আগামী ২০২৩ সালকে ‘ক্রাইসিস ইয়ার’ সংকট (দুযোগ) আশঙ্কায় সবাইকে তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য ছয় নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক রিপোর্টগুলো বিশ্লেষণ করে এই নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এদিন মন্ত্রণালয় বিভাগসমূহের ২০২১-২২২ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, বৈশ্বিক যে অবস্থাটা আসছে তাতে আমাদের যে প্রবেলম বা ক্রাইসিস দেখা যাচ্ছে সারা বিশ্বে সেক্ষেত্রে আমাদেরকে কিছু ইনিশিয়েটিভ নিতে হবে। ফিনান্সিয়াল টাইমস পত্রিকার অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে ২০২৩ সালের ক্রাইসিসের বিষয়টি মন্ত্রিসভায় আলোচনা হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
‘বিশেষ করে রিসেন্টলি আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক বিশ্লেষণগুলো যা বলছে যে তিনটি কারণে ২০২৩ সাল খুবই একটা ক্রাইসিস বছর হওয়ার সম্ভাবনা। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক যেহেতু সুদের হার বৃদ্ধি করেছে, করোনা মহামারি অর্থনৈতিক অবস্থা রিকভারি হওয়ার আগেই ইক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার ফলে যে অগ্রগতি হচ্ছে তাতে নেতিবাচক প্রভাব এবং চীন উৎপাদন কমে দিয়েছে যা বিশ্ব বাজারকে প্রভাবিত করছে।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এই তিনটি জিনিষকে বিশ্লেষণ করে আন্তর্জাতিক যে বিশ্লেষণ আসছে তাতে বলা হচ্ছে ২০২৩ সাল একটা ক্রাইসিস ইয়ার হবার সম্ভাবনা আছে। সবাইকে এ অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে হবে।
২০২১-২২২ অর্থবছরের কার্যাবলি সম্পর্কিত বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের পরে মন্ত্রিসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা যে অবজারভেশন দিচ্ছেন- সর্বাবস্থাতেই আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। আমরা যতই খাদ্য আমদানির কথা বলি, এটা ক্রাইসিস থাকবে। যদিও ইউক্রেন এবং রাশিয়াকে খাদ্যের ব্যাপারে ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে, কিন্তু এটার একটা ম্যাটার করবে।
‘আর ফরেন কারেন্সির একটা ক্রাইসি হচ্ছে কারণে ফেডারেল রিজার্ভের ইন্টারেস্ট বৃদ্ধি হওয়ার ফলে যে সব দেশ লোন নিয়ে কাজ করে বা আমদানি বেশি তাদের দুই দিক দিয়েই অসুবিধা হচ্ছে। একটা হলো আমরা যখন টাকা দিদ্ছি তখন বেশি দিচ্ছি এবং যখন নিচ্ছি তখন কম পাচ্ছি। সে কারণে ডাবল নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট হচ্ছে। সেজন্য আমাদের সবাইকে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এটার সম্ভাবনাও আছে। আমরা দেখছি কৃষি, মৎস্য, লাইভস্টকে বেশিকিছু নতুন নতুন ভ্যারাইটি আসছে। এগুলেঅ রিপ্লেস করলে উৎপাদন দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে যাবে ইনশাল্লাহ।’
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের যারা বিদেশে যাচ্ছে, আমরা দেন অদক্ষ শ্রমিক না পাঠিয়ে দক্ষ জনবল পাঠাই। তাহলে তাদের জন্য উচ্চ বেতনে কাজ করার সুযোগ থাকবে। যে সব দেশে শ্রমিক পাঠানো হবে সে সব দেশে চাহিদা অনুযায়ী যেন ক্যাপাসিটি বিল্ডিং করা হয়। তাদের সনদগুলো যেন সঠিক প্রতিষ্ঠান থেকে পায়।
রেমিটেন্স বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক একটা সার্কুলার জারি করেছে যে রেমিটেন্স পাঠানোর ক্ষেত্রে কাউকে ফি দিতে হবে না। যে ব্যাংকে পাঠাবে সেই ব্যাংকই এটা হ্যান্ডেল করবে কীভাবে তাদেরকে বেনিফিট দেওয়া যায়। যারা রেমিটেন্স পাঠাবে তাদের যেন সহজ শর্তে নাম এবং এনআইডি দিয়ে পাঠানো যায় কিনা?
বিদেশি বিনিয়োগ আরও বাড়ানো নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়, বিনিয়োগের যে সব শর্ত আছে সেগুলো আরও সহজ করা যায় কিনা। আমরা কাজ করছি যে একদম বিডাতেই যাবে বিনিয়োগকারীরা। সেখানে তিন-চারটা উইন্ডো থাকবে, যাতে তাকে অন্য জায়গায় আর যেতে না হয়।
খাদ্য মজুত বাড়াতে হবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আমাদের এখন যথেষ্ট ভালো অবস্থায় আছে। বেসরকারি সেক্টরকেও ১৫ লাখ মেট্রিক টন আমদানি করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি যারা সাপ্লিমেন্টারি পণ্য আমদানি করে তাদেরকে সেই সব দেশের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে দেওয়া যায় কিনা।
খাদ্য আমদানিতে ট্যাক্স কমফোর্টের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, উৎসে কর দিতে হয়। এনবিআরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আলাপ-আলোচনা করে যেন দ্রুত সন্তোষজনক অবস্থায় চলে যায়।
অনাবাদী সব জমি চাষের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন