প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আমলাতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপর যেন ভিনদেশি ঠগ-বর্গীদের প্রেতাত্মা ভর করেছে। চলমান ব্যবস্থায় এ দুর্বৃত্তায়নের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-প্রতিকার নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব। বিশ্বের দেশে দেশে এমন বাস্তবতা পাল্টে দিতে গৃহযুদ্ধ, সাংস্কৃতিক বিপ্লব ও ট্রুথ অ্যান্ড রিকনসিলিয়েশনের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যসমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার জ্বলন্ত ইতিহাস আছে। এ ক্ষেত্রে ফরাসি বিপ্লব, ইউরোপীয় রেনেসাঁস, মার্কিন, সিভিল ওয়ার, রাশিয়ার কমিউনিস্ট বিপ্লব, চীনের সাংস্কৃতিক বিপ্লব, ইরানের ইসলামি বিপ্লবের নাম উল্লেখ করা যায়। এসব রাজনৈতিক বিপ্লবের আগে ও পরে একেকটি জাতি অগ্রযাত্রার নতুন গতিপথ লাভ করেছিল। একটি শোষনমুক্ত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণেুর জন্য একাত্তুরের স্বাধীনতা যুদ্ধে লাখো মানুষ প্রাণ দিয়েছিলেন। আমাদের জাতির ঐক্য ও মুক্তির অগ্রযাত্রা সেখান থেকেই শুরু হওয়ার কথা ছিল। এরপরও জাতিকে গণতন্ত্রের ১৯৭৫ সালের পটপরিবর্তনের মত অনাকাক্সিক্ষত বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। ১৯৯০ সালের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছিল এ দেশের মানুষের গণতান্ত্রিক আকাক্সক্ষার বিজয়। পাক বাহিনীর কবল থেকে দেশকে মুক্ত করতে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের লেগেছিল ৯ মাস। আর সামরিক স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশের গণতন্ত্রের স্বপ্নকে মুক্ত করতে লেগেছিল দীর্ঘ ৯ বছর। রাজনৈতিক অনৈক্য, শাসকের প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে গণতান্ত্রিক মুক্তির পথকে প্রলম্বিত ও কণ্টকাকীর্ণ করে তোলা হয়েছিল। শহীদ নূর হোসেন, ডা. শামসুল আলম মিলনের মত অসংখ্য মানুষের প্রাণের বিনিময়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসলও অবশেষে এ দেশের মানুষের হাতছাড়া হয়ে গেছে। দেশে আজকের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অবস্থায় তারই প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।
‘সর্বাঙ্গে ব্যথা ওষুধ দেবো কোথা?’ রাষ্ট্র যখন পথ হারায় তখন দেশকে সঠিক ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সদিচ্ছা ও ত্যাগের স্বাক্ষর থাকতে হয়। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিশ্রæতি পূরণে জনগণের ইচ্ছাই শেষ কথা। জনমতের প্রতিফলনকে রাষ্ট্রশক্তির দ্বারা বেআইনীভাবে দাবিয়ে রাখার চেষ্টা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এ চেষ্টার বিরুদ্ধে দেশের মানুষ বারবার রাজপথে গর্জে উঠেছে। পরিবর্তনের পথরেখাও নির্মাণ করেছে। তবে তা টেকসই হয়নি। জাতির ঐক্য ও উন্নয়নের রূপরেখা এগিয়ে নিতে হলে যে ধরণের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক চর্চা থাকা প্রয়োজন, দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় ও তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন থাকতে হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রাজনৈতিক ও ধর্মীয়-সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিপরীতে বিজাতীয় আধিপত্যবাদী সংস্কৃতির চর্চা আমাদের দেশকে আজকের এ অবস্থায় উপনীত করেছে। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত পর পর তিনবার ক্ষমতায় থাকার পর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রকাশ্য নাগরিক সভায় মাইক্রোফোনে বলেন, তিনি ভারতবর্ষের সরকারকে বলেছেন, তারা যেন শেখ হাসিনার সরকারকে আবারো ক্ষমতায় রাখতে যা যা করণীয় তাই করেন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণের জন্য এর চেয়ে বড় লজ্জা আর দুর্ভাবনার বিষয় আর কিছু হতে পারে না। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক মুক্তির আকাক্সক্ষার প্রতি সাবেক ঔপনিবেশিক ও সা¤্রাজ্যবাদী শক্তিগুলোর যে নিষ্ঠুর তামাশা ও ভূরাজনৈতিক দাবাখেলা চলছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতা তার অন্যতম নজির। মিয়ানমারের রাখাইন থেকে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া অথবা একতরফা জাতীয় নির্বাচনের পর দেশি-বিদেশি গোপণ সমঝোতার তথ্য ফাঁস হওয়ার মধ্য দিয়ে সেই সত্যই বেরিয়ে এসেছে। পশ্চিমারা কখনো তৃতীয় বিশ্বে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চায় না। তারা চায় বশংবদ সরকার, যারা জনগণের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সা¤্রাজ্যবাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষায় কাজ করবে। আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক কারণে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ খুব সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। আঞ্চলিক-আন্তর্জাতিক যেকোনো পরাশক্তির সাথে গোপণ সমঝোতার মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া কিংবা অবৈধ ক্ষমতা টিকিয়ে রাখা বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাদের কাছে যেন এখন আর লজ্জার কিছু নয়। এভাবেই জাতি তার স্বাধীনতার স্বপ্ন ও প্রত্যাশার পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিক দুর্মুখেরা একসময় বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে একে বটমলেস বাস্কেট বলেছিলেন। কিসিঞ্জারের সেই উক্তিকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতে এ দেশের দেড় কোটি মানুষ বিদেশে কামলা দিচ্ছে। এ দেশের পাঁচ কোটি কৃষক মেধা ও ঘাম ঝরিয়ে জাতির খাদ্য সংস্থান নিশ্চিত করে যখন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধির সোপানে নিয়ে যাচ্ছে, তখন একশ্রেণীর লুটেরা রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত, আমলা, মজুতদার-অর্থপাচারকারি ব্যবসায়ীরা দেশের সম্পদ পাচার করে দেশকে দেউলিয়া করে দিচ্ছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসে স্বাধীনতার স্বপ্ন হরণকারী এসব লুটেরাদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের মুখোমুখি করা এখন সময়ের দাবি।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানাবিধ তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পুরোর জাতি যখন গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পরিবেশে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, দেশের ক্ষমতাসীনরা আবারো সংবিধানের দোহাই দিয়ে নিজেদের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের পুরনো ভাঙ্গা রেকর্ড বাজাচ্ছেন। যে দেশে সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে হীন দলীয় স্বার্থে কয়েক মিনিটের মধ্যে সংবিধানের মৌলিক বিষয় পাল্টে ফেলার বেশকিছু উদাহরণ আছে, সেখানে দেশের অন্তত ৮০ ভাগ মানুষের দাবি নিরপেক্ষ সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি বাস্তবায়নে সংবিধানে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের প্রত্যাশা পূরণ করতে এত অনীহা-অগ্রাহ্যতা জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। শুধু নির্বাচনকালীন সরকার বা নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারই এবার যথেষ্ট নয়। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ অনুসারে ঢেলে সাজানোর বাস্তব উদ্যোগ নিতে হবে। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের দৃষ্টিতে সম অধিকারের বাস্তব দৃষ্টান্তগুলো এমন যে, আইন লঙ্ঘনের দায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের যে কোনো মন্ত্রীকে গ্রেফতার করতে পারবে। করোনাকালীন নির্দেশনা অমান্য করায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনসহ কয়েকজন মন্ত্রী ও শীর্ষ আমলার বিরুদ্ধে পুলিশের মামলা ও জরিমানা আদায় অতি সাম্প্রতিক ঘটনা। দায়িত্বে থাকা অবস্থায় আইন অমান্যের দায়ে পুলিশের শীর্ষ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের উদাহরণও আছে। সেখানে আমাদের দেশে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে জিডি করতে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা অহরহ ঘটছে। দুর্বৃত্তায়িত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক লুন্ঠনের মচ্ছব চিরস্থায়ীভাবে দূর করতে হলে প্রথমেই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে সমুন্নোত করতে হবে। নব্বইয়ের গণআন্দোলনের পর নির্দলীয় তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অন্তত তিনটি (১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১) নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছিল। গণতন্ত্র শুধু নির্বাচন কেন্দ্রিক বিষয় নয়। দেশের মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, আইনের শাসন, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, সম্পদের সুষম বন্টন এবং মানুষের শিক্ষাব্যবস্থায় সব মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সাংস্কৃতিক বিকাশের পথকে বিকশিত করার পথ সুগম করাই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই এবারের রাজনৈতিক-প্রশাসনিক সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। কোনো পরাশক্তি বা আঞ্চলিক মোড়লের স্বার্থে নয়, বাংলাদেশ চলবে বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের সামগ্রিক ঔৎকর্ষ, নিরাপত্তা ও কল্যাণের পথে। চলমান আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বাস্তবতায় জাতীয় ঐক্য ও রাজনৈতিক রিকনসিলিয়েশন বা বৃহত্তর সমঝোতা ছাড়া দেশকে সামনে এগিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।
bari_zamal@yahoo.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন