বাড়ি ভাঙতে ভাঙতে জীবনটায় শ্যাষ। আমার জীবনে আমি ২৫ বার বাড়ি ভাঙছি। এছাড়াও প্রায় ২৫ বিঘার মতো আবাদি জমি ছিল সব নদীতে গেছে।
এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন, কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের আলগা গ্রামের বৃদ্ধ একরাম আলী (৭০)।
তিনি বলেন, প্রথমে আমার উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর এলাকায় বাড়ি ছিল। ধরলার ভাঙনে প্রথম বাড়ি ভেঙে যায়। এভাবে এ চর থেকে ওই চর এভাবেই ২৫ বারের মত ভিটেমাটি নদীতে বিলিন হয় আমার। সর্বশেষ আমার বাড়ি ছিল জাহাজের আলগা গ্রামে সেই বাড়িও ১৪-১৫ দিন আগে ব্রহ্মপুত্র নদে বিলিন হয়। বাজারে আমার একটা ছোট দোকান আছে দোকানটা চালিয়ে কোনরকমে এই বয়সে সংসার চালাচ্ছি।
একরাম আলী বলেন, আমার দুই ছেলে এক ছেলে বিয়ে করে আলাদা সংসার করছে। ছোট ছেলেসহ আমরা একসাথে আছি। একটা গরু ছিল সেটি বিক্রি করে জাহাজের আলগা গ্রামের পূর্ব দিকে কয়েকশতক জমি কিনে সেখানেই আশ্রয় নিছি। সেখানেও নদী আছে তবে একটু দূরে। পরবর্তীতে কি যে হবে বলা মুসকিল।
ওই গ্রামের রহিম মিয়া নামের একজন বলেন, কিছুদিন আগে আমার ভিটেমাটি ব্রহ্মপুত্র নদে বিলিন হয়েছে। এবার নিয়ে আমিও ৮-৯ বার ভাঙনের শিকার হলাম। কিছু করার নাই, আমাদের চরের মানুষগুলোর কপালে পোড়া। দেখি যতদিন বেঁচে আছি আরও কতবার বাড়ি ভাঙতে পারি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের মুখে পড়েছে নদের অববাহিকার শত শত পরিবার। গত এক মাসে জেলার উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের আলগা, কাজিয়ার চর,বাগুয়ার চর ও চর গেন্দার আলগা গ্রামের প্রায় ৬৫-৭০টি বাড়ি ও শত শত বিঘা আবাদি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখনো চর গেন্দার আলগা গ্রামে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন অব্যাহত আছে।
এখানকার ভাঙন কবলিত মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। এছাড়াও ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন স্থানে ভাঙন আতংকে দিন কাটছে নদের তীরবর্তী এলাকার শত শত পরিবারের।
সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের আলগা গ্রামের স্থানীয় ইউপি সদস্য (মেম্বার) মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, কিছুদিন আগে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে আমার ওর্য়াডে প্রায় ২৫টির মত পরিবার ভাঙনের শিকার হয়েছে। এ পরিবারগুলো যে যার মত বিভিন্ন স্থানে গিয়ে কোনরকমে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের সামর্থ আছে তারা তো জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন। যাদের কোন সামর্থ নেই, নিয়তি তাদের একমাত্র ভরসা।
উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ মোজাফফর হোসেন বলেন, গত একমাসে আমার ইউনিয়নে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের শিকার হয়েছেন প্রায় ৬৫-৭০টি পরিবার। আমি ইউএনও স্যারের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন ও আমি নিজেও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলেছি কিছু জিও ব্যাগের কথা। তারা দেওয়ার কথা বলে একটি ব্যাগও দেইনি। শেষ পর্যন্ত ব্যাগের আশাই ছেড়ে দিয়েছি। কত ভাঙনে ভাঙুক আল্লাহ ভরসা। এছাড়াও এই পরিবারগুলোকে সরকারি ভাবে কোন সহায়তাও করা হয়নি এখনো।
এবিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিভিন্ন চরাঞ্চলে আমাদের নদী সমীক্ষা প্রকল্প কাজ করছে।
তারা স্টাডি শেষ করেই আমাদের গাইড লাইন দিবেন। গাইড লাইন পেলেই পরবর্তীতে সেই হিসেবে কাজ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন