‘সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এক্ষেত্রে বহিঃবিশ্বের হস্তক্ষেপের কিছু নেই’ মন্তব্য করেছেন ঢাকায় কর্মরত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফা ওসমান তুরান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ করার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং সকল দলকেও এগিয়ে আসতে হবে। আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে এই আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি আরো বলেন যে, নির্বাচনে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো অংশগ্রহণ করবে এবং নিজেদের মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান করবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। গতকাল বুধবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এবং ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ‘মিট দ্য অ্যাম্বাসেডর’ সিরিজ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মূল অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফা ওসমান তুরান। অনুষ্ঠানের আলোচনা পর্বটি পরিচালনা করেছেন সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)- এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। তিন পর্বের এ অনুষ্ঠানের প্রথম অংশে ছিল রাষ্ট্রদূতের বক্তৃতা, দ্বিতীয় অংশে রাষ্ট্রদূতের সাথে একটি আলোচনা পর্ব- যেখানে সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অনুষ্ঠানের শেষ অংশে ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব, যেখানে আমন্ত্রিত সাংবাদিকরা সরাসরি রাষ্ট্রদূতের সাথে কথা বলেছেন। এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদরাও আলোচনায় অংশ নিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত মোস্তাফা ওসমান তুরান বলেন, তুরস্ক বাংলাদেশের সাথে প্রাচীন সময় থেকেই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। সম্পর্কের উত্থান পতনও রয়েছে। তিনি তার বক্তব্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোর দেয়ার মাধ্যমে তার প্রধান বক্তব্যের সূচনা করেন। তিনি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতে তুরস্ক বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেন। তিনি দুই দেশের সম্পর্কের গভীরতা তুলে ধরে ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, ভাষা প্রভৃতি সকল ক্ষেত্রে দুই দেশের বিনিময় এবং অভিন্নতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে বলেন, বাংলাদেশ-তুরস্ক ব্যবসায়িক ফোরাম গঠনের মাধ্যমে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্কে ভিন্নতা এবং অগ্রগামিতা আসবে। তিনি তুরষ্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে আসবেন বলে জানান। তিনি ঢাকা লিট ফেস্টে নোবেল বিজয়ী ওরহান পামুক আসবেন বলে আগাম সুসংবাদ দেন। এছাড়াও তিনি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংগঠনের সাথে সুসম্পর্ক তৈরির উপর গুরুত্ব আরোপ করার পরামর্শ দেন। তিনি আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী বাংলাদেশ রাজনীতি এবং অর্থনীতিতে আরো এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, বাংলাদেশ তুরস্কের নিরাপত্তা চুক্তির মাধ্যমে মানব পাচার, মাদক পাচার, জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় দুই দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হয়েছে। এছাড়াও জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত আলোচনায় বাংলাদেশের অবস্থান এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপে তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। বিনিয়োগের জন্য ফার্মাসিউটিক্যালস, আইটি ও সমরাস্ত্রকে নতুন ক্ষেত্র হিসেবে তুরস্ক দেখছে। এবং সেই সাথে অটোমোবাইল, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং এবং নির্মাণ সংস্থাগুলোর সাথে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে কাজ করবে।
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকট নিয়ে তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, তুরস্ক সরকার বাংলাদেশকে সকল প্রকার কূটনৈতিক সহায়তা প্রদান করছে। মিয়ানমারের সামরিক সরকারের সাথে এই ব্যাপারে আলোচনা করার জন্য এগিয়ে আসতে বলেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো যোগ করেন, অর্থনৈতিক ও আইনি সহায়তা প্রদানে তুরস্ক পিছপা হবে না। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে তুরস্কের অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, তুরষ্কের মধ্যস্ততার কারণেই ইউক্রেন- রাশিয়া সীমান্তে খাদ্যশস্য পরিবহণ ও বিভিন্ন দেশে তা রপ্তানি করা সম্ভব হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সিজিএস- এর চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বাংলাদেশ ও তুরস্কের পারস্পরিক সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে বলেন, তুরস্কের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনেক গভীর এবং বন্ধুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি মুঘল সময় থেকেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন। ভাষা, সাংস্কৃতিক বিষয়ে দুই দেশের মধ্যকার আদান প্রদান নিয়েও কথা বলেন। রোহিঙ্গা বিষয়েও তুরস্ক থেকে সর্ব প্রথম সহায়তা আসে বলে তিনি উল্লেখ করেন। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এবং তুরস্কের মধ্যকার এই ধরনের সাহায্য-সহযোগিতার সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হবে বলে, তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা বক্তব্যে ফ্রেডরিক-এবার্ট-স্টিফটুং (এফইএস), বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কোণ্ডঅর্ডিনেটর সাধন কুমার দাস এফইএস এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি প্রদানের মধ্য দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি তার বক্তব্যে বাংলাদেশ- তুরস্কের অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক সম্পর্ক এবং পারস্পরিক সাহায্য- সহযোগিতার নানা দিক তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মোঃ তাওহিদ হোসাইন, সাবেক রাষ্ট্রদূত ম শফিউল্লাহ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মো. ইব্রাহীম, ফাহিমা নাসরিন মুন্নি, ফায়য়াজুল হক রাজু, ড. জামাল উদ্দীন, ড. সরদার নাঈম প্রমুখ। ##
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন