বান্দরবান রাঙ্গামাটি ও মায়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযানের মুখে নতুন গজিয়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার ৭ সদস্য ও পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনের ৩ সদস্যসহ মোট ১০ জনকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরঞ্জামসহ আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
বৃহস্পতিবার রাতে র্যাব গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক খন্দকার আল-মইন ও অন্যান্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ অভিযানের কথা জানিয়েছেন। তবে অভিযানে পাহাড়ের সশস্ত্র কোন সংগঠনের সদস্যরা আটক হয়েছেন অথবা কি পরিমাণ অস্ত্র গোলাবারদ উদ্ধার করা হয়েছে এ বিষয়ে তারা বিস্তারিত কিছু জানাননি।
র্যাবের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আজ সকাল ১১ টায় বান্দরবান র্যাব কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অভিযানের বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে বলে জানায় র্যাবের গণসংযোগ বিভাগ।
উল্লেখ্য দীর্ঘ দুই সপ্তাহর বেশি সময় ধরে রাঙ্গামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার রাইক্ষ্যং ও বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার সাইজাম পাড়া, শিপ্পি পাহাড়, রনিন পাড়াসহ কেউক্রাডং পাহাড়ের আশেপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী ও র্যাবের সন্ত্রাস বিরোধী চিরুনি অভিযান চলছে। সমতল এলাকার একটি জঙ্গি সংগঠন পাহাড়ি সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে যৌথবাহিনী এই অভিযান শুরু করছে।
অভিযানে সেনাবাহিনীর সহস্রাধিক সেনা ও র্যাবের সদস্যরা অংশ নেয়। অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর হেলিকপ্টারগুলো ব্যবহার করা হয়। দুর্গম এলাকায় এই অভিযানে প্যারা মিলিটারি সদস্যরাও অংশগ্রহণ করে। সাম্প্রতিক সময়ে এটি পাহাড়ে সন্ত্রাস বিরোধী বড় অভিযান বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
র্যাবের গণসংযোগ বিভাগের পরিচালক খন্দকার আল-মাইন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সমতল এলাকায় নতুন গজিয়ে ওঠা জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কিয়ার সদস্যরা সারাদেশ থেকে সদস্য সংগ্রহ করে পাহাড়ের একটি সশস্ত্র সংগঠনের সহায়তায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছে এমন খবরের ভিত্তিতে চিরুনি অভিযান শুরু করে। বিশেষ করে বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলার শিপ্পি পাহাড়, রনিন পাড়া, সাইজাম পাড়া ও কেউক্রাডং পাহাড়ের আশেপাশের এলাকা সেই সাথে রাঙ্গামাটির রাইংক্ষ্যং ভ্যালিসহ মায়ানমার সংলগ্ন এলাকায় চিরুনি অভিযান চলে। এই অভিযানে পাহাড়ি একটি সশস্ত্র সংগঠনের বেশ কয়েকটি আস্তানা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। বেশ কিছু জঙ্গি সদস্য আটক হয়েছে। সর্বশেষ জঙ্গিসংগঠনের সাত সদস্য ও পাহাড়ি সশস্ত্র সংগঠনের ৩ সদস্যসহ মোট ১০ জনকে আটক করা হয় এ অভিযানে। সে সাথে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র সরঞ্জামও উদ্ধার করা হয়েছে অভিযানে। অভিযানের বিস্তারিত বিষয় শীঘ্রই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সাংবাদিকদের জানানো হবে বলেও ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
তবে আটককৃত পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠনের ৩ সদস্য কারা বা কোন সংগঠনের এ বিষয়ে এখনও কোন বিস্তারিত কিছু জানায়নি তারা। এখনো ওই এলাকায় যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। এদিকে বুধবার কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) তাদের সংগঠন থেকে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেছেন, তাদের সাথে কোন জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা নেই। বরং সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি পাহাড়ে অস্থিতিশীল অবস্থা সৃষ্টি করতে সেনাবাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে তা কেএনএফের ওপর দোষারোপ করছে। সাধারণ জনগণের ক্ষয়ক্ষতি আড়াতে কেএনএফ বাধ্য হয়ে পিছু হটছে বলে তারা ঐ ভিডিও বার্তায় উল্লেখ করেছে। এ অভিযানের কারণে বান্দরবানের রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় গত ১৮ অক্টোবর থেকে পর্যটক ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে প্রশাসন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন