ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের প্রথম সপ্তাহটা মোটেই ভালো কাটেনি। ক্ষমতায় আসতে না আসতেই নিজ দল এবং বাকিদের কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। সুনাক অতীত থেকে দ্রুত শিক্ষা নিচ্ছেন বলে মনে করছেন না অনেকে। ফলে ব্রিটেনের সব থেকে ক্ষণস্থায়ী এবং সদ্য প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাসের নাটকীয় প্রস্থানের পর ব্রিটেনের এই নয়া প্রধানমন্ত্রীরও ক্ষমতায় থাকা অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।
সুনাকের প্রথম বড় ভুল সুয়েলা ব্র্যাভারম্যানকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়োগের পদক্ষেপ কয়েকদিনের মধ্যেই বুমেরাংয়ে পরিণত হয়েছে, যেটিকে লেবার নেতা কেয়ার স্টারমার একটি নোংরা চুক্তি বলে অভিহিত করেছেন। ব্রিটেনের জাতীয় নিরাপত্তা লঙ্ঘনের কারণে মন্ত্রিসভা থেকে সুয়েলা পদত্যাগের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার ঘটনায় সুনাক সম্পর্কে স্টারমার বলেন, ‘তিনি এতটাই দুর্বল যে, তিনি জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে একটি নোংরা চুক্তি করেছেন, কারণ তিনি আরেকটি নেতৃত্বের নির্বাচনে হারতে ভয় পেয়েছেন’।
ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের অভিবাসন রোধে সুয়েলার অনড় অবস্থান, তাদের অনেককে রুয়ান্ডা ফেরত পাঠানোর স্বপ্ন এবং ম্যানস্টন শরণার্থী শিবিরে আগমনকারীদের অযৌক্তিক আটকে রাখা ও নিষ্ঠুর আচরণ নীতিগত বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে, যার সমালোচনা করছেন বিরোধীদের পাশাপাশি ব্রিটেনের রেফিউজি কাউন্সিলও। সবমিলিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে পুনর্বহাল করা নিয়ে রীতিমতো চাপে রয়েছেন ব্রিটেনের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক।
কপ২৭ সম্মেলনে যোগ দিতে অস্বীকার করে সুনাক আরো বড় রাজনৈতিক এবং নৈতিক মূর্খতার পরিচয় দিয়েছেন বলে ক্ষেপেছেন অনেকে। তারা বলছেন, জো বাইডেন এবং ইমানুয়েল ম্যাখোঁকে এটা বলা ঔদ্ধত্য যে তিনি ব্যস্ত, যেন তাদের কোনো ঘরোয়া সমস্যা নেই। তিনি কপ২৬ নেতৃত্বের অবশিষ্ট সদিচ্ছাকে নষ্ট করেছেন, যা যুক্তরাজ্যের ক্ষয়প্রাপ্ত খ্যাতির একটি অবশিষ্ট অংশ এবং বরিস জনসন ও লিজ ট্রাস কর্তৃক ব্রেক্সিটের পর থেকে বিপর্যস্ত। কপ২৭ সম্মেলনে কিং চার্লসের অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করা সুনাকের আনাড়ি ব্যবহারের প্রকাশ ঘটিয়েছে। এমনকি, আবহাওয়া সঙ্কটের গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া এবং অলোক শর্মাকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা শুধু লজ্জাজনকই নয়, রাজনৈতিক আনাড়িপনাও বটে।
গত বছরের বাজেটে সুনাক ঘোষণা করেছিলেন, ‘রক্ষণশীলরাই জনসেবার আসল দল।’ কিন্তু এখন তাদের মন্ত্রীদের কঠোরতা নিয়ে সমালোচনা ও দক্ষতা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা বাজেট কাটছাঁটের ফলে শিশুদের সামাজিক শ্রেণির ব্যবধান তীব্রভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ব্রিটেনের স্বাস্থ্য এবং প্রতিরক্ষাকে সুরক্ষিত বলা হয়, কিন্তু এই শীতে খাতগুলো চালানোর জন্য অর্থনৈতিক স্থবিরতার চেয়ে অনেক বেশি কিছু প্রয়োজন। ব্রিটেনের কর্মশক্তি পরিষেবা, যা জেরেমি হান্ট প্রচার করেছিলেন, আর্থিক অনুুদান ছাড়া মুখ থুবড়ে পড়বে। অধ্যাপক জন কার্টিস বলেছেন, ঐতিহাসিকভাবে আর্থিক সঙ্কটের নেতৃত্বে থাকা কোনও সরকার ব্যালট বাক্সে টিকে থাকে না।
এখন, ১৭ নভেম্বরের বাজেটটি বলে দেবে যে, সুনাক কতদিন টিকে থাকতে পারবেন। তবে, খুব সম্ভবত সুনাকের নতুন বাজেট খুব কম লোককে খুশি করবে। সানডে টাইমস সুনাককে বিবেচক হতে বলেছে এবং সবাইকে মন্দার মধ্যে টেনে আনার ঝোঁককে প্রতিহত করতে বলেছে। সুনাকের নিজের দলেও সংসদ সদস্য শর্মা থেকে শুরু করে জ্যাকব রিস-মগ এবং রজার গেল পর্যন্ত সবাই ইতোমধ্যেই বিরোধিতা করছেন। সম্ভবত কোনো নেতাই ব্রিটেনের এই দুঃসময়ে অটল নেতৃত্ব দেখাতে পারবেন না, কিন্তু প্রথম সপ্তাহেই সুনাকের খারাপ সিদ্ধান্তগুলো আশাবাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে না। তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জনসনের ২০১৯ সালের ইশতেহার বজায় রাখার জন্য অবিলম্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যদিও তিনি নিজে পরিস্কারভাবে জানেন যে, এটা শুভঙ্করের ফাঁকি এবং সামনে মহাবিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন