বিমানবন্দর এলাকার একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরি করত আমির হোসেন। বিদেশফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশে অজ্ঞান পার্টির চক্র পরিচালনা করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয় সে। জামিনে বের হয়ে ফের একই অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে আমির হোসেন। ১৫ বছরে প্রায় ৩০০ ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে মূল্যবান মালামাল লুট করে আমির হোসেনসহ তার চক্রের সদস্যরা। তার বিরুদ্ধে অজ্ঞান ও মলম পার্টি সংক্রান্ত ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে। গত শনিবার রাতে অজ্ঞান ও মলম পার্টি চক্রের এই হোতা আমির হোসেনকে তার তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে র্যাব। রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী থানা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল রোববার কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান। গ্রেফতারকৃত অন্যরা হলো- লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন (৪৮), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ (৩৫) এবং জাকির হোসেন (৪০)। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মোবাইল, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাই স্বর্ণ।
গত ২ সেপ্টেম্বর এক প্রবাসী কুয়েত থেকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। বিমানবন্দরে আগে থেকে ওতপেতে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে টার্গেট করেন। ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার পথে ওই প্রবাসীকে অজ্ঞান করে তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায় চক্রটি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী বাদী হয়ে গত ৬ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নম্বর ১২। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে গত শনিবার রাতে র্যাব-১ এর একটি দল আমির ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে গত ১৫ বছর ধরে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করত। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল।
বিমানবন্দরে কোনো স্বজন আসেনি এমন বিদেশফেরত ব্যক্তিদের টার্গেট করত চক্রটি। তারা কৌশলে বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করে চক্রের অন্য সদস্যদের নিকটাত্মীয় বলে পরিচয় করিয়ে দিত। পরে একই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য রাজি করাত। তারা একসঙ্গে বাসের টিকিট কেটে যাত্রা শুরু করত। ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত বিস্কুট খাইয়ে ভুক্তভোগীকে অচেতন করত। অজ্ঞান হওয়া প্রবাসীর সঙ্গে থাকা লাগেজের টোকেনের মাধ্যমে বাস থেকে মালামাল নিয়ে চক্রটি পরবর্তী স্টেশনে নেমে যেত।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ মামলার আসামি আমির র্যাব ও পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হয়েছে। বর্তমানে জামিনে ছিল। মূলত লুট করা টাকার একটি অংশ জামিন সংক্রান্ত আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যয় করত আমির। আমিরের সহযোগী লিটন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে। পরবর্তী সময়ে সে মাইক্রোবাস চালাত। এর আড়ালে ৩-৪ বছর ধরে আমিরের অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছিল। লিটনও একাধিকবার একই ধরনের মামলায় গ্রেফতার হয়। গ্রেফতার হওয়া আরেকজন আবু বক্কর ৮-৯ বছর জুয়েলারি দোকানে কাজ করে। ৬-৭ বছর পূর্বে নিজেই রাজধানীর শ্যামপুরে নিজের জুয়েলারির দোকান প্রতিষ্ঠা করে। জুয়েলারি দোকানের আড়ালে গত ২-৩ বছর ধরে এই চক্রের লুট করা স্বর্ণ গ্রহণ, পরিবর্তন ও বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। গ্রেফতারকৃত জাকির হোসেন ছাপাখানার ঠিকাদার ছিল। গত ৩-৪ বছর আগে আমিরের মাধ্যমে চক্রে যোগ দেয়। লুট করা স্বর্ণালঙ্কার ও অন্যান্য মালামাল রাজধানীর বিভিন্ন জুয়েলারি দোকানে বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল সে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন