গত মঙ্গলবার সকালে নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণ সম্পর্কিত বিএনপির প্রস্তাবাবলী প্রেসিডেন্ট ভবনে পৌঁছে দিয়েছে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল। প্রেসিডেন্টের সহকারী সামরিক সচিবের সাথে সাক্ষাত করে প্রস্তাবনাটি হস্তান্তরের পর ফেরার পথে প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমরা মহামান্য প্রেসিডেন্টের নিকট হস্তান্তরের জন্য দলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন গঠন ও শক্তিশালীকরণে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপস্থাপিত ১৩ দফা প্রস্তাবের মুদ্রিত কপি ও দলের মহাসচিব স্বাক্ষরিত একটি আবেদন সহকারী সামরিক সচিবের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। তিনি অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে তা গ্রহণ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, মহামান্য প্রেসিডেন্ট শারীরিক অসুস্থতার কারণে বিদেশ গিয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা আশা করি মহামান্য প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রের অভিভাবক হিসেবে দেশের মানুষের যে আকাক্সক্ষা, নির্বাচন কমিশন কেমন হওয়া উচিত, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে মহামান্য প্রেসিডেন্ট কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য চার কমিশনার নিয়োগের লক্ষ্যে বিজয় দিবসের পর সুবিধাজনক সময়ে এ সংলাপ শুরু হতে পারে। সিরিজ সংলাপে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। খুব সীমিত সময়ের মধ্যেই এ সংলাপ শেষ হবে। এজন্য একদিনে একাধিক রাজনৈতিক দলের শীর্ষনেতাদের মতামত নেবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. জিল্লুর রহমান এর আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে সংলাপের সূত্রপাত করেছিলেন। সে আলোচনা থেকে ফলপ্রসূ কিছু বের হয়নি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন তারই ফল। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনায় সম্পূর্ণ অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন। ব্যর্থতার দায় নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ যখন শেষ পর্যায়ে, তখন দেশের রাজনৈতিকদলগুলোসহ বিশিষ্টজনেরা গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠনের তাকিদ দিয়েছে। কেবল দেশের ভেতরেই নয়, বাইরেও এনিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলও বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা দেখতে চায় বিধায় তারাও আগামীতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে। নির্বাচন পরিচালনা যেহেতু নির্বাচন কমিশনের কাজ, সে কারণে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের কোন বিকল্প নেই। দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল বরাবরই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে কথা বলে আসছে। গত ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন এবং পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত অন্যান্য নির্বাচনের প্রেক্ষিতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি আরো গুরুত্ব লাভ করেছে। সে প্রেক্ষিতে দেশের প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দল নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকারকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।
অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারে নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবার এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনের পূর্বে যথাযথ সময়েই এ নিয়ে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহ ও বিশিষ্টজনেরা কথা বলেছে। এ প্রেক্ষিতে প্রেসিডেন্টের আলোচনার উদ্যোগকে আমরা অত্যন্ত ইতিবাচক বলেই মনে করি। এ উদ্যোগ এবং এই আলোচনার মাধ্যমে যদি প্রকৃত সমঝোতায় পৌঁছা যায় তাহলে সেটি হবে বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের একটা বড় অগ্রগতি। কথা-বার্তা, আলাপ-আলোচনা যাইহোক, মূল বিষয় হচ্ছে একটা মোটামুটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন। প্রেসিডেন্ট দেশের অভিভাবক। এর আগে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বিএনপি প্রেসিডেন্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। সে সময়ে এব্যাপারে ফয়সালা হলে হয়ত আজ যেসব গুরুর প্রশ্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক মহলে উঠেছে তা নাও উঠতে পারত। প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে সব দলের মতামতের ভিত্তিতে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন যেমনি জনগণ আশা করে, তেমনি এক্ষেত্রে বিএনপির পূর্ণ সহযোগিতাও কামনা করে। প্রেসিডেন্টের আলোচনার এই উদ্যোগ সফল ও ফলপ্রসূ হোক, সেটাই দেশবাসী প্রত্যাশা করে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন