বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম

খোদার পরেই শ্রেষ্ঠ যিনি-১

ড. হাফেয মুহাম্মাদ ছানী | প্রকাশের সময় : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বিশ্বজাহানের গৌরব, নবীকুল শিরোমণি বিশ্বশান্তির দূত হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুই তাঁর বিশ্বময় মর্যাদা এবং খ্যাতি ও মাহাত্মের সাক্ষী। আরব-আজমের সর্দার, শ্রেষ্ঠ রাহবার হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনন্য ব্যক্তিত্ব ও অনুপম জীবন আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত প্রতিটি যুগ ও স্থানজুড়েই ব্যাপৃত। বিশ্বজাহানের সবকিছুই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নবুওয়ত ও রিসালাতের সীমাহীন মাহাত্ম্য ও মাধুর্যের দ্বারা প্রভাবিত। পৃথিবীর প্রতিটি অণু-পরমাণুই তাঁর খ্যাতি ও মাহাত্মের সাক্ষী। ‘ইন্না আ’ত্বাইনা কাল কাউসার’ এবং ‘ওয়া রাফা’না লাকা যিকরাকা’ এর চিত্তাকর্ষক ধ্বনি গোটা নভোমÐল ও ভূমÐলে প্রতিধ্বনিত। সৃষ্টির সেই শ্রেষ্ঠ মানবের সম্মানিত নাম ‘মুহাম্মাদ’ রাসূলুল্লাহ। আর তাঁর খ্যাতি এতই সমুচ্চ যে, স্থান-কালের সকল উচ্চতা ও বুলন্দি এই পবিত্র নাম ও ব্যক্তিত্বের তুলনায় নেহাত তুচ্ছ। পাতাল-ভূমি থেকে ঊর্ধ্ব আরশ পর্যন্ত সবকিছুই তাঁর স্মরণে মুখর। এত উচ্চ মর্যাদা গোটা জগতে তিনি ছাড়া আর কেউ পায়নি। কেউ পাবেও না। এই অমোঘ সত্য কী সুন্দর করে বলেছেন কবি সাইয়েদ সাবীহ রাহমানী : ‘মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতো কখনো কেউ ছিল না, এখনও নেই আর ভবিষ্যতেও হবে না। এই মর্যাদা অন্য কারো কখনো ছিল না, এখনও নেই আর ভবিষ্যতেও হবে না।’

প্রসিদ্ধ মুফাসসির আল্লামা সাইয়েদ মাহমুদ আলূসী রাহ. (১২৭ হি.) ‘ওয়া রাফা’না লাকা যিকরাকা’ এর তাফসীরে লেখেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা ও সমুচ্চতা, তাঁর অনুপম আদর্শ ও নামের খ্যাতি এর চেয়ে অধিক আর কী হবে যে, আল্লাহ তাআলা নিজের নামের সঙ্গে কালিমায়ে শাহাদাতে তাঁর প্রিয়তমের নামটিও যুক্ত করে দিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনুগত্য করাকে নিজেরই আনুগত্য ঘোষণা করেছেন। ফেরেশতাগণের সাথে তিনিও রাসূলের প্রতি দরূদ প্রেরণ করেছেন এবং মুমিনদেরও তাঁর প্রতি দরূদ পাঠের আদেশ দিয়েছেন। আর যখনই সম্বোধন করেছেন অতি সম্মানিত ও সুন্দর উপাধিসহ সম্বোধন করেছেন। যেমনÑ হে মুদ্দাছছির! (চাদর আবৃত), হে মুযযাম্মিল! (কম্বল আবৃত), হে প্রিয় নবী!, হে প্রিয় রাসূল! ইত্যাদি

পূর্বের আসমানী কিতাবগুলোতেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সপ্রশংস উল্লেখ করেছেন এবং সকল নবী ও উম্মত থেকে তাঁর প্রতি ঈমান আনার প্রতিশ্রæতি নিয়েছেন। এক ঐতিহাসিক ও অনস্বীকার্য বাস্তবতা এই যে, ভূপৃষ্ঠে এমন কোনো অঞ্চল নেই, যেখানে দিনরাত সরওয়ারে দো আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রিসালাত ঘোষিত হয় না। চব্বিশ ঘণ্টার ১৪৪০ মিনিটেই পৃথিবীর কোনো না কোনো প্রান্তে, কোনো না কোনো অঞ্চলে আযানের ধ্বনি বাজতে থাকে।

আর সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাআলার নামের সাথে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নাম উচ্চারিত হতে থাকে। সুতরাং তাঁর নামের মর্যাদা ও মাহাত্ম্য এদিক থেকেও প্রোজ্জ্বল যে, আযানের ধ্বনি যতদিন পৃথিবীতে বাজবে ততদিন আল্লাহর নামের সাথে তাঁর প্রিয়তম পয়গম্বর, সাইয়্যেদুনা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র নামটিও প্রেমিক-হৃদয়ে সুধাবর্ষণ করবে।

আজও ধর্মহীনতার এই যুগে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সত্যসরল ধর্মের প্রচার ও তাঁর জীবনচরিত ও বাণী ব্যাপকতর করার প্রয়াস পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে অব্যাহত আছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র নাম স্মরণ করে, তাঁর সপ্রশংস আলোচনা করে ও তাঁর অনন্য গুণ-বৈশিষ্ট্য শুনে হাজার কোটি মানুষের মনে যে আনন্দ ও প্রফুল্লতা অনুভূত হয় তা ভাষায় প্রকাশের মতো নয়। আপন-পর নির্বিশেষে এমনকি বিরুদ্ধ শত্রæদেরও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ ছাড়া উপায় নেই।

যে পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে তা সামনে রেখে আয়াতটি তিলাওয়াত করলে নিঃসন্দেহে তিলাওয়াতের স্বাদ ও আনন্দ বহুগুণে বেড়ে যাবে। কুফর-শিরকের ঘোর অন্ধকার, গোটা দুনিয়াই তাঁর বিরুদ্ধে, মক্কার নামকরা সর্দাররা মুস্তফা-প্রদীপ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নির্বাপিত করার চেষ্টায় লিপ্ত... এ অবস্থায় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন