শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

নদী রক্ষায় বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা কাজে লাগাতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীর চারপাশের চারনদীর নাব্য ও প্রাণ ফিরিয়ে আনার ২০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্পে যুক্ত হচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক। এই প্রকল্পের মূল অর্থসহায়ক হিসেবে থাকবে প্রতিষ্ঠানটি। গত সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সাথে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয় অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্টের সাথে সাথে এক বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। বিশ্বব্যাংক ইউআইপি বা এক ছাতার নিচে বিনিয়োগের অংশ হিসেবে ঢাকার চারপাশের বুড়িগঙ্গা, বালু, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং সাভারের ধলেশ্বরী নদীর দূষণরোধ ও নাব্য ফিরিয়ে আনতে প্রযুক্তিগত সহায়তার পাশাপাশি অর্থ বিনিয়োগ করবে। নদী রক্ষা ও উদ্ধারে নেয়া এই প্রকল্প স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘ-এই তিন ধাপে বাস্তবায়ন হবে। স্বল্প মেয়াদ ২০২৫ সাল, মধ্য ২০২৬ থেকে ২০৩০ এবং দীর্ঘ ২০৩০ সালের পর। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, রাজধানীর চারপাশের নদীগুলোর বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ, অবৈধ দখল, তরল ও কঠিন বর্জ্যসহ কারখানার বিষাক্ত কেমিক্যাল সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে। নদীগুলো উদ্ধার অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া এবং চ্যালেঞ্জের বিষয়। এজন্য প্রয়োজন কঠোর সিদ্ধান্ত ও সুপরিকল্পনা। সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের নদী উদ্ধার ও রক্ষা করার অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। নেদারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, কলম্বিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নদ-নদী উদ্ধারে কাজ করেছে। বাংলাদেশ সরকার নদীগুলো উদ্ধারে মাস্টারপ্ল্যান নিলেও বিশ্ব ব্যাংক এর সাথে যুক্ত হওয়ায় এর বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে বলে আশা করা যায়।

২০১৯ সালে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের চারপাশ ও অভ্যন্তরের নদী এবং জলাধার রক্ষায় মাস্টার প্ল্যানের অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরিকল্পনার মধ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে এসব নদীর অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে প্রকল্প নেয়া হলেও তা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। বরং দিন দিন, নদীগুলো অবৈধ দখল ও দূষণে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। বুড়িগঙ্গা নদী অনেক আগেই অবৈধ দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত। অন্য নদীগুলোও একই পরিস্থিতির শিকার। বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হাজারিবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সাভারে স্থানান্তর করা হলেও তা এখন ধলেশ্বরীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছে। শীতলক্ষ্যা, তুরাগ এবং বালু নদীও মৃতপ্রায়। বহু বছর ধরে পরিবেশবিদরা নদীগুলো রক্ষার কথা বললেও তা আমলে নেয়া হয়নি। বুড়িগঙ্গায় এখন জীববৈচিত্র বলে কিছু নেই। এর নাব্য ফেরানোর জন্য ড্রেজিং করতে গিয়ে দেখা গেছে, এর তলদেশে ৬ ফুট পুরু পলিথিনের স্তর রয়েছে, যা অপসারণ এক প্রকার অসম্ভব। অথচ বলা হয়ে থাকে, ঢাকার মতো নদীবেষ্টিত এবং ভেতর দিয়ে প্রবহমান লেক ও খালসমৃদ্ধ এমন রাজধানী বিশ্বে দ্বিতীয়টি নেই। বিশ্বব্যাংকও স্বীকার করেছে, ঢাকা একটি অসাধারণ শহর, যার চারপাশে নদী রয়েছে। এই নদীগুলো উদ্ধার ও রক্ষা করে নাব্য ফিরিয়ে আনা গেলে, তা হবে বিশ্বের এক অনন্য শহর। বলার অপেক্ষা রাখে না, নদ-নদী বাংলাদেশের প্রাণ। এগুলো বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। কৃষি, যোগাযোগ ও অর্থনীতি বেগবান হবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, নদ-নদী রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদ-নদী বিলুপ্তির পথে রয়েছে। ইতোমধ্যে অসংখ্য নদী হারিয়ে গেছে। যেসব নদ-নদী রয়েছে, সেগুলো অবৈধ দখল, দূষণ ও নাব্যসংকটে বিপর্যস্ত। অথচ নদ-নদী রক্ষায় মাস্টার প্ল্যানসহ বিভিন্ন প্রকল্প রয়েছে। প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও হচ্ছে। সেসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন দৃশ্যমান নয়। বরং অভিযোগ রয়েছে, একশ্রেণীর দুর্নীতিবাজ প্রকল্পের নামে বেসুমার অর্থ লোপাট করে দিচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে অর্থের এমন লুটপাট বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, আমাদের জানা নেই।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বিশ্বব্যাংককে আহŸান জানিয়ে বলেছেন, রাজধানীর নদীগুলো রক্ষায় সহায়তা দিয়ে যাতে সে বাংলাদেশে তার নাম খোদাই করে রাখে। এক্ষেত্রে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আগে অ্যাক্টিভ হতে হবে। রাজধানীর চারপাশের নদী রক্ষায় যে মাস্টার প্ল্যান নেয়া হয়েছে, তার বাস্তবায়নের কাজ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রæত শুরু করতে হবে। নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ রোধে যেসব বাধা রয়েছে, তা রোধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করতে হবে। বিশ্বব্যাংক যে অর্থ ও প্রযুক্তি সহায়তা দেবে তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আগামী বছরের এপ্রিলে প্রথম ধাপে বিশ্বব্যাংকের সহায়তা শুরু হবে। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই যাতে দুর্নীতি ও কাজের গাফিলতি না হয়, সেজন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা বহুবার বলেছি, দেশের নদ-নদী বাঁচাতে না পারলে পরিবেশ বিপর্যয়সহ জলবায়ুর বিরূপ পরিবর্তনে ভায়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। রাজধানী বহু আগেই বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বায়ু, শব্দ ও সার্বিক পরিবেশ দূষণে এটি একটি অসুস্থ নগরীতে পরিণত হয়েছে। বায়ুদূষণে এ সপ্তাহেও বিশ্বে তৃতীয় হয়েছে। এ পরিস্থিতি কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। যেকোনো মূল্যে রাজধানীর চারপাশের নদী উদ্ধার ও দূষণ রোধ করতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
aman ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ৯:০৪ এএম says : 0
বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তা কাজে লাগালে নদী রক্ষায় অনেকটা উন্নত হবে।
Total Reply(0)
aman ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ৯:০৫ এএম says : 0
নদী দূষণ ও নদী রক্ষা না করতে পারলে দেশের নদী একটা সময় নাই হয়ে যেতে পারে।
Total Reply(0)
salman ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ৯:০৮ এএম says : 0
প্রতি বছর নদী রক্ষার নামে হাজার হাজার টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হলেও তারপরও রদী রক্ষা হয় না। বরং অর্থ লুটপাট হয়। এজন্য বিশ্ব ব্যাংক থেকে তদারকি করলে হয়তো নদী রক্ষা হতো।
Total Reply(0)
মোঃ হেদায়েত উল্লাহ ১৬ নভেম্বর, ২০২২, ১১:১০ এএম says : 0
প্রতিবেশীর পানি আগ্রাসনের শিকারের ফলে দেশের সবনদী মৃতপ্রায় এবং নদীখেকোদের জবর দখল এক চরম বিপর্যয়ে দেশ। এই অবস্থায় বিশ্বব‍্যাংকের সহযোগিতায় ঢাকার চারপাশের নদীগুলি যদি দোষন ও দখল মুক্ত করাযায় সেটা পরম স্বস্তির।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন