প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বেশি সাফল্য অর্জনকারী দেশ ব্রুনাইতে প্রতারণার শিকার প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি কর্মীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। কাজ কর্ম না থাকায় ঘরবন্দি এসব কর্মীরা খাদ্য সঙ্কটে পড়েছে। দেশে তাদের পরিবার পরিজনরাও চরম হতাশায় ভুগছে। ভিটেমাটি বিক্রি করে তিন লাখ থেকে চার লাখ টাকা ব্যয় করে দালাল চক্রের মাধ্যমে তারা ব্রুনাই গিয়েছিল। দালাল চক্র এসব কর্মীদের শর্তানুযায়ী কোনো কাজ দিতে পারেনি। কোনো কোনো মাসে বিভিন্ন স্থানে ৫/৭ দিন কাজ দিতে পারলেও সারামাস বসে থাকতে হয়। দেশটির বিভিন্ন এলাকায় অস্বাস্থ্যকর রুমে আটকে রেখেছে। ব্রæনাই দারুসসালাম থেকে একাধিক ভুক্তভোগি এসব তথ্য জানিয়েছে।
এশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় তেল সমৃদ্ধ দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি কর্মী অবস্থান করছে। মহামারীর সঙ্কটকালে প্রবাসী কর্মীদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য ব্রুনাইস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশনার এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) মাহমুদ হোসেন সরকারের কাছে সোয়া কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে ছিল। কিন্ত সরকার ত্রাণ সহায়তার জন্য মাত্র ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়।
হাই কমিশনারের ব্যক্তিগত তদারকিতে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটির ৭শ’ প্রবাসী কর্মীকে ৫০ ব্রুনাই ডলার করে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে । আর মাত্র ১৩০ জন প্রবাসীকে ৫০ ডলার করে ত্রাণ সহায়তা দেয়া যাবে। আরো নতুন করে ত্রাণের অর্থ বরাদ্দ জরুরি হয়ে পড়েছে। ব্রুনাই হাই কমিশনের কর্মকর্তা ড. আবু নাঈম আজ বুধবার ইনকিলাবকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, দেশটিতে গত ১২ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্তের বিষয়টি শনাক্ত হয়। এ যাবত ১৩৮ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে ১২৪ জনই সুস্থ্য হয়ে বাসায় ফিরেছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছে। বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের প্রবাসী ব্যবসায়ী কাসেম শেখ ও তার পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরেছে।
আজ বুধবার ব্রুনাই থেকে প্রতারণার শিকার পাবনার রফিকুল ইসলাম, খুলনার মোস্তফা, ওমর ফারুক ও আব্দুল আউয়াল কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, ঢাকা জেলার কুখ্যাত প্রতারক আব্দুর রহিম ব্রুনাইতে ভূয়া কোম্পানী খুলে সাড়ে চার লাখ টাকা নিয়ে আমাদেরকে ৮ মাস আগে ব্রæনাই এনে বিমান বন্দর থেকে সরাসরি জঙ্গলের মধ্যে একটি ঘরে আটকে রাখে। এ যাবত কোনো কাজ দিতে না পেরে তার আরেক দালাল ফরিদপুরের কামরুল হাসানসহ বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে সে জেলে রয়েছে। তারা জানান, হাই কমিশন থেকে ৫০ ডলার ত্রাণ সহায়তা পাওয়া গেছে। দেশের আত্নীয় স্বজন থেকে টাকা নিয়ে খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের আত্নীয় স্বজনও খাবারের টাকা পাঠাতে পারছে না। তাদের মতে, প্রায় ৪০ দালাল ব্রুনাইতে নামে বেনামে ভূয়া কোম্পানী খুলে বাংলাদেশ থেকে চড়া অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী এনে কাজ না দিয়ে বিভিন্ন স্থানে অবরুদ্ধ করে রাখছে। তারা এসব প্রতারক দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানায়। এছাড়া পাবনার সোলায়মান হোসেন তিন মাস আগে বাড়ী থেকে টাকা নিয়ে ব্রুনাই থেকে দেশে ফিরে প্রতারক আব্দুল রহিমের বিরুদ্ধে ঢাকার সিআইডিতে মামলা দিয়েছে। তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা নিয়ে ব্রুনাইতে কোনো কাজ দিতে পারেনি দালাল চক্র। সে গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহার অনিদ্রায় দিন কাটাচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন