নদীর একূল ভাঙ্গে, ওকূল গড়ে এইতো নদীর খেলা। সত্যিই বিচিত্র এই যমুনা, আরো বিচিত্র এর গতি পরিবর্তন। বর্ষায় যেমন নদী ভাঙে, তেমনি আবার পানি শুকিয়ে যাওয়ার টানে নদী ভাঙ্গে। এই শুষ্ক মৌসুমেও তাই থেমে নেই টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের যমুনা নদীর ভাঙন। ইতিমধ্যেই নদী পাড়ের প্রায় শত শত পরিবার সহায়-সম্বল হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন। ফলে স্থানীয় এলাকাবাসী আবারো নতুন করে ভাঙনের শঙ্কায় পড়েছে। যমুনা নদীর ভাঙ্গন রক্ষায় প্রতিবছরই জনপ্রতিনিধিরা এসে নানান প্রতিশ্রæতি দিলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, যমুনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে একটি প্রকল্প অনুমোদ হয়েছে। আগামী বর্ষার পরেই কাজ শুরু হবে।
সরেজমিনে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার যমুনা নদীর ভাঙ্গনে দিশেহারা হাজারো মানুষ। চৈত্র-বৈশাখ মাসের শুষ্ক মৌসুমেও নদী তীরবর্তী সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইশা মাইঝাইল, খাষ ঘূনিপাড়া, চর সলিমাবাদ, ভূতের মোড়, ভারড়া ইউনিয়নের শাহজানি, মারমা, উলাডাব, মোকনাসহ বিভিন্ন নদী তীরবর্তী গ্রামে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। রাস্তা, বাজারঘাট ও বহু ঘর-বাড়ি, ফসলী জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা যমুনা নদীর গর্ভে চলে গেছে। বাড়ি-ঘর, ফসলী জমি হারিয়ে মানুষ দিশেহারা। এলাকাবাসীর দাবী নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থায়ী গাইড বাধ নির্মানের।
ভাঙন কবলিত এলাকাবাসী রাবেয়া, আমেনা, মনছের আলী ও রহিম জানায়, আমাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব নদীতে চলে গেছে। এখন আমাদের সহযোগিতা কে করবে। আমরা সব সময় সরকারের কাছে দাবি করে আসছি নদীতে একটি বেরী বাঁধ দেওয়ার জন্য। কিন্তু কে শোনে আমাদের কথা। আমরা গরীব মানুষ, আমাদের কথা বড় বড় মানুষের কাছে আপনারা তুলে ধরেন।
ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ কয়েকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছোট বেলা থেকে শুনে আসছি এ নদীতে বেরী বাঁধ দিবো। কিন্তু এতো বয়স হলো আজও তো বাঁধের এক অংশও দেখতে পারলাম না। আর কবে দিবো। মানুষ তো শুধু বলে বাঁধ দিবো। নদীর ভাঙ্গনে বাড়িঘর সব শেষ। এখন যেটুকু আছে তা এ ভাঙ্গনে শেষ হয়ে যাবে। গতবছর নদীর ভাঙ্গন দেখা দেওয়ার পর পানি উন্নয়ন বোর্ড নাম মাত্র জিও ব্যাগ ফেলে যায়। এতে করে আমাদের কোন কাজেই আসছে না। এখন আবার অসময়ে যমুনা নদীর ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আর এ নদীর তীরে যদি বাঁধ থাকতো তাহলে আমাদের বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হতো না।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীদুল ইসলাম অপু বলেন, যমুনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে স্থানায় এমপির সার্বিক সহযোগিতায় সলিমাদ ইউনিয়নের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে একটি প্রকল্প অনুমোদ হয়েছে। আগামী বর্ষার পরেই কাজ শুরু হবে বলে জানতে পেরেছি।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, যমুনার ভাঙ্গন প্রতিরোধে একটি প্রকল্প অনুমোদ হয়েছে। দরপত্র আহŸানের মাধ্যমে আগামী বর্ষার পরেই বেরী বাঁধের কাজ শুরু করা হবে। এছাড়াও আগামী বর্ষায় জরুরী মেরামতের জন্যও জিওব্যাগ মজুদ আছে। আর এখন যে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে তার জন্য আমরা ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় কিছু জিও ব্যাগ ফেলবো। যাতে ওই এলাকায় ভাঙ্গন রোধ করা যায়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন