ইনকিলাব ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে জেতানোর জন্য রাশিয়া সাইবার হামলা চালিয়েছিল বলে দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ দাবি করেছে। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জড়িত যেসব ব্যক্তি উইকিলিকসের হাতে ডেমোক্রেটিক পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্যদের হাজার হাজার নথি তুলে দিয়েছিলেন, তাদেরও মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা শনাক্ত করতে পেরেছে। ওই কর্মকর্তাদের দাবি, যেসব ব্যক্তি ওই কথিত হ্যাকিংয়ের সঙ্গে জড়িত, তারা নির্বাচনে ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারির সমালোচনা সামনে এনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের জয়ের পথ সুগম করার কাজ করছিলেন। এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় রাশিয়ার কথিত সাইবার হামলা খতিয়ে দেখার জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। হোয়াইট হাউজ বলেছে, এসব ই-মেইলের বিস্তারিত বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। হোয়াইট হাউজের এক কর্মকর্তা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার দায়িত্ব শেষ হবার আগেই এ তদন্ত কাজ শেষ হবে এবং সেটির ফলাফল নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে তুলে দেয়া হবে। হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র এরিক শুলজ জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ওবামা বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন। সেজন্য তিনি এর তদন্ত করতে বলেছেন। তবে তিনি আরও জানিয়েছেন, এর ফলে মার্কিন নির্বাচনের ফলাফলকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে না। কারণ, আমেরিকা তার নির্বাচন পদ্ধতির স্বচ্ছতা এবং অখ-তা বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। এক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তা ওয়াশিংটন পোস্টকে জানান, মার্কিন গোয়েন্দারা ধারণা করছে, এখানে রাশিয়ার উদ্দেশ্য ছিল এক প্রার্থীকে ঘায়েল করে অপরজনকে সমর্থন করা, ট্রাম্পের জয়ে সাহায্য করা। গত সপ্তাহে এ সম্পর্কিত সিআইএ’র একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন বিশিষ্ট সিনেটরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন ওই সিআইএ কর্মকর্তা সিনেটরদের এ সম্পর্কে অবহিত করেন।
ওই কর্মকর্তা আরও দাবি করেন, এটাই মার্কিন গোয়েন্দাদের যৌথ মতামত। তবে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা সিআইএ’র প্রতিবেদনকে সকল গোয়েন্দাদের মতামত বলে দাবি করলেও তাতে ১৭টি মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সবগুলোর সমর্থন নেই। অপর এক সিনিয়র কর্মকর্তা দাবি করেন, সিআইএ’র অবস্থানের সঙ্গে কিছু কর্মকর্তার অল্প-বিস্তর ভিন্নমত রয়েছে। কারণ সেখানে কিছু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি। মার্কিন প্রশাসনের অভিযোগ, রাশিয়ার হ্যাকিং-এর লক্ষ্য ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির ই-মেইল এবং প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীর তথ্য। চলতি বছরের অক্টোবরে মার্কিন কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ করেন, মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা জানিয়েছেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনকে এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তবে রুশ কর্তৃপক্ষ ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত ট্রাম্প বরাবরই রাশিয়ার হ্যাকিং সম্পর্কিত অভিযোগ খারিজ করে আসছেন। এর আগে ট্রাম্প বলেছেন, রাশিয়া কোনও ধরনের হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেছে বলে তিনি মনে করেন না। মার্কিন প্রশাসনের পক্ষ থেকে করা এসব অভিযোগকে তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেও উল্লেখ করেছেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, রাশিয়া ওই তথ্য হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে উইকিলিকসের কাছে হস্তান্তর করেছে। উইকিলিকস প্রতিনিয়ত ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারিকে অপদস্ত করার জন্য তথ্য প্রকাশ করে আসছিলো বলে ডেমোক্রেটিক পার্টির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। অপর এক সিনিয়র গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, রুশ কর্তৃপক্ষ যে উইকিলিকসের কাছে ওই হ্যাকিংয়ের শিকার হওয়া ই-মেইল তুলে দেয়, তার কোনও নিশ্চিত প্রমাণ গোয়েন্দাদের হাতে নেই। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান সম্পাদক জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন, ডেমোক্রেটিক পার্টির ই-মেইল ফাঁসের ক্ষেত্রে রুশ সরকার তাদের উৎস ছিল না। রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন