‘রাষ্ট্রীয় দৌরাত্ন্য এমন পর্যায়ে গেছে যে দেশে এখন খুনিকেও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেয়া হচ্ছে’ বলে মন্তব্য করেছেন
সর্বজন শ্রদ্ধেয় শিক্ষাবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেছেন, দেশে মানুষের জীবন-জীবিকার নিশ্চয়তা নেই। তারা আত্মহত্যা করে, দুর্ঘটনায় মারা যায়, ধর্ষণ চলে। সর্বোপরি যে রাষ্ট্রীয় দৌরাত্ম্য ও ফ্যাসিবাদ বিরাজ করছে, তার কারণে মানুষ মুখ খুলতে অত্যন্ত ভয় পায়। কী বললে কী হবে সবাই সেই আতঙ্কে থাকেন। এই ভয়ের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে নাগরিকের সংঘবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। গতকাল শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র (কারাস) মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে এ সব কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশের অবস্থা এমন পর্যায়ে গেছে যে যিনি খুনের আসামী তাকেও রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দেয়া হয়। বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। লেখক সংঘের এবারের সম্মেলনের সেøাগান ‘ভয়ের মাঝে অভয় বাজাও, সাহসী প্রাণে চিত্ত জাগাও’।
বাংলাদেশ রাষ্ট্র একটি আমলাতান্ত্রিক পুঁজিবাদী রাষ্ট্র মন্তব্য করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে এমন একজনকে সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হলো, যিনি খুনের মামলার আসামি। ছেলে সুপারিশ করে তাঁকে পুরস্কার পাইয়ে দিয়েছে। আগেরবার আরেকজনকে পুরস্কার দেওয়া হলো, তার নামই কেউ শোনেনি। এগুলো সবই হচ্ছে পুঁজিবাদের দৌরাত্ম্য। আমলাতন্ত্র সাহিত্যের শত্রু, কারণ এর পেছনে আছে পুঁজিবাদ। পুঁজিবাদের শয়তানিতে পৃথিবী ধ্বংস হচ্ছে। পুঁজিবাদকে পরাভূত করাই হচ্ছে সাহিত্য ও সংস্কৃতিসেবীদের কাজ। পাঠাগারকে সংস্কৃতিচর্চার কেন্দ্রে পরিণত করতে হবে, যেখানে বিতর্ক-নাটক-গান-খেলাধুলা থাকবে। এর সঙ্গে কিশোর আন্দোলনকেও যুক্ত করতে হবে।
বঙ্গীয় রেনেসাঁ জাগরণ আনতে পারেনি মন্তব্য করে এই জ্ঞানতাপস বলেন, ফ্যাসিবাদ শক্তিশালী হয়েছে এবং সারা পৃথিবীতে বিরাজ করছে। সেই শক্তি অতি নির্দিষ্টভাবে পুঁজিবাদী শক্তি। এটা সাহিত্য ও সংস্কৃতির শত্রু। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে পুঁজিবাদ ভয়ংকর হতে থাকে। বিষাক্ত প্রভাবে আজ সারা পৃথিবী জর্জরিত। পুরো ব্যবস্থাটা ব্যক্তিমালিকানাভিত্তিক। শয়তানের দক্ষতার সাহায্যে পুঁজিবাদ এখনো টিকে আছে এবং সভ্যতার সব অর্জন ধ্বংস করছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, ‘রাষ্ট্রকে আমরা মানবিক করতে পারিনি। মুক্তিযুদ্ধের চারটি মূল স্তম্ভের (জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা) কোনোটিই আমাদের দেশে সাফল্যের কাছাকাছিও যেতে পারেনি। ব্যাপক বাণিজ্যিকীকরণ হয়েছে। ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা শহরগুলোতে উন্নয়নের নামে নিসর্গকে ধ্বংস করা সরকারের একটা কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাল-বিলগুলো ভরাট করে সেখানে সুপারমার্কেট-বাজার ইত্যাদি করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান সৈয়দ আজিজুল হক বলেন, অর্থ, পদ, পুরস্কারের লোভ-দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত হয়ে গেছে দেশ। সততা বলতে কিছু নেই। সুবিধাবাদ চরম আকার ধারণ করেছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বলে আমরা বিভক্ত করি। কিন্তু স্বাধীনতার পক্ষ ও বিপক্ষ উভয়ের মধ্যেই অন্যায় আছে। ফলে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষের বাইনারি দিয়ে আমরা সমাজকে বিচার করছি। মৌলবাদীদের পাশ্চাত্যবিরোধিতা আর প্রগতিশীলদের পাশ্চাত্যবিরোধিতার পার্থক্য স্পষ্ট করতে হবে। প্রগতি লেখক সংঘের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া পিনুর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপংকর গৌতম, চতুর্থ জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান হীরা প্রমুখ। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন