খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে গত সেপ্টেম্বরে ভারতে খুচরা মূল্যস্ফীতি গত পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পেয়ে ৭ দশমিক ৩০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এ নিয়ে টানা নবম মাসের মতো মূল্যস্ফীতির হার রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) নির্ধারিত লক্ষ্যের ওপরে রয়েছে বলে রয়টার্সের জরিপে উঠে এসেছে। অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সরবরাহ ধাক্কার কারণে খাদ্যশস্য ও শাকসবজির দাম গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধি খাদ্যদ্রব্যের এ মূল্যস্ফীতিকে ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশটির দরিদ্র ও নিম্নমধ্যবিত্তরা এখনো কভিড-১৯ মহামারী প্ররোচিত অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলে উঠতে পারেনি। খাদ্যপণ্যের মূলস্ফীতির ফলে তাদের আয়ের একটি বড় অংশ চলে যাবে রোজকার খাবারের বন্দোবস্ত করতে, যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরো বেশি নাজুক করে তুলবে। ৩-৭ অক্টোবর রয়টার্স পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৪৭ জন অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ভোক্তা মূল্য সূচক দিয়ে পরিমাপ করা মূল্যস্ফীতি আগের মাসের ৭ শতাংশ থেকে সেপ্টেম্বরে বার্ষিক ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ বেড়েছে, যা গত মে মাসের পর সর্বোচ্চ। জরিপে অংশ নেয়া ৪৭ জন অর্থনীতিবিদের মধ্যে ৪৩ জন (৯১ শতাংশ) মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ কিংবা এরও বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে অনুমান করেন। পাশাপাশি তারা দাম বৃদ্ধির দিকটিও তুলে ধরেন। ক্রিসিলের প্রধান অর্থনীতিবিদ ধর্মকীর্তি জোশী বলেন, খাদ্যপণ্যভিত্তিক একটি বড় চাপ রয়েছে, যা সক্রিয়ভাবে ক্রিয়ারত। আরো বড় দুশ্চিন্তার কারণ হচ্ছে খাদ্যশস্য ও ডালজাতীয় পণ্যের মূল্য আরো বাড়বে, যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে মুদ্রানীতিগত পদক্ষেপ কি এটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে? সত্যি বলতে তা সম্ভব হবে না। স্থানীয় বাজারকে শান্ত রাখতে ভারত সরকার এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। যেমন চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্যটির রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এতে করেও ভোক্তা পর্যায়ে মূল্য কমেনি। এমনকি আরবিআই নির্ধারিত লক্ষ্যের ওপরে রয়েছে। রুপির মূল্যমান কমিয়েও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। শুক্রবার ডলারের বিপরীতে রুপির মান কমে হয় ৮২ দশমিক ৩২ শতাংশ। রয়টার্সের অন্য একটি জরিপ অনুসারে আগামী ছয় মাসের মধ্যে রুপির মূল্যমান বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। এতে স্বাভাবিকভাবেই আরবিআইয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে পারে। চলতি বছর মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে আনতে রেপো রেট ১৯০ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া। এ নিয়ে চতুর্থবার সুদের হার বাড়াল ব্যাংকটি। আমেরিকাভিত্তিক বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগানের ভারতের প্রধান অর্থনীতিবিদ সাজিদ চিনয় বলেন, বিরাজমান বৈশ্বিক বৈরী পটভ‚মি আর অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতির মধ্যে আমরা এখন ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ টার্মিনাল রেট আশা করছি, আগে যা ছিল ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ। রয়টার্স।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন