বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে সহযোগিতা দিতে সম্মত হয়েছে ব্রুনাই। বিশেষ করে এলএনজি খাতে দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা দেবে দেশটি। ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহর দুই দিনের ঢাকা সফর শেষে গতকাল যৌথ ঘোষণায় এ তথ্য জানানো হয়।
ব্রুনাইয়ের সুলতানের সফর শেষে ২২ দফা যৌথ ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ঐকমত্য পোষণ করেছে।
যৌথ ঘোষণায় আরও বলা হয়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে ব্রুনাইকে আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। এ প্রেক্ষিতে ব্রুনাই খাদ্য ও কৃষিখাতে বিনিয়োগে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
বাংলাদেশ থেকে আরও দক্ষ জনশক্তি নিতে সম্মত হয়েছে ব্রুনাই। উভয় পক্ষ মানসম্মত উচ্চতর শিক্ষাখাতে সহযোগিতা করবে। উভয় পক্ষ তথ্য-প্রযুক্তি, গ্রিন টেকনলজি ও সমুদ্র অর্থনীতি খাতে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।
রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফেরাতে ব্রুনাইয়ের রাজনৈতিক সমর্থনকে প্রশংসা করেছে বাংলাদেশ। শান্তি ও স্থিতিশীলতার লক্ষ্যে এই সঙ্কট সমাধানে বাংলাদেশের পাশে থাকবে ব্রুনাই।
ব্রুনাইয়ের সুলতানের ঢাকা সফরকালে ৪টি চুক্তি ও সমঝোতা সই হয়েছে। উভয় দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে ঐকমত্য পোষণ করেছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢাকা সফররত ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়।
‘এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট’ চুক্তিতে সই করেন বাংলাদেশের পক্ষে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এবং ব্রুনাইয়ের পক্ষে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর অফিস মন্ত্রী এবং ফাইন্যান্স ও ইকোনোমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ।
‘বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ’ বিষয়ে ঢাকার সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে ব্রুনাই। এ সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এবং ব্রুনাইয়ের পক্ষে দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আহমাদিন বিন হাজি আবদুল রহমান সই করেন।
‘তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস এবং প্রেটোলিয়াম পণ্য’ সরবরাহ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করে দুই দেশ। এ সমঝোতা স্মারকে সই করেন ব্রুনাইয়ের প্রধানমন্ত্রীর অফিস মন্ত্রী এবং ফাইন্যান্স ও ইকোনোমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ এবং বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু।
তৃতীয় সমঝোতা স্মারকটি হলো- ‘রিকগনিশন অব সার্টিফিকেট ইস্যুড আন্ডার দ্য প্রভিশন্স অব দ্য ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন অন স্ট্যান্ডার্ডস অব ট্রেনিং, সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ওয়াচ কিপিং ফর সিফেয়ারস, ১৯৭৮ অ্যাজ অ্যামেন্ডেড’। এ সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং ব্রুনাইয়ের প্রধানমন্ত্রীর অফিস মন্ত্রী এবং ফাইন্যান্স ও ইকোনোমি মন্ত্রী আমিন আবদুল্লাহ।
গত শনিবার দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকায় আসেন ব্রুনাইয়ের সলতান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রুনাইয়ের সুলতানকে স্বাগত জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। বিমানবন্দরে ব্রুনাইয়ের সুলতানকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
শনিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের ক্রেডেনশিয়াল হলে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সুলতান। বঙ্গভবনের দরবার হলে সুলতানের সম্মানে রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন প্রেসিডেন্ট হামিদ। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সুলতানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
গতকাল রোববার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুলতান বৈঠকে বসেন।
ব্রুনাইয়ের সুলতানের এটাই বাংলাদেশে প্রথম সফর। ঢাকা সফরের প্রথম দিন সাভার জাতীয় স্মৃতি সৌধে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ব্রুনাইয়ের সুলতান। বিকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
সুলতান জাদঘরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখেন এবং দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। সুলতান জাদুঘরে পৌঁছলে বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা তাকে স্বাগত জানান।
দুই দিনের সফর শেষে রোববার সন্ধ্যায় সুলতান ঢাকা ত্যাগ করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন