শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

ভিসির সিন্ডিকেটে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব-৪ দরপত্র থেকে শুরু করে সর্বত্রই অনিয়ম

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ত্রিমাত্রিক সিন্ডিকেটের কারণে দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়ে পড়েছে সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়। যে কারণে অকার্যকর বিভিন্ন ক্রয় কমিটি। আর এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্বদেন স্বয়ং ভিসি। ভিসি ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার নিয়োগের পর প্রশাসনিক ও একাডেমিক ক্ষেত্রে স্থবিরতায় সৃষ্টি হয় সিকৃবিতে। বিভিন্ন খাতে দুর্নীতি ও তহবিল তছরূপের অভিযোগ। মেয়াদের চার বছরে একটি টাকাও আনতে পারেননি উন্নয়ন বরাদ্দের জন্য ভিসি। কিন্তু সাবাড় করে দিয়েছেন ফিজিবিলিটি স্টাডির নামে বরাদ্দের ৫ কোটি টাকা। হদিস নেই সে অর্থের। দুর্নীতি চলছে অডিটরিয়াম নির্মাণেও।

এছাড়া টেন্ডার ছাড়াই এসি ল্যাপটপ ও গাড়ি ক্রয় করে লোপাট হয়েছে বিপুল পরিমাণের অর্থ। এসব দুর্নীতি ও লুটের তথ্য জানেন ভিসি ও তার আস্থাভাজন দুই সদস্য। এদের মধ্যে জামায়াতপন্থি অর্থ দফতরের কর্মকর্তা আব্দুল কাদের জিলানী ও প্রফেসর ড. এ এফ এম সাইফুল ইসলাম। তার স্ত্রী ড. মোছাম্মৎ নাজমানারা খানুম। এক সময় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সেই পদের প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়ে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনে ছিল তার প্রভাব। স্ত্রী’র প্রভাব ঘাটিয়ে সাইফুল ইসলাম অনেক শক্ত ভিত্তি গড়েছেন সিকৃবিতে। এতে সন্তুষ্ট ভিসিও। আর্থিক ধান্ধ্যায় সেই শিক্ষককে কাছে রেখেছেন তিনি। এছাড়া সিকৃবির ট্রেজারের পদ ও পদের ক্ষমতা ভিসির হাতে, কৃষি সংস্থান ও অর্থ বিভাগ নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে নিজের বন্ধুর মাধ্যমে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভিসি পদে ড. মো. মতিয়ার রহমান হাওলাদার নিয়োগের পর ঘোষণা দেন আগামী ১ মাসের মধ্যে বিশ^বিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের খসড়া জমা দিবেন ইউজিসিতে। এরই প্রেক্ষিতে ফিজিবিলটি স্টাডির জন্য কনসালটেন্সি ফার্ম নিয়োগ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়ও যথারীতি বরাদ্দ দেন ফিজিবিলিটি স্টাডিতে ব্যয়ে ৫ কোটি টাকা। প্রায় ২৫০০ কোটি টাকায় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে জন্য ফিজিবিলিট স্টাডি শুরু করে কনসালটেন্সি ফার্ম। চার বছর পেরিয়ে গেলেও জমা হয়নি ডিপিপি। ডিপিপির কাজ অসম্পূর্ণ রেখে কনসালটেন্সি ফার্মকে ৫ কোটি টাকা কি কারণে দেওয়া হয়েছে তা একমাত্র ভিসি’ই বলতে পারবেন। যে কারণে বর্তমানে কোন উন্নয়ন প্রকল্প নেই সিকৃবিতে।

অপরদিকে, ইউজিসির পক্ষ থেকে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন ভাতাসহ বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরে অর্থ বরাদ্দ দেওয় হয়। এছাড়াও রয়েছে বিশ^বিদ্যালয়ে নিজস্ব আয়। সেই আয়ের মধ্যে শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারীদের ভবিষ্যত তহবিলবাবদ প্রদেয় অর্থ, ছাত্রছাত্রীদের জামানতের অর্থ, বেতন, পরীক্ষা ফি এবং বিভিন্ন ঠিকাদারদের জামানত বাবদ অর্থ। ভিসি ইউজিসির বরাদ্দকৃত অর্থ ও বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব আয়ের অর্থ দিয়েই সিকৃবির লিয়াঁজো অফিসের নামে কোটি টাকার ফ্ল্যাট ক্রয় করেন মহাখালীতে।

এদিকে বিভিন্ন খাতের অর্থ বিধিবহির্ভূতভাবে উত্তোলনে হুমকিতে পড়েছে সিকৃবির আর্থিক নিরাপত্তা। সে কারণে ছাত্র শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। সিকৃবির প্রকৌশল শাখা মূলত সেবা মূলক জরুরী কাজে নিয়োজিত। কিন্তু এই শাখা থেকে অর্থ লিয়াঁজো অফিস ক্রয়ে ব্যবহার করায় প্রশাসন ভবন, বিভিন্ন একাডেমিক অনুষদীয় ভবনসমূহ, আবাসিক ভবন, আবাসিক হল সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ।
এছাড়া প্রতিটি বিভাগে, আবাসিক হল, অনুষদে দাফতরিক কেনাকাটার জন্য রয়েছে ক্রয় কমিটি। রয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটিও। কিন্তু কমিটির অনুমোদন বা মতামত ছাড়াই যাবতীয় ক্রয়ে স্বেচ্ছাচারিতা চালিয়ে যান ভিসি ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদার হালাদার ও তার সহযোগীরা ।

এদিকে, অর্থ সংক্রান্ত দেখভালের জন্য অর্থ দফতরের কর্মকর্তা রয়েছেন ১৬ জন। এদের মধ্যে ভিসির মাথার মুকুট ছিলেন একজন। সেই ভাগ্যবান হলেন অর্থ বিভাগের মো. আব্দুল কাদের জিলানী।
গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের দুটি একাডেমিক ভবন ও অডিটোরিয়াম নির্মাণের জন্য আহবান করা হয় দরপত্র। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ১৩ কোটি ৭৫ লাখ ৬৪৩৩ টাকা। দরপত্রের জন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেন। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফ্রের্ন্ডস ইন্টারন্যাশনাল।

এছাড়া ঢালি কনষ্ট্রাকশন ২য় দরদাতা ও ৩য় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস-চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। দরপত্রে মেসার্স ফ্রের্ন্ডস ইন্টারন্যাশনাল ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৩ টাকা, ঢালি কনষ্ট্রাকশন ১৩ কোটি ৭২ লাখ ৮১ হাজার ২০৬২ টাকা ও দি বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ার্স এসোসিয়েটস-চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ ১৩ কোটি ৭৪ লাখ ৬০ হাজার ৬৪ টাকা উল্লেখ করেন। ২য় ও ৩য় দরদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল আলোচিত ব্যবসায়ী জিকে শামীম চক্রের । শর্ত অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা কাজের সুযোগ পাবেন। কিন্তু তার বদলে জিকে শামীম চক্র নিয়মের ব্যতয় ঘটিয়ে উন্নয়ন কাজটি হাতিয়ে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা যায়। জানিয়েছে।

অপরদিকে, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষে এসি ব্যবহারের কোন দাবি ছিলনা। ক্লাসরুমে চাপ ছিল না এসির । কিন্ত হঠাৎ করে এসি ল্যাপটপ কেনা হয় সিকৃবিতে। সেকারণে ব্যবহার উপযোগী পুরানো এসি সরিয়ে নতুন এসি স্থাপন করা হয়। অথচ অল্প সময়ের মধ্যে মানহীন এসি ও ল্যাপটপ অকেজো হয় যায়। ভিসি তার নিকট আত্মীয়দের দিয়ে এসি ও ল্যাপটপ সরবরাহ করেন সিকৃবিতে। এসি বা ল্যাপটপ ক্রয়ে কোন ধরণের দরপত্র আহবান করা হয়নি। এছাড়া ৪০ লাখ টাকা মূল্যে’র গাড়ি ক্রয় করা হয়েছে সিকৃবিতে সেখানেই ক্রয় কমিটির কোন মতামত বা অনুমোদন নেননি ভিসি।
তহবিল তছরূপ সহ বিভিন্ন খাতে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়া ও অপ্রয়োজনীয় অর্থ ব্যয় সহ তার প্রশ্নবিদ্ধ দায়িত্বপালন প্রসঙ্গে কথা বলতে ইনকিলাবের পক্ষে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় ভিসি অনুগত আব্দুল কাদির জিলানীর সাথে। তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে বারবার কল করা হলেও ফোন রিসিভের সৌজন্যতা দেখাননি তিনি। সেকারণে তার বক্তব্য গ্রহণ সম্ভব হয়নি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন