শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

আন্তর্জাতিক সংবাদ

ব্রিটেনকে কেউ ফেরাতে পারছে না মন্দা থেকে

কী রয়েছে সঙ্কটগ্রস্ত পশ্চিমের ভাগ্যে?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

অবশেষে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন লিজ ট্রাস। মাত্র ৪৪ দিনের জন্য ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী হয়ে একটি উত্তাল সময় অতিবাহিত করেছেন তিনি। তার মিনি-বাজেট দেখেছে যে, কিভাবে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ব্রিটিশ পাউন্ডের মান ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্তরে নেমে গেছে, বন্ধকী সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জীবনযাত্রার ব্যয়-সঙ্কট আরো গভীর হয়েছে। দীর্ঘকাল আগে পতন ঘটা সাম্রাজ্য, মাঝারি আকারের শক্তি, দ্বিগুণহারের মুদ্রাস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জ¦ালানী ব্যয়, এবং তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে তৃতীয় প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাবনা নিয়ে ব্রিটেনকে এখন বিশ্বে সাথে বিচ্ছিন্ন হওয়ার প্রান্তে একটি ছোট ছিন্নভিন্ন দ্বীপের মতো মনে হচ্ছে, যা ভিতরে এবং বাইরের ঝড়-ঝঞ্জায় দিশেহারা।

ডাউনিং স্ট্রিটের বাইরে এক বিবৃতিতে ট্রাস বলেছেন, ‘আমরা একটি স্বল্প-কর, উচ্চ-বৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি নির্ধারণ করেছিলাম, যা ব্রেক্সিটের স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করতো। আমি স্বীকার করছি, যদিও পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, আমি যে প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে কনজারভেটিভ পার্টি থেকে নির্বাচিত হয়েছি, তা দিতে পারব না।› কিন্তু ট্রাসের পরিবর্তে যারাই আসবে, তারাও অর্ত সঙ্কট এবং একটি অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। তার উত্তরসূরি মূলত একই সমস্যার মুখোমুখি হবেন, যেগুলির সাথে তিনি শুরু করেছিলেন: একটি অস্থির স্কটল্যান্ড, যেখানে বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি আবার জ্বলে উঠতে পারে, ব্রেক্সিটের ক্ষতিকারক দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক প্রভাব যা ২০২০ সালে কার্যকর হয়েছিল, একটি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ও স্বাস্থ্য পরিষেবা যা বছরের পর বছর জটিলতার কারণে ভেঙে পড়েছে এবং কম জনপ্রিয় রাজা চার্লসের নেতৃত্বের কারণে রাজপরিবার সম্পর্কে মিশ্র অনুভূতি।

বিশে^র নজর এখন ব্রিটেনের ক্ষমতায় কে আসে, তার দিকে। সম্ভাব্যদের তালিকায় রয়েছেন লেবার পার্টির ঋষি সুনাক, যিনি দলের সদস্যদের মধ্যে ভোটে ট্রাসের কাছে হেরে গিয়েছিলেন। এছাড়াও রয়েছেন পেনি মর্ডান্ট, যিনি গতবার নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছিলেন। রয়েছেন বরিস জনসন, যিনি ক্যারিবিয়ানে ছুটি কাটাচ্ছেন, তার সমর্থকরা তারা ফিরে আসার জন্য দাবি করছে। তবে, যেই আসুন না কেন, ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীটিও হয়তো বেশিদিন স্থায়ী হবেন না। কারণ, ইতিমধ্যে দেশটির ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ তথা টোরি পার্টি লেবার পার্টি তুলনায় ৩০ পয়েন্ট বা তারও বেশি ভোটে পিছিয়ে রয়েছে। লেবার পার্টির নেতা স্যার কির স্টারমার বলেছেন, ‘এটি একটি সাধারণ নির্বাচনের সময় ছিল (যা ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে অবশ্যই হতে হবে)। টোরিরা তাদের সাম্প্রতিক নড়বড়ে অবস্থার ব্যাখ্যা দিতে পারছে না, অথচ, আবারও তাদের আঙুলের ডগায় এবং ব্রিটিশ জনগণের সম্মতি ছাড়াই শীর্ষস্থানীয় লোকদের রদবদল করছে।’

দুর্ভোগের জাল ইউক্রেন যুদ্ধের পটভূমিতে ব্রিটেনকে একটি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে, যেখানে ব্রিটেন একসময় শক্তিশালী খেলোয়াড় ছিল। নিজের অর্থমন্দা সামাল দিয়ে দেশটি কিভাবে ইউক্রেনকে সহায়তা দেবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে ব্রিটেন একাই সঙ্কটগ্রস্ত নয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ভালো নেই পশ্চিমের বাকি দেশগুলিও। ফ্রান্সে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ইতালি রাজনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত। পপুলিস্টরা সুইডেনে আন্দোলন করছে, যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টিতে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সমর্থকদের আধিপত্য বাড়ছে। ব্রিটেনের গ্যাস এবং পাওয়ার সিস্টেম পরিচালনাকারী সংস্থা ইউরোপ জুড়ে রাশিয়ার ওপর জ¦ালানী নিষেধাজ্ঞার ফলে সম্ভাব্য ব্ল্যাকআউট সম্পর্কে সতর্ক করেছে। প্রায় প্রতিটি দেশে অর্থ মন্দার কারণে সরকাগুলির ইউক্রেনের প্রতি অবাধ সাহায্য মানুষকে নতুন সরকারের দিকে টানছে। তারা ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে একটি অন্ধকার ও বিপর্যকর শীতের মুখোমুখি। এই সমস্ত পরিস্থিতি পশ্চিম দিগন্তে এক গভীর অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করেছে। সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট, এলএ টাইম্স।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন