আবহাওয়া পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে কারণে মধ্যপ্রাচ্যের লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়া, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সৃষ্ট খরা মধ্যপ্রাচ্যকে বিশ্বের সবচেয়ে শুষ্ক অঞ্চলে পরিণত করেছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকার জন্য বিপুল পরিমাণ মানুষকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হবে। খবর স্ট্রেইটসটাইমস। মিসরের কৃষক নেতা হুসেইন আবু সাদ্দাম এএফপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে তিনি নিজেই তার অঞ্চল থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। সাদ্দাম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় কৃষিকাজের জন্য মিসর অত্যন্ত শুষ্ক একটি দেশ। আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে দেশটির কৃষিজমিতে নতুন ধরনের পরজীবীর আক্রমণ ঘটছে। যার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা। ফলে কৃষিকাজ করে অনেকেই আর জীবনধারণ করতে পারছেন না। দেখা যাচ্ছে যে প্রত্যন্ত বা গ্রামাঞ্চলের তরুণরা কৃষিকাজে যুক্ত না হয়ে শিল্প-কারখানায় কাজের জন্য মিসরের অন্য শহরে বা অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্যানুযায়ী, বিশ্বের ৯০ শতাংশ শরণার্থী এমন সব দেশ থেকে আসে যেগুলো আবহাওয়া পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে যেসব দেশ খাপ খাইয়ে নিতে পারে না এবং এ পরিবর্তনের কারণে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। এক সাক্ষাৎকারে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ডেপুটি ডিরেক্টর অ্যামি পোপ বলেন, মানুষ যদি চাষ না করতে পারে, কাজ না করতে পারে, খাবার সংগ্রহ করতে না পারে; তাহলে বাস্তুচ্যুত হওয়া ছাড়া তাদের হাতে আর কোনো উপায় থাকে না। তিনি বলেন, ২০২১ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় ৩০ লাখ মানুষ তাদের বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দিন দিন এ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। গবেষকদের ধারণা, ২০৬০ সাল নাগাদ মিসরের কৃষি খাত ৪৭ শতাংশ সংকুচিত হবে। কায়রোর সেন্টার ফর ইকোনমিক, লিগ্যাল অ্যান্ড সোস্যাল স্টাডি ও ডকুমেন্টেশনের রিসার্চ ফেলো ফ্লোরিয়ান বোন্নেফই বলেন, কৃষি খাতে উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে পেশা পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে। পাশাপাশি শহরে উন্নত জীবনযাপনের সুবিধা ও অন্যান্য পরিষেবা পাওয়ার যে উচ্চাকাক্সক্ষা মানুষের মধ্যে রয়েছে, সেটিও বাসস্থান বা অঞ্চল ত্যাগের বিষয়টিকে প্রভাবিত করে। বিশ্বব্যাংক বলছে, এখনই কোনো পদক্ষেপ না নেয়া হলে ২০৫০ সাল নাগাদ আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে বিশ্বের ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হবে। যার মধ্যে শুধু উত্তর আফ্রিকাতেই এর পরিমাণ হবে ১ কোটি ৯৩ লাখ। ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট অব দ্য মেডিটারানিয়ানের (আইইডে) তথ্যানুসারে, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ঘনবসতিপূর্ণ উপক‚লরেখায় যে ৭ শতাংশ অধিবাসী রয়েছে তারা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ মিটারেরও কম উপরে বসবাস করে। উপক‚ল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেখানকার অধিবাসীরা স্বাভাবিকভাবেই কায়রো, আলজিয়ার্স, তিউনিস, ত্রিপোলি, দ্য কাসাবøাংকাÐরাবাত ও টাঙ্গিয়ারে স্থানান্তরিত হবে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি আর আধা মিটারও বাড়ে তাহলে মিসরীয় শহর আলেকজান্দ্রিয়ার প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে। এর ফলে প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার মানুষ কর্মসংস্থান হারাবে। অর্থনীতিবিদ আসেম আবু হাতবের তথ্যানুযায়ী, আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত অভিবাসনের প্রভাব বাড়তে থাকলে তা প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর চাপ বাড়াবে। এর ফলে অঞ্চলটিতে সামাজিক উত্তেজনা ও সংঘর্ষের হার বাড়িয়ে দেবে। এরই মধ্যে সুদানে সুপেয় পানি ও আবাসনের জন্য যে ভ‚মির প্রয়োজন সেটি নিয়ে স্থানীয়ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে প্রতি বছর কয়েকশ মানুষের মৃত্যু হয়। অক্টোবরে মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে দক্ষিণ বøু নাইল রাজ্যে সংঘর্ষে অন্তত ২০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। স্ট্রেইট টাইমস।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন