ইনকিলাব ডেস্ক : প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থিতার লড়াই পর্ব থেকে শুরু করে নির্বাচনী লড়াই শেষ করে প্রেসিডেন্ট হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বিতর্কিত ও নেতিবাচক খবরের শিরোনাম হয়েছেন নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই প্রেসিডেন্টের বিতর্কিত সব কর্মকা- অব্যাহত রয়েছে তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরও। সেই ধারাবাহিকতায় এবার মন্ত্রিসভা গঠন নিয়েও তিনি পড়ছেন বিতর্কে। গত বুধবার মন্ত্রিসভায় তৃতীয় অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলকে নিজের প্রশাসনে নিয়োগের ইঙ্গিত দিয়ে ট্রাম্প মার্কিন রাজনীতিতে সামরিক প্রভাব বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি করেছেন। ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ পদে সাবেক জেনারেলদের দায়িত্ব দেয়ার সিদ্ধান্তের সমালোচনা হচ্ছে রাজনৈতিক জগত থেকে শুরু করে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে। তাদের আশঙ্কা, মন্ত্রিসভায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিতির ফলে ট্রাম্প প্রশাসনে সামরিকতন্ত্রের প্রভাব বেড়ে যেতে পারে।
গত বুধবার ট্রাম্পের অন্তবর্তী দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়,স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে (হোমল্যান্ড সিকিউরিটির প্রধান) অবসরপ্রাপ্ত মেরিন জেনারেল জন এফ. কেলিকে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প। তার এই নিয়োগের মধ্যদিয়ে ট্রাম্পের মন্ত্রিসভার শীর্ষ পদগুলো অধিকার করতে যাচ্ছেন তিনজন সাবেক জেনারেল। এর আগে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে আরেক অবসরপ্রাপ্ত মেরিন জেনারেল জেমস ম্যাটিসকে দায়িত্ব দিয়েছেন ট্রাম্প। এছাড়া হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে ট্রাম্প সেনা বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফ্লিনকে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। এখানেই শেষ নয়। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, আরও কয়েকজন সাবেক সামরিক কর্মকর্তাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন। সম্ভাব্যদের মধ্যে রয়েছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ডেভিড এইচ. পেট্রিয়াস, ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের দায়িত্বে নৌবাহিনীর অ্যাডমিরাল মাইকেল এস. রজার্স।
ট্রাম্পের মন্ত্রিসভায় সামরিক সংশ্লিষ্টতা থেকে আসা আরও যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে আছেন কংগ্রেস প্রতিনিধি মাইক পম্পিও। তাকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর পরিচালক করেছেন ট্রাম্প। পম্পিও উপসাগরীয় যুদ্ধের যুদ্ধের সময় মার্কিন সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন এবং পড়াশোনা করেছেন মার্কিন সামরিক অ্যাকাডেমি ওয়েস্ট পয়েন্ট থেকে। ট্রাম্পের প্রধান কৌশলবিদ ও শীর্ষ উপদেষ্টা হিসেবে আছেন আরেক সাবেক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা স্টিফেন কে. ব্যানন। মন্ত্রিসভায় সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের স্থান দিলেও সামরিক বোর্ডিং স্কুলে কয়েক বছর পড়াশোনা ছাড়া ট্রাম্পের সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টতা নেই। ট্রাম্প সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে যাদের মন্ত্রিসভায় নিয়েছেন এবং নেওয়ার জন্য বৈঠক করছেন তাদের বেশিরভাগই গত দেড় দশক যুদ্ধের ময়দানেই ছিলেন। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মন্ত্রিসভায় স্থান দিয়ে ট্রাম্প ইরাক যুদ্ধ ও অপর সামরিক অভিযানের যে সমালোচনা করেছেন অতীতে, তার উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ম্যাথিসকে আনুানিকভাবে নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে বেশ প্রশংসা করেছেন। ট্রাম্প জানিয়েছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কিংবদন্তি মার্কিন সেনা বাহিনীর জেনারেল জর্জ এস. প্যাটনের মতোই ম্যাথিসকে পছন্দ করেন তিনি। বলেছেন, ম্যাড ডগ কোনও ছলচাতুরি করেন না। তালেবানদের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং ইরাকে ফার্স্ট মেরিন ডিভিশনেরও কমান্ডার ছিলেন। গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর জেনারেল তিনি।
মার্কিন রীতি অনুযায়ী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে ম্যাথিসকে নিয়োগ দিতে অবশ্য মার্কিন কংগ্রেস থেকে কিছুটা ছাড় পেতে হবে ট্রাম্পকে। কারণ আইন অনুসারে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া ব্যক্তিকে অন্তত সাত বছর বেসামরিক জীবনযাপন করতে হবে। ম্যাথিস সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যান ২০১৩ সালে। মার্কিন ফরেন রিলেশনস কমিটির সদস্য ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর ক্রিস মার্ফি বলেন, আমি উদ্বিগ্ন। এসব সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে অনেক মেধা থাকতে পারে। কিন্তু গত দেড় দশকে আমরা দেখেছি সামরিক দৃষ্টিতে যখনই কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তখনই আমরা বড় বড় ভুল করেছি। ডেমোক্র্যাটিক সিনেটর প্যাট্রিক লিয়াহাই বলেন, চার বা পাঁচ সাবেক জেনারেলকে যিনি মন্ত্রিসভায় নিচ্ছেন তিনি নিশ্চয় সামরিকবাহিনী দ্বারা অনুপ্রাণিত। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক তিনজন প্রেসিডেন্টের চেয়ে বেশি সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে মন্ত্রিসভায় স্থান দিচ্ছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের আগেকার প্রেসিডেন্টরা কয়েকজনকে শীর্ষ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। যদিও তাদের কয়েক দশক বেসামরিক জীবনযাপন করেছেন। কেউ ছিলেন রাজনীতিবিদ, কেউ অ্যাকাডেমিকস অথবা আইনজীবী। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের জ্যে গবেষক উইলিয়াম এ. গ্যাটসন বলেন, স্পষ্টভাবেই ট্রাম্প গতানুগতিক ধারণা পাল্টে আগাচ্ছেন। সেনাবাহিনী সংশ্লিষ্টদের মধ্য থেকেই ট্রাম্প হয়তো মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ সদস্যকে বেছে নেবেন। অথবা হতে পারে তিনি কর্পোরেট পুঁজির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানুষদের মধ্যে থেকে বেশি ব্যক্তিকে বেছে নিতে পারেন। এই দুই ক্ষেত্র থেকে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে সাধারণ ঐক্যের জায়গা হলো তারা নেতৃত্ব এবং নির্বাহী সিদ্ধান্ত গ্রহণে অভিজ্ঞ। সিনেটর ম্যাককাসকিল মনে করেন, ট্রাম্পের মন্ত্রিসভা গোল্ডম্যান শ্যাস ও জেনারেলদের মধ্যেই সীমিত থাকবে। অবশ্য ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানদের মধ্যে সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের মন্ত্রিসভায় নিয়োগ নিয়ে তেমন কোনও উদ্বেগ নেই। সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, টাইম, ওয়াশিংটন পোস্ট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন