যাকে বলে দুর্নীতি ভাগ্য! এতেই খুলে গেছে কপাল। এরকম কপাল কয়েজনের হয়। স্কুল পালানো ছাত্রের কথা শুনা যায়। কিন্তু কর্মস্থল পালানো কোন বৈজ্ঞানিকের কথা হয়তো সেই তালিকায় পাওয়া দুস্কর। পালিয়েও পেছনে পড়েননি তিনি। রয়েছে সরকারি অর্থ আত্মসাথের অভিযোগ, রুজু হয়েছে বিভাগীয় মামলা। তাতে কি, সব সম্ভবের দেশে এখন সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের (সিকৃবি) ভিসি। এতে চোখ কপালে তুলে লাভ নেই, কারণ এই দেশে উপরের সিঁড়িতে তোয়াক্কা নেই পার্সোনাল ক্রাইম রেকর্ডের।
মানুষ গড়ার এই কারিগরের সর্বাঙ্গে অনিয়মন-দুর্নীতি-দম্ভোক্তি-স্বজনপ্রীতি, সহকর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহার ও অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগ চেতনার দাগ। অতীত অনিয়ম দুর্নীতির পারফরমেন্স ছাপিয়ে ভিসি মেয়াদের প্রায় চার বছর খাবলে খাচ্ছেন সিকৃবিকে। তার স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ সিকৃবি সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু খামোশ হওয়া ছাড়া উপায় নেই, কারণ তাকে দমানের সাধ্যও নেই কারো। সব মিলিয়ে দুর্নীতির এক হীরক রাজা সিকৃবি ভিসি কথিত মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার।
এক সময় তৎকালীন বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বিএলআরআই) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। কিন্তু প্রশাসনিক কোন নির্দেশ ছাড়াই ২০০০ সালের ৯ অক্টোবর সর্ম্পূণ নিয়ম বহির্ভূতভাবে কর্তৃপক্ষের অগোচরেই উধাও হয়ে যান। এর প্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে আর্থিক অনিয়ম, অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপ ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের। এই অবস্থায় সহযোগী প্রিন্সিপাল হিসেবে যোগদেন তৎকালীন সিলেট সরকারি ভেটেরিনারী কলেজে।
২০০৬ সালে সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর ভেটেরিনারি অনুষদ অন্তভূক্ত হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে তৎকালীন সিকৃবি প্রফেসর ড. আব্দুল আউয়ালের অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত ভিসির দায়িত্ব নেন প্রফেসর ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার। ওই দায়িত্ব পেয়ে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ভাতিজা শফিকুল ইসলাম, ভাগ্নে আসাদ, নিরুসহ ১৮ জনকে অবৈধভাবে সিকৃবিতে নিয়োগ দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সিকৃবিতে ভিসির দায়িত্ব লাভ করেন প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার।
ভিসি পদে নিয়োগের পর ভূয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। সেই সাথে ব্যক্তিগত ব্যবহারে উগ্রতা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আঘাত, সিকৃবির লিয়াঁজো অফিস ক্রয়ের নামে ফ্লাট ও ইন্টিরিয়র ডেকোরেশন ও ফার্নিচার ক্রয়, এসি ল্যাপটপ ক্রয়, ক্রয় সংক্রান্ত, বাসভবন সংক্রান্ত, সিকৃবির তহবিল তছরুপ, অডিটোরিয়াম নির্মাণ সংক্রান্ত দুর্নীতি, প্রশাসন পরিচালনায় অদক্ষতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দুর্বলতা, উন্নয় মূলক কাজে ব্যর্থ এক চাষি তিনি।
অনিয়ম দুর্নীতির ঢালপালা সিকৃবিতে রেখে চলতি বছরের ৩০ ডিসেম্বর, চাকরির মেয়াদ পূর্ণ করবেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেও তার রেখে যাওয়া অনিয়ম লোপাটে অনেক বছর ঝিমিয়ে থাকবে সিকৃবির ভবিষ্যত, এমন অভিমত সংশ্লিষ্টদের। অপরদিকে, ভিসি প্রফেসর ড. মতিয়ার বিরুদ্ধে সহকর্মীদের সাথে নোংরা ভাষা ও গালমন্দের ঘটনায় সিকৃবিতে আন্দোলন হয়েছে।
চলতি বছরের ৩ এপ্রিল পরিবহন পুল ও ছাত্র উপদেষ্টা সাথে দুর্ব্যবহারের ঘটনা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচারিত হয়। সেই সাথে শিক্ষকদের প্রতিবাদী আন্দোলনে সঙ্কটে পড়ে সিকৃবিতে শিক্ষা ও চাকরির পরিবেশ। বিদ্যাপীটের সর্বোচ্চ ব্যক্তির এহেন নীচু মানসিকতা নিয়ে উঠে প্রশ্ন। শিক্ষিতজনের বিনয়ী অন্যের কাছে শিক্ষনীয়, অনুসরণীয় অনুকরণীয় হওয়ার কথা থাকলে সিকৃবির ভিসির থেঁতো কথায় বিষিয়ে উঠে সহকর্মী শিক্ষকদের মন মেজাজ। সে কারণে ভিসি বিরোধী আন্দোলন টানা চলতে থাকে।
সিকৃবির নৈতিকতা (শুদ্ধাচার) কমিটির সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ রাশেদ আল মামুনকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আমি এরকম একটি কমিটিতে আছি আমি নিজেই জানি না। কেউ আমাকে অবগত করেননি। সিকৃবির ওয়েবসাইটে সেই কমিটিতে তার ছবি সম্বলিত নাম রয়েছে প্রসঙ্গে বলেন, আমাকে দিয়ে বিবেচনা করেন সিকৃবিতে নৈতিকতার কথিত বাস্তবতা।
সিকৃবি আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্টদের দাবি, জ্ঞান আহরণের সর্বোচ্চ স্থান বিশ^বিদ্যালয়। বিশ^বিদ্যালয় থেকে জ্ঞাণীগুণী তৈরী হয়ে দেশে বিদেশে সুনাম ছড়াবে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অনিয়ম দুর্নীতি ঘিরে রেখেছে সিকৃবিকে। এ নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষার্থী সহ শিক্ষকদের মধ্যে। অনিয়ম দুর্নীতির ফলে ধ্বংস হচ্ছে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, সর্Ÿোচ্চ ব্যক্তি দুর্নীতির গুরু। তাই দুর্নীতি-অনিয়ম উদ্ঘাটনে নিরপক্ষে তদন্তের বিক্লপ নেই। সেই তদন্তে রক্ষা হবে সিকৃবির ভাবমর্যাদা।
এদিকে, সিকৃবির ভিসি প্রফেসর ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি ফোনে দৈনিক ইনকিলাবের সাথে তার ব্যাপারে অভিযোগ প্রসঙ্গে কথা বলতে অপরাগতা প্রকাশে করেন। তবে প্রস্তাব করেন তার সাথে সরাসরি যোগাযোগের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন