একদিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে এখনো করোনাভাইরাসের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না পারা। এমন প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে রেমিট্যান্সপ্রবাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানমতে, ২০২১-২২ অর্থবছরের চতুর্থ প্রান্তিকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৭৩ কোটি ডলার, যা আগের প্রান্তিকের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি হলেও গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকের চেয়ে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ কম। এদিকে ২০২২ অর্থবছরে রেমিট্যান্স বাবদ আয় ছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ডলার। এ সময়ে রেমিট্যান্স-জিডিপির আনুপাতিক হার ছিল ৪.৫৬।
বরাবরের মতো গত অর্থবছরেও সউদী আরব থেকে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশি। এর পরিমাণ ১০৫ কোটি ডলার, যা একই অর্থবছরের মোট রেমিট্যান্সের ১৮ দশমিক ৪১ শতাংশ। রেমিট্যান্সপ্রবাহে সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপারটি এবার করোনার পর দেখা গিয়েছে। তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রদানকারী দেশ হিসেবে তালিকায় উঠে আসা। বিষয়টি যতখানি আশাব্যঞ্জক ঠিক ততখানি দুশ্চিন্তারও বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিট্যান্সপ্রবাহ বেড়েই চলেছে।
এর আগে রেমিট্যান্সপ্রবাহে আরব আমিরাত দ্বিতীয় ছিল। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র এ স্থান দখল করেছে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ প্রান্তিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৮৫, ৮৩, ৮২ ও ৯২ কোটি ডলার। একই সময়ে আরব আমিরাত থেকে প্রেরিত রেমিট্যান্স ছিল যথাক্রমে ৪৪, ৩৬, ৪৫ ও ৮০ কোটি ডলার। দুই দেশের তুলনামূলক পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রায় প্রতি প্রান্তিকে দেশ দুটোর রেমিট্যান্সে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য বিদ্যমান।
দেশওয়ারি রেমিট্যান্সপ্রবাহে উত্তর আমেরিকার দেশটি সামনে চলে আসায় অনেক জল্পনা-কল্পনার উদ্রেক হচ্ছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ রেমিট্যান্সযোদ্ধা মধ্যপ্রাচ্যে বসবাস করেন। বলা যায়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকেই আমাদের রেমিট্যান্সের সবচেয়ে বেশি প্রবাহ।
শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে গিয়েছেন ২ লাখ ৯২ হাজার ৯৩৫ জন, যার মধ্যে ২৮ হাজার ৭৩৯ জনই নারী। এ সময়ে প্রবাসে পাড়ি জমানো ব্যক্তিদের মধ্যে ৬১ দশমিক ২৯ শতাংশ সউদী আরবে গিয়েছেন। এরপর ওমান ও আরব আমিরাতে গিয়েছেন যথাক্রমে ১৪ দশমিক ৩৯ ও ৮ দশমিক ৭১ শতাংশ।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ সম্প্রতি সউদী আরবের প্রবাহের কাছাকাছি চলে এসেছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখের বেশি বাংলাদেশী দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। রেমিট্যান্সপ্রবাহে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলোও চমক দেখাচ্ছে। ইউরোপের দেশ যুক্তরাজ্য থেকে রেমিট্যান্সপ্রবাহ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
কাজের সন্ধানে বিদেশে পাড়ি জমানো বাংলাদেশীদের মধ্যে বেশির ভাগই অনভিজ্ঞ। এর সংখ্যা প্রায় ৭৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ। দক্ষ প্রবাসীদের সংখ্যা ২০ দশমিক ৬৬ শতাংশ। মোটামুটি দক্ষ প্রবাসীর সংখ্যা ৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। মাত্র দশমিক ১৩ শতাংশ ব্যক্তি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকের মতো পেশায় নিযুক্ত হয়ে বিদেশে যান।
দক্ষ জনশক্তি রফতানি করতে না পারলে ভবিষ্যতে আমাদের আরো সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। কভিডের পরে চলমান বিশ্ববাজার আরো কঠোর হচ্ছে। বেড়ে যাচ্ছে প্রতিযোগিতা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান ও ভারতের সঙ্গে জনশক্তি রফতানিতে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে দক্ষ জনশক্তি উৎপাদনে মনোযোগী হতে হবে। এজন্য ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধি ও কারিগরি জ্ঞানে শিক্ষিত করতে বিশেষজ্ঞরা জোর দিয়ে এলেও এ বিষয়ে সামান্য পদক্ষেপই গৃহীত হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন