জাতীয় গ্রিডের সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাটের কারণে বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে ঢাকাসহ দেশের বড় এলাকা। এতে কয়েক ঘণ্টা ডিজেলচালিত জেনারেটর দিয়ে ঢাকার বিভিন্ন বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন চললেও তেল ফুরিয়ে যাওয়ায় ঢাকার বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য দেখা দিয়েছে লম্বা লাইন।
রাজধানীর আসাদগেট এলাকার তালুকদার ফিলিং স্টেশনে সজল নামের একজন জানান, দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ না থাকায় জেনারেটর চালাতে তিনি জ্বালানি তেল কিনতে এসেছেন। প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর তিনি ডিজেল পেয়েছেন।
সন্ধ্যা ৬টার দিকেও এই ফিলিং স্টেশনে ডিজেলের জন্য অপেক্ষমাণ ব্যক্তিদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। তালুকদার ফিলিং স্টেশনের ব্যবস্থাপক মো. খালিদ বলেন, ডিজেলের পর্যাপ্ত মজুত আছে। গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী ডিজেল সরবরাহ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ যাওয়ার পর বেলা ৩টা থেকে গ্রাহকদের চাপ বাড়তে শুরু করে। তালুকদার ফিলিং স্টেশন ছাড়াও রাজধানীর তেজগাঁও, বিজয় সরণি ও শাহবাগ এলাকার একাধিক ফিলিং স্টেশন ঘুরে একই চিত্র দেখা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মহাখালীর ক্রিসেন্ট পেট্রোল পাম্পে খালি কনটেইনার ও ড্রাম নিয়ে লোকজনকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ডিজেলের জন্য অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। ওই পেট্রোল পাম্পে বনানীর ১৫ নম্বর রোডের একটি বাণিজ্যিক ভবনের কর্মী শামীম কনটেইনার হাতে তেল নিতে আসেন।
তিনি বলেন, জেনারেটরের জন্য সাধারণত ১০০ লিটার ডিজেল রিজার্ভে থাকে, দুপুর থেকে কয়েক ঘণ্টা টানা জেনারেটর চলার কারণে তেল শেষ দিকে চলে আসে। আরও কয়েক ঘণ্টা যদি কারন্ট না থাকে, তাহলে জেনারেটর বন্ধ হয়ে লিফটসহ পুরো ভবন অন্ধকার হয়ে যাবে। এ জন্য তেল নিতে আসলাম।
গুলশান-১ এর ৭ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির মাজেদা কমপ্লেক্সের কর্মী মো. ইউসুফ জানান, তাদের ১৫ তলা ভবনে ২১টি ফ্ল্যাট আছে। দুপুরের পর থেকেই জেনারেটর দিয়ে জরুরিভাবে বিদ্যুৎ চালু রাখা হয়েছে। ১০০ লিটার তেল রিজার্ভ ছিল, সন্ধ্যায় তা ২০ লিটারে নেমেছে। আর কিছুক্ষণ পর জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে তেল নিতে এসে দেখি লম্বা লাইন। মনে হচ্ছে এই লাইনে থেকে তেল নেয়া সহজ হবে না।
মহাখালীর ক্রিসেন্ট ফিলিং স্টেশনের ক্যাশিয়ার আরিফ হোসেন জানান, গ্রিড বিপর্যয়ের পর ডিজেলের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। তবে তার পাম্পে ডিজেলের কমতি নেই।
গুলশান সার্ভিস স্টেশনের ক্যাশিয়ার কবির হোসেন বলেন, দুপুরের পর চাহিদা দ্বিগুণ বেড়েছে। সবাই জেনারেটরের জন্য ডিজেল নিতে এসেছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার লিটার যায়। কিন্তু দুপুরের পর সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ হাজারের বেশি লিটার চলে গেছে। অধিকাংশই জেনারেটরের জন্য ডিজেল নিচ্ছে বলে জানান কবির। পূজার কারণে বুধবার ডিপো বন্ধ থাকার কথা। তবে পরিস্থিতির কারণে ডিপো চালু রাখলে তেল এনে বিক্রি করা যাবে।
সায়েদাবাদের কাছে পেট্রোল পাম্প সন্ধ্যা ৭টার পর বন্ধ করে দিয়েছে বলে জানান এক সিএনজি অটোরিকশা চালক বলেন, বিদ্যুৎ নাই, অন্ধকার, তেল দেয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর ২টার কিছু সময় পর জাতীয় গ্রিডের একটি সঞ্চালন লাইনে বিভ্রাট দেখা দেওয়ায় ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহসহ দেশের বড় এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। তবে ত্রুটি সারিয়ে রাতের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে আশা দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন