গোদাগাড়ী (রাজশাহী) উপজেলা সংবাদদাতা : শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ উপেক্ষা করে গোদাগাড়ী উপজেলার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি পরিচালিত হওয়ায় সরকারের আসল উদ্দেশ্যে ব্যাহত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন অঙ্কুরে বিনষ্ট হচ্ছে। সরকারি নির্দেশ মতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সাপ্তহিক ছুটি ব্যতিত) প্রতিদিন ৬ঘণ্টা শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা করার কথা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না প্রতিষ্ঠানগুলোয়। বছরের শুরুতে ভর্তির ওযুহাতে বেশির ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জানুয়ারি মাসে ক্লাস হয়নি এবং ফেব্রয়ারি মাসে এসএসসি পরীক্ষার কথা বলে বিদ্যালয় সাড়ে ৯টায় খুলে দুপুর ১টার পূর্বে বন্ধ করে দিচ্ছে। এ চিত্র গোদাগাড়ীর ৯০ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। একটি স্কুল থেকে ২/৪ জন এসএসসি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারীরা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বীর দাপটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, দেখার যেন কেউ নেই। অপর দিকে শিক্ষকদের প্রাইভেট কোচিং ব্যবসা বন্ধে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রশাংসা কুড়ালেও এ নীতিমালার বাস্তবায়ন না থাকা, বিভিন্ন অজুহাতে প্রতিষ্ঠানে বছরের পূর্ণাঙ্গ ক্লাস না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকমহল দারুণভাবে হতাশ এবং শিক্ষার্থীরা কোচিং প্রাইভেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। ফলে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পুনরায় জমজমাটভাবে প্রাইভেট, কোচিং ব্যবসা শুরু হয়েছে। শিক্ষকেরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে প্রাইভেট কোচিং ব্যবসায় বেশি মনোযোগী হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীরা শ্রেণি কক্ষ ফাঁকি দিয়ে প্রাইভেট কোচিং এ বেশি সময় কাটাচ্ছেন বলে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানিয়েছেন, উপজেলায় ২টি পৌরসভা, ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। জনবহুল এ উপজেলায় ১১টি কলেজ, ৫৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩৪টি মাদ্রাসা রয়েছে। বেশির ভাগ স্কুল বিভিন্ন অযুহাতে এখনও সকাল ১০টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ক্লাস শুরু করেননি। কোন কোন প্রতিষ্ঠান সকাল সাড়ে ৯টায় খুলে দুপুর ১টার পূর্বে বন্ধ করে দিচ্ছেন, ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা উপায়হীনভাবে প্রাইভেট কোচিং এ যুক্ত হচ্ছে। মহিশালবাড়ী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হায়দার আলী বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে ১ জানুয়ারি নতুন বইয়ের আনন্দে পূর্ণাঙ্গ ক্লাশ করা না হলেও ২ জানুয়ারি থেকে পূর্ণাঙ্গ ক্লাস হচ্ছে, ভাল ফলাফল অব্যাহত রয়েছে। ৩জন শিক্ষক এসএসসিতে দায়িত্ব পালন করার পরে প্রতিদিন ৬ঘণ্টা ক্লাস হচ্ছে। শিক্ষককেরা আন্তরিকভাবে ১টি করে অতিরিক্ত ক্লাস নিচ্ছেন কোন প্রকার আসুবিধা হচ্ছে না। ভবনের অভাবে ছাত্রীদের পাঠদান কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। বাসুদেব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মজিবুর রহমান বলেন, সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ক্লাস করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও অনেক প্রতিষ্ঠান এটা মানছে না। দুপুরেই প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়ে দিচ্ছেন ফলে শিক্ষার্থীরা কোচিং প্রাইভেট বাণিজ্যে জড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে, বাল্য বিয়ে বাড়ছে, নারী নির্যাতনের ঘটনা বাড়ছে। এগুলি বন্ধ হওয়া দরকার। রাজশাহী জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানের সময় হবে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনভাবে এর ব্যতিক্রম ঘটানো যাবে না। যে সকল প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্দেশ আমান্য করে দুপুরের পূর্বে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছেন যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন ছাড় দেয়া হবে না। ইতিপূর্বে এসব অনিয়মে জড়িত থাকার কারণে গোদাগাড়ীর বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী শিক্ষকদের কারণ দর্শানো নোটিশ দেয়া হয়েছে। গোদাগাড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শামসুল কবীর এ প্রসঙ্গে বলেন, আমি কিছুদিন পূর্বে গোদাগাড়ীতে জয়েন্ট করেছি। যে সকল প্রতিষ্ঠানে এখনও পূর্ণাঙ্গ ক্লাস হয় না তদন্ত করা হবে। কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ৬ঘণ্টা পাঠদান না করে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শিক্ষকেরা কোনভাবেই প্রাইভেট, কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত থাকতে পারবেন না। প্রাইভেট, কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত শিক্ষকতাদের কোন ছাড় দেয়া হবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন