পরম কৌশুলী, মহা বিজ্ঞানী ও সর্বজান্তা আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত ইহলোক ও পরলোক উভয় জাহানে প্রিয় নবী মোহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে রহমত ও অনুকম্পার ভান্ডার হিসেবে সকল আলমের জন্য প্রেরণ করেছেন। এতদ প্রসঙ্গে আল কুরআনে আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেছেন : আর আমি তো আপনাকে সৃষ্টিকুলের জন্য শুধু রহমতরূপেই প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া : ১০৭)। এই আয়াতে কারীমায় ‘আল্ আলামীন’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এটা আরবী ‘আলম’ শব্দের বহুবচন। আলম শব্দের অর্থ হলো জাতি, শ্রেণি, গোষ্ঠী, বস্তুত মানব, জ্বিন, জীবজন্তু, উদ্ভিদ, ফিরিশতা, জড় পদার্থসমূহ সবই আলমের অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া আলমে খালক (সৃষ্টি জগত); আলমে আরওয়াহ (রূহের জগত); আলমে আমর (নির্দেশ জগত); আলমে বরযখ (কবরের জগত); আলমে আখেরাত (পরকালীন জগত) ইত্যাদি আলম হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) সবার জন্যই রহমত স্বরূপ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন। এর কোনো ব্যত্যয় হবে না।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আগমন মানবজাতির জন্য আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহ। হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি তো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরীত রহমত। (ত্বাবরানী, মু’জামুল আওসাত : ৩০০৫)।
তাছাড়া যদি আখেরাতকেই আসল ও সঠিক জীবন ধরা হয়, তাহলে আখেরাতের আহবানকে প্রতিষ্ঠিত করতে কুফর ও শিরককে নিশ্চিহ্ন করার জন্য কাফেরদের হীনবল করা এবং তাদের মোকাবেলায় জিহাদ করা ও সাক্ষাৎ রহমত। এর ফলে আশা করা যায় যে, অবাধ্যদের জ্ঞান ফিরে আসবে এবং তারা ঈমান ও সৎকর্মের অনুসারী হয়ে যাবে। যারা রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওপর ঈমান আনবে ও তাঁর কথায় বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারা অবশ্যই সৌভাগ্যবান হবে। আর যারা ঈমান আনবে না তারা দুনিয়াতে পূর্ববর্তী উম্মতের মতো ভূমিধস অথবা ডুবে মরা থেকে অন্তত নিরাপদ থাকবে। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (সা.) সকল অবস্থায়ই রহমত। (তাফসীরে কুরতুবী)।
আর উল্লিখিত আয়াতে কারীমার অর্থ যদি এভাবে করা হয় যে, ‘আমি আপনাকে সবার জন্যই রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছি। তবে এই রহমত তাদের প্রতিই বর্ষিত হবে যারা ঈমান আনয়ন করবে এবং আপনাকে মেনে নেবে কিন্তু যারা আপনার কথা মানবে না, তারা দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বত্রই ক্ষতিগ্রস্তশীল হবে।’
যেমন মহান আল্লাহপাক আল কুরআনের অন্য এক আয়াতে ইরশাদ করেছেন : আপনি কি তাদের লক্ষ্য করেন না যারা আল্লাহর অনুগ্রহকে কুফুরী দ্বারা পরিবর্তন করে নিয়েছে এবং তারা তাদের সম্প্রদায়কে ধ্বংসের ঘরে জাহান্নামে নামিয়ে আনে, যার মধ্যে তারা বিদগ্ধ হবে, আর এ আবাসস্থল কত নিকৃষ্ট। (সূরা ইব্রাহীম : ২৮-২৯)। অন্য এক আয়াতে আল কুরআন সম্পর্কে ঘোষণা করা হয়েছে : বলুন, এটি মুমিনদের জন্য হেদায়েত ও আরোগ্য। আর যারা ঈমান আনে না, তাদের কানে রয়েছে বধিরতা এবং কুরআন তাদের (অন্তরের) ওপর অন্ধত্ব ও দৃষ্টিহীনতা তৈরি করবে। তাদেরকেই দূরবর্তী স্থান হতে ডাকা হবে। (সূরা ফুসসিলাত : ৪৪)।
তাছাড়া হাদিস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমাকে অভিশাপকারী করে পাঠানো হয়নি, আমাকে পাঠানো হয়েছে রহমত হিসেবে। (সহীহ মুসলিম : ২৫৯৯)। হযরত ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : আমি আল্লাহপাক প্রেরীত রহমত। যাতে (আল্লাহর আদেশ পালনকারী) এক সম্প্রদায়কে গৌরবের উচ্চাসনে আসীন করি এবং (আল্লাহর আদেশ অমান্যকারী) অপর সম্প্রদায়কে অধঃপতিত করে দেই। (তাফসীরে ইবনে কাসির)।
মোটকথা আল্লাহর জিকির ও ইবাদত হচ্ছে সমগ্র আলম তথা সৃষ্ট জগতের সত্যিকার রূহ। এ কারণেই যখন পৃথিবী থেকে এই রূহ বিদায় নেবে, তখন পৃথিবীতে আল্লাহ আল্লাহ বলার কেউ থাকবে না। ফলে, সকল বস্তুর মৃত্যু তথা কিয়ামত এসে যাবে। যখন জানা গেল যে, আল্লাহর জিকির ও ইবাদত সকল বস্তুর রূহ, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) সেসব বস্তুর জন্য রহমত স্বরূপ তা প্রভাত সূর্যের মতো সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কেননা, দুনিয়াতে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর জিকির ও ইবাদত তারই প্রচেষ্টায় ও শিক্ষার বদৌলতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাই মুমিন-মুসলমানগণের উচিত তাঁর প্রতি কায়মনে দরূদ ও সালাম পেশ করা। আল্লাহপাক আমাদের সে তাওফীক এনায়েত করুন, আমীন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন