বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

গ্যাস উত্তোলনে অগ্রাধিকার দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৫ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

ইউক্রেন যুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সঙ্কট সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশও এ সংকটের বাইরে নয়। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে দিনে-রাতে গড়ে ছয়-সাত ঘন্টা লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বাসাবাড়িতে গ্যাস সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠায় অনেকে ঠিকমতো রান্না-বান্না করতে পারছে না। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটে শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে হাহাকার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেছেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ সঙ্কটে হাজার হাজার শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এতে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ বেকার হয়ে যাবে। বিশ্ববাজারে এলএনজি’র দাম বেড়ে যাওয়ায় সরকার গত কয়েক মাস ধরে আমদানি বন্ধ রেখেছে। এমতাবস্থায় গ্যাস-বিদ্যুতের সঙ্কটে জনজীবন, ব্যবসা, শিল্পোৎপাদনসহ সামগ্রিক অর্থনীতি তীব্র চাপের মধ্যে পড়েছে। শোচনীয় এ পরিস্থিতির মধ্যে কিছুটা আশা জাগাচ্ছে, ভোলার শাহবাজপুরের টবগী-১ গ্যাসকূপ। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, এ কূপ থেকে প্রতিদিন ২ কোটি ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন করা যাবে। পর্যায়ক্রমে ইলিশা-১ ও ভোলা নর্থ-২ দুটি কূপ আগামী বছর জুনের মধ্যে খনন কাজ শেষ করা যাবে। জুনের পরে কূপ দুটি থেকে ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া যাবে।

জ্বালানি সঙ্কট তীব্র হয়ে ওঠার প্রেক্ষিতে জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে সরকার গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। আমদানির দিকেই বেশি মনোযোগী হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, যদি গ্যাসকূপ খনন ও উত্তোলন অব্যাহত থাকতো, তবে বর্তমান সংকট অনেকাংশে সামাল দেয়া যেত। অভিযোগ রয়েছে, গ্যাসকূপ খনন ও উত্তোলনে সফল বাপেক্সকে অনেকটা অকার্যকর করে রাখা হয়েছে। লোকবল সংকট থেকে শুরু করে নানা কারণে সংস্থাটির কার্যক্রম নামকাওয়াস্তে হয়ে পড়েছে। অথচ এ পর্যন্ত বাপেক্স গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছে। সংস্থাটিকে যদি ধারাবাহিকভাবে কাজে লাগানো যেত, তাহলে দেশ এই বিপাকে পড়ত না। শুধু তাই নয়, ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে বাংলাদেশ যে সমুদ্রসীমা লাভ করেছে, আজ পর্যন্ত তার সুফল কাজে লাগাতে পারেনি। সাগরে অফুরান গ্যাসভাণ্ডারের কথা বলা হলেও তা অনুসন্ধান-উত্তোলনে কার্যকর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। পরিকল্পনা করা হলেও তা কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ হয়ে রয়েছে। গ্যাস অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আড়াই হাজার থেকে তিন হাজার হর্স পাওয়ারের যে রিগ প্রয়োজন, তা নেই। যে রিগ রয়েছে তার শক্তি প্রয়োজনের তুলনায় কম। অথচ সীমানা নির্ধারণের পরপরই মিয়ানমার ও ভারত তাদের সীমানায় গ্যাস অনুসন্ধান করে উত্তোলন শুরু করেছে। মিয়ানমার ব্যাপক বিনিয়োগ করে চীনে রফতানি করছে। আজ পর্যন্ত আমরা উত্তোলন দূরে থাক, অনুসন্ধানের কাজটি শুরু করতে পারিনি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। ভোলায় যে গ্যাসকূপ থেকে এখন উত্তোলন ও সরবরাহ শুরু হবে, তা অনেক আগেই করা যেত। কর্তৃপক্ষের দূরদৃষ্টির অভাবে ও গাফিলতির কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। ভোলায় পাওয়া গ্যাস আহামরি কিছু নয়। তবে তার সদ্ব্যবহার দ্রুতায়িত হলে দেশ অবশ্যই লাভবান হবে। এই মুহূর্তে গ্যাস সরবরাহের জন্য পাইপ লাইন করার প্রয়োজন নেই। এর বাইরে কীভাবে করা যায় সেটা ভাবতে হবে। এ ব্যাপারে দেশের সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে।

জ্বালানি সঙ্কট উত্তরণে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান, খনন ও উত্তোলনের বিকল্প নেই। দেশের যেখানেই গ্যাসের সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানেই পরিকল্পিতভাবে উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে। ভূভাগ ও সাগরে এ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, সমুদ্রে অফুরন্ত গ্যাসের সম্ভাবনা সত্ত্বেও কোনো পদক্ষেপ না নেয়া দুঃখজনক। চলমান এবং ভবিষ্যত সঙ্কট নিরসনে দেশে গ্যাস ও জ্বালানির নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা অপরিহার্য। জনবল বৃদ্ধিসহ আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে বাপেক্সকে অধিক কার্যকর করে তুলতে হবে। সরকারকে এক্ষেত্রে মাস্টারপ্ল্যান করতে হবে। আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশের জ্বালানি ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে হবে। যেকোনো মূল্যে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন