বর্ষা আসে, সঙ্গে আসে বন্যা সে সাথে শুরু হয় নদী ভাঙ্গন। দর্ভোগের আশঙ্কায় বুক কাঁপে মানুষের। লাখ লাখ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবছরের মতো এ বছরও ধেয়ে এসেছে বন্যা সে সাথে শুরু হয়েছে রাজশাহী গোদাগাড়ীতে সর্বনাশা পদ্মার নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙ্গন রোধকল্পে স্মারক সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারগণ পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী নিকট স্বারকলীপি প্রদান করেছেন।
প্রায় প্রতি বছর আষাঢ় মাসেই দেশে বন্যার প্রাদুর্ভাব শুরু হয়ে যায়। প্রথমেই বৃষ্টি ও এসময়ে ভারত তাদের ফারাক্কার সবকয়টি গেট খুলে দেয় আর উজান থেকে ধেয়ে আসে বন্যা পদ্মা, মাহনন্দা নদীর পানি বড়ার সাথে শুরু হয় তীব্র নদী ভাঙন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয় নি।
গোদাগাড়ী উপজেলার নিমতোলা, চাক পাড়া, খারিজাগাঁতি ও মোল্লাপাড়ায় পদ্মা নদীতে নতুন করে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। গতবছর মধ্যে নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে কয়েক হাজার বিঘা এলাকার ফসলি জমি, আম বাগান, হুমকির মুখে রয়েছে বসতবাড়ি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সরকারী গবাদিপশু খামার, ছাগল উন্নয়ন খামার, হাসঁমুরগী খামার, মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
প্রতি বছর বন্যার সময় পদ্মা নদী ভয়ালরূপ ধারণ করে। পদ্মার তীব্র ভাঙ্গনে আম বাগান, বিভিন্ন ফলের গাছ, ফসলী জমি যাচ্ছে নদীগর্ভে। গত ৫ দিন ধরে উপজেলার নিমতেলা গ্রামে নদী নতুন করে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে রাস্তা, দোকান, ফসলি জমি, পাশাপাশি বসতবাড়ি ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। ভাঙ্গন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। এই বুঝি সব তলিয়ে গেল, সর্বনাশা পদ্মা নিয়ে গেল আমাদের জান মাল, গবাদিপশু। এলাকাবাসির দাবী ভাঙ্গন রোধে দ্রুতই পদক্ষেপ নেয়ার।
নিমতলা গ্রামের ৭০ বছর বয়সের অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক ও কৃষক আব্দুর রহমান চোঁখের পানি ঝড়াতে ঝড়াতে বলেন, বহু কষ্টে গড়া বসত বাড়ী, ফসলী জমি, রাস্তা, নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে, করেছিলাম, নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে অনেকের বাড়ীর ধারে চলে এসেছে। বাড়ীর পার্শ্ববর্তী টিউবয়েলটি নদী গর্ভে চলে গেছে।
হিন্দু খৃষ্টান পরিষদের নেতা কৃষ্ণ কুমার সরকার বলেন, বুধবার সকালে নিমতোলা গ্রামে নদীর ধারে গিয়েছিলাম কিছুটা জায়গায় বালির বস্তা ফেলানো আছে জায়গাটুকু মোটামুটি সুরক্ষিত আছে বাঁকী অন্য স্থান গুলি ভেঙ্গে যাচ্ছে, রাস্তা দোকান, ফসলী জমি ভেঙ্গে যাচ্ছে। এ ভাঙ্গন রোধকল্পে সমস্ত জায়গায় বালির বস্তা দেয়া জরুরী। ভাঙ্গন রোধে দ্রুতই কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে নদী গর্ভে চলে যাবে নিমতলা চাক পাড়া, খারিজাগাঁতি ও মোল্লাপাড়া এলাকার ফসলি জমি, আম বাগান, বসতবাড়ি, সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপন। পথে বসবে এলাকায় বসবাসকারী পরিবার গুলো।
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, উপজেলা যুবলীগের অর্থবিষায়ক সম্পাদক ও দেওপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান, মোঃ বেলাল উদ্দিন সোহেল বলেন, বিভিন্ন সময়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা পরিদর্শনে এসেছিলেন, আমিও তাদের সাথে ছিলাম। এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী নির্দেশে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সবকিছু করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।
বেলাল উদ্দিন সোহেল আরও বলেন, আজকে সকালে, মেম্বার, সুধিজনদের নিয়ে দেওপাড়া ইউনিয়নের ৯ নাম্বার ওয়ার্ডের পদ্মা তীরবর্তী মানুষের ঘর-বাড়ী নদী ভাঙ্গন রোধে অতি দ্রুত জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর স্বারকলীপি প্রদান করেছি।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ( পিআইও) প্রকৌশলী আবু বাশির বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলির তালিকা অনুযায়ী ত্রাণসামগ্রী ও সাহায্য প্রদান করা হবে।
গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জানে আলম বলেন, ওই এলকার ভাঙ্গনের বিষয়টি আমার জানা আছে। এর আগে ভাঙ্গন থেকে এলাকাবাসী রক্ষা করার জন্য বালির বস্তা ফেলা হয়েছিল। আগামীতে এ সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহন করবেন।
শুধু বর্ষাকালেই নয়, আশ্বিন-কার্তিকেও বন্যা হয় এদেশে। ২০১৯ সালে তো ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙে অক্টোবরেও বন্যা হয়েছিল।
পানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্ষায় ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে বন্যা হয়। কারণ, নদীবাহিত পলি জমে জমেই এই বদ্বীপের জন্ম। বাংলাদেশের জন্ম। বন্যায় এই পলি সমতলে ছড়িয়ে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। তাই, বাংলাদেশের জন্য বন্যা একই সঙ্গে অভিশাপ ও আশীর্বাদ। তবে এটা ঠিক, মানুষের পরিবেশবিধ্বংসী নানামুখী কার্যক্রমের কারণে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ক্রমশ বাড়ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন