ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশাসনিক ভবনের দাপ্তরিক জটিলতা সংক্রান্ত হয়রানি বন্ধে ৮ দফা দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হাসনাত আব্দুল্লাহ। গতকাল মঙ্গলবার ৮ দফা দাবিতে ধারাবাহিক অবস্থান কর্মসূচির এক পর্যায়ে এই ঘোষণা দেন হাসনাত।
এর আগে টানা তিনদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ধারাবাহিক অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন ওই শিক্ষার্থী। সোমবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণস্বাক্ষরও সংগ্রহ করেন হাসনাত। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবি পূরণের কোনো আশ্বাস না পেয়ে অনশনের ঘোষণা দেন তিনি। এদিন তার এ কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরো অনেক শিক্ষার্থী।
হাসনাত বলেন, সোমবারের গণস্বাক্ষরের প্রাপ্ত কাগজ, পূর্বে পরিচালিত জরিপ এবং সবার অভিযোগ নিয়ে মঙ্গলবার বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে ভিসি স্যারের সঙ্গে দেখা করতে যাই। স্যার আমাদের যৌক্তিক আট দফা দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে কোনো কথাই বলেননি। ভিসি স্যার আমার সঙ্গে অসহযোগিতামূলক আচরণ করেছেন। আমি স্যারের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, স্যার আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা সাংবাদিক ও শিক্ষার্থীদের কী বলব? তিনি (ভিসি) বলেছেন, আমি নাকি মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছি এবং আমরা যা ইচ্ছে তা করতে।
তিনি বলেন, ভিসি স্যারের অসহযোগিতামূলক আচরণের প্রতিবাদে ও আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমি অনশন কর্মসূচি ঘোষণা করছি। সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক বন্ধুদের সহযোগিতা কামনা করছি। এর আগে গত ৩০ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের প্রশাসনিক জটিলতা নিরসনে আট দফা দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন তিনি। সেসময় তিনি ভিসি বরাবর স্বারকলিপি এবং দাবি পূরণে ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন। পরে দাবি পূরণ না হওয়ায় ফের গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন তিনি। আর গতকাল ভিসির কাছ থেকে আশ্বাস না পেয়ে আমরণ অনশনের সীদ্ধান্ত নেন হাসনাত। দাবিগুলো হচ্ছে- ১. শিক্ষার্থীদের হয়রানি নিরসনের জন্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকল্পে শিক্ষক ও ছাত্র প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অভিযোগ সেল গঠন করতে হবে। যেখানে সেবাগ্রহীতারা সুনির্দিষ্ট প্রমাণাদির ভিত্তিতে অভিযোগ জানাতে পারবেন। ২. প্রশাসনিক সব কার্যক্রম অনতিবিলম্বে ডিজিটাইজড করতে হবে।৩. নিরাপত্তা ও হারিয়ে যাওয়া কাগজপত্র তদন্তের স্বার্থে অফিসগুলোর অভ্যন্তরে প্রতিটি রুমে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। ৪. প্রশাসনিক ভবনে অফিসগুলোর প্রবেশদ্বারে ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লেতে অফিসগুলোর নাম, কক্ষ নম্বর ও সেখানে প্রদত্ত সেবার বিবরণী, কর্তব্যরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নাম ও ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদর্শন করতে হবে। ৫. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনিক ভবনের ক্যান্টিনেরও সংস্কার করতে হবে। ৬. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আধুনিক সাচিবিক বিদ্যা, পেশাদারিত্ব, মানুষিক ও আচরণগত প্রশিক্ষণ আইন করে বাধ্যতামূলক করতে হবে। প্রয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত মানসিক সেবা প্রদানকারী বিভাগ ও সেন্টারগুলোর শরণাপন্ন হতে হবে। ৭. অফিস চলাকালীন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক কিংবা রাজনৈতিক কোনো কাজেই লিপ্ত থাকতে পারবে না। সে নিরিখে প্রশাসনিক ভবনের অভ্যন্তরে অবস্থিত কর্মচারী ইউনিয়ন অফিস বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ক্লাবগুলোতে স্থানান্তর নিশ্চিত করতে হবে। ৮. কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্বাচনকালীন প্রচারণা পরিবেশ বান্ধব করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা পরিবেশ বজায় রাখতে, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য হানিকর ও পরিবেশ বিপর্যয়কারী অপ্রয়োজনীয় পোস্টার লিফলেট ও ব্যানার ব্যবহার আইন করে নিষিদ্ধ করতে হবে।###
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন