বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অন্য পথে চলুন

হঠাৎ বিমানবন্দর সড়ক ৬০ ঘণ্টা বন্ধের ঘোষণা বিকল্প পথ না খুলে রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ করে দেয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া বিআরটি প্রকল্পের এমডি সফ

একলাছ হক | প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিমানে যাতায়াত করা এবং বিমানবন্দর সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাফেরা করা মানুষকে অন্য পথ দেখার পরামর্শ দিয়েছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কর্তৃপক্ষ। রাজধানীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চলাচল করা মানুষ কোন পথে চলাচল করবে তার সঠিক দিক নির্দেশনা নেই। ফলে এ পথে চলাচল করা এবং বিমানে আসা যাওয়া করা মানুষের মাথায় যেন বাজ ভেঙ্গে পড়েছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় মানুষ বুঝতে পারছেন না হঠাৎ করে কেন তাদের ওপর এই নির্দেশনা! বিআরটির প্রকল্প পরিচালক এ, এস, এম, ইলিয়াস শাহ্ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে ‘যান চলাচল স্থায়ীভাবে নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সড়ক উন্নয়ন কাজ চলমান রাখার কারণে জনসাধারণের জন্য এ বিশেষ ট্রাফিক নির্দশনা জারি করেছে বিআরটি’। এতে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকবে। এ সময়ে সড়কে চলাচলরত জনসাধারণ ও পরিবহনকে সম্ভাব্য বিকল্প পথ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। সে সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বিমানে বিদেশ যাতায়াত করছেন, লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়া করছেন সে সড়ক ৬০ ঘন্টা রাখা কতটুকু দায়িত্বশীলতা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নেটিজেনরা নানান প্রশ্ন উত্থাপন করছেন এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে মন্তব্য করছেন।

ভোগান্তির প্রকল্প বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি)। প্রতিদিন এই গুরুত্বপূর্ণ রুটে দৈনিক যাতায়াত করে লাখো মানুষ। দিনরাত ২৪ ঘণ্টাই তীব্র যানজট লেগে থাকে এখানে। এই সড়কেই সৃষ্টি হয়েছে যানজটের রেকর্ড। যানজটের কারণে এই সড়ক ব্যবহাকারী বিদেশ গমনের যাত্রীদের ফ্লাইট মিস হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কোন যাত্রীকে নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো দূরহ ব্যাপার হয়ে পড়ে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় গণপরিবহনগুলোতে। ১০ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। বছরের পর বছর একই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় ভোগান্তির যেন শেষ নেই। দীর্ঘ প্রকল্পের সড়কের দু’পাশে বড় বড় স্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা প্রায় অচল অথবা স্থবির হয়ে পড়েছে। স্কুল-কলেজ-হাসপাতাল, আবাসন, ফ্ল্যাট বাড়ি, গলি, প্রায় নিত্যদিন লেগে থাকে তীব্র যানজট। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও বন্ধের তাৎক্ষণিক নিষেধাজ্ঞা। খানাখন্দে বৃষ্টি ও বর্ষায় পানি জমে গেলে জনদুর্ভোগ হয় অবর্ণনীয়। নির্মাণ কাজে গাফিলতি ও অব্যবস্থাপনার জন্য মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু।

গতকাল বুধবার বিমানবন্দর সড়কে চলাচলে বিশেষ ট্রাফিক নির্দেশনা দিয়েছে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) কর্তৃপক্ষ। যান চলাচল স্থায়ীভাবে নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের সড়ক উন্নয়ন কাজ চলমান রাখার কারণে জনসাধারণের জন্য এ বিশেষ ট্রাফিক নির্দশনা জারি করেছে বিআরটি। বিআরটির প্রকল্প পরিচালক এ, এস, এম, ইলিয়াস শাহ্ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন এলাকায় বিশেষ ব্যবস্থাপনায় সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকবে। এজন্য যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত ওই করিডোরে চলাচলরত জনসাধারণ ও পরিবহনকে সম্ভাব্য বিকল্প পথ ব্যবহারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সবার সহানুভ‚তি এবং সহযোগিতাও কামনা করা হয়েছে।
কিন্তু নির্দেশিত প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে জনসাধারনের ব্যবহারের জন্য বিকল্প পথের কথা বলা হলেও বিকল্প পথের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। এনিয়ে সাধারণ জনগণের মাঝে রয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। অনেকেই বলছেন, বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কেই কোনো বিকল্প সড়ক হতে পাড়ে না। কারণে হিসেবে দেখিয়েছেন দৈনিক লাখ লাখ মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করে। হাজার হাজার পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ি চলাচল করে। এসব গাড়ি অন্যকোনো বিকল্প পথে চলাচল করা সম্ভব হবে না।

জানতে চাইলে ঢাকা বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিডেট (বিআরটি) প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আসলে বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কে ছুটির দিনের কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ রাখা হবে না। একটা অংশ বন্ধ রেখে প্রকল্পের কাজ চলবে। বাকী অংশ খোলা থাকবে। যাদের প্রয়োজন সেসব গাড়ি চলাচল করতে পারবে।

বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কের বিকল্প সড়কের বিষয়ে তিনি বলেন, এই সড়কে সাধারণত গাড়ির চাপ বেশি থাকে। তাই প্রকল্পের কাজ চলমান থাকার দিনগুলোতে টঙ্গী, গাজীপুর কামারপাড়া সড়ক ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি।
জানা যায়, রাজধানীতে প্রবেশমুখ এবং অত্যন্ত ব্যস্ত সড়কটি চলাচলকারী মানুষের জন্য নিদারুণ দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। ব্যস্ত সড়কটির উপর দিয়ে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ কচ্ছপ গতিতে হচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত মূল সড়ক যেন বিধ্বস্ত কোনো গিরিখাদ। যত্রতত্র খানাখন্দ, রাস্তার মাঝখানে নির্মাণ সমগ্রীর স্ত‚প, খানাখন্দে পানি জমানো, উঁচুনিচু সড়কে যানবাহন চলাচলে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আগামী বছরের জুন মাসে উদ্বোধনের টার্গেট করে বিআরটি প্রকল্পের বাকি অংশের কাজ এগিয়ে চলছে। কিন্তু সড়কের নিচের অংশ দেখভালের যেন কেউ নেই। বিকল্প পথ না থাকায় বাধ্য হয়ে যাদের ওই সড়কটি ব্যবহার করতে হয় তারা ভোগান্তির ঝুঁকি বুঝেই রাস্তায় নামেন। রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের জেলাগুলোর মানুষ এ পথেই যাতায়াত করেন। এমনকি ঢাকার মিরপুর, উত্তরা এলাকার মানুষ এ পথ ব্যবহার করে থাকেন। এ অবর্ণনীয় ভোগান্তির কারণে এই প্রকল্পটিকে সাধারণ মানুষ মহাদুর্ভোগের প্রকল্প হিসেবে নামকরণ করেছে। অসংখ্য স্কুল, কলেজ, মাদরাসায় শিক্ষার্থী চলাচল করেন। অরক্ষিত এই প্রকল্পে গার্ডার পড়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহতের ঘটনায় উত্তরা এলাকার বসবাসকারীদের মধ্যে আতঙ্ক-উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।

বিআরটি প্রকল্পটি ২০১২ সালে সরকারের অনুমোদন পায়। নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে ৮১ দশমিক ৬৫ শতাংশ। নির্মাণ কাজের কারণে চার বছর চরম দুর্ভোগ চলছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের উত্তরা থেকে জয়দেবপুর অংশে। এই পরিস্থিতিতে কাজ বাকি রেখেই উত্তরা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ফ্লাইওভারের একাংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। সড়কে বিশাল খানাখন্দ ও পানিবদ্ধতায় টানা কয়েকদিন দীর্ঘ যানজট হয় উত্তরা থেকে জয়দেবপুর চৌরাস্তা সড়কে।

প্রকল্প এলাকায় দেখা গেছে, এখনো বিমানবন্দর থেকে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা পর্যন্ত নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে রাস্তার মাঝে। রাস্তার মাঝখানে আগের মতোই একের পর এক রাখা রয়েছে বিআরটি প্রকল্পের গার্ডার। খোলা অবস্থায় বালুর স্তুপ রাস্তার মাঝেই রাখা হয়েছে। ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি চলাচলের সময় এই বালি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। কোনো কোনো স্থানে রাস্তার পাশে বিশাল প্রকল্পের গর্ত। এতে যানজট বাড়ে, ভোগান্তি বাড়ে সাধারণ মানুষের। মূল সড়কের উপরে রাখা হয়েছে নির্মাণসামগ্রী। রোগী পারাপারে অ্যাম্বুলেন্সও আটকে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিআরটি প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর ব্যস্ততম এই সড়কটি সরু হয়ে যায়। এতে প্রশস্ততা কোথাও কোথাও হয়ে গেছে অর্ধেক। কোথাও কোথাও দীর্ঘদিন কাজ না হলেও তা সংস্কার করা হচ্ছে না।

উত্তরা যাতায়াতে রাস্তার মাঝখানে রাখা হয়েছে বালুর স্ত‚প। যা মাসের পর মাস পড়ে রয়েছে। টঙ্গী এলাকায় ফ্লাইওভারের নিচের পুরো সড়কজুড়ে খানাখন্দ। রাস্তার দুই পাশে নেই কোনো মানুষের হাঁটার রাস্তা। দীর্ঘদিন নির্মাণকাজ চলার কারণে ভাঙা আর গর্তের রাস্তা দিয়েই চলতে হয় লোকজনকে। বিমানবন্দর-গাজীপুর সড়কের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় রাস্তার মাঝেই নির্মাণসামগ্রী রাখা হয়েছে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এই সড়কের বাইপাস এলাকায় পিলার বসানো হলেও বিশাল আকারের গার্ডারগুলো রাখা হয়েছে রাস্তার মাঝখানেই। গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায় নির্মাণকাজ চলছে। পিলারের উপর গার্ডার বসানো হয়েছে তবে নিচের রাস্তায় অব্যবস্থাপনার কারণে সরু হয়ে গেছে। নোংরা-আবর্জনার কারণে সাধারণ মানুষের চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে দুর্ভোগ।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিআরটি প্রকল্পের কাজের জন্য কয়েকদিন এই সড়ক বন্ধ থাকলে এই এলাকায় ভয়াবহ আবস্থার সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এই যানজট হতে পারে দীর্ঘ মেয়াদী। এমনিতেই এই সড়কে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকে তাছাড়া প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের জন্য বন্ধ থাকলে স্থানীয়দের জন্য ব্যপারটি হবে কষ্টদায়ক।
বাস চালকরা জানান, কয়েকদিন এই সড়কে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকলে কোন পথে চলাচল করবো ভেবে পাচ্ছি না। হয়তো গাড়ি বাসিয়ে রাখতে হবে। এই সড়কের বিকল্প অন্যকোনো সড়কও দেখছিনা। এমনিতেই এই সড়কে সারাদিনে একটি বাস দুটির বেশি ট্রিপ দিতে পারে না।

এবিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রফিক বিভাগ, উত্তরা জোন) মো. কামরুজ্জামান ইনকিলাবকে বলেন, বিমানবন্দর সড়কের পুরো রাস্তা বন্ধ হচ্ছে না। এক লেন চালু রেখে কাজ করা হবে। এতে গাড়ির গতি অনেকটা কমে যেতে পারে। তবে ছুটির দিন হওয়ায় রাস্তায় যানজট অনেকটা কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ সচেষ্ট থাকবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন