পরিবার থেকে শুরু করে আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকল স্তরে গুনার সয়লাব। আমরা আমাদের কৃতকর্মের দরুন ধীরে ধীরে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্রমশই দুনিয়াবী আজাব ও গজবে নিপতিত হচ্ছি। আমরা ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবলিশের দেখানো পথে হাঁটছি। অবলিলায় গুনাহের কাজ করে যাচ্ছি, যাতে ন্যূনতম অনুতাপ-অনুসূচনাবোধ করছি না। গতকাল জুমার খুৎবাপূর্ব বয়ানে খতিব এসব কথা বলেন।
রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মুফতি মাওলানা মাহবুবুর রহমান গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য। মাখলুকের মধ্যে একমাত্র জ্বিন ও ইনসানকে ভাল-মন্দ বিচার-বিবেচনার জ্ঞান দান করেছেন যাতে আমরা ভাল জিনিস গ্রহণ ও মন্দ বিষয়সমূহ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে পারি। মানুষ না চাইতেই আল্লাহ তা’য়ালা অফুরন্ত নিয়ামত নাজিল করে আসছেন, যা পরিমাপ করা অসম্ভব। বিনিময়ে আমরা তাঁর আদেশ-নিষেধসমূহ মেনে চলবো। নিজেদের ইবলিশের পদাঙ্ক অনুসরণ তথা গুনাহের কাজ থেকে বিরত রাখবো। যাতে দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য কল্যাণ নিহিত। আল্লাহপাকের দেয়া সকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা সত্ত্বেও আমরা কি যথাযথভাবে তাঁর প্রতিদান দিচ্ছি? আমরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট ও রাজি-খুশি করার জন্য যথেষ্ট ইবাদত এবং গুনাহ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে পারছি?
নিজেদের গুনাহের হাত থেকে রক্ষার ব্যাপারে বলতে গিয়ে খতিব বলেন, পরিবার থেকে শুরু করে আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সকল স্তরে গুনার সয়লাব। আমরা আমাদের কৃতকর্মের দরুন ধীরে ধীরে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে ক্রমশই দুনিয়াবী আজাব ও গজবে নিপতিত হচ্ছি। রাসূল (সা.) এর আদর্শ ভুলে গিয়ে আমরা শয়তানের আদর্শে নিজেদের জীবন পরিচালনা করছি। খতিব বলেন, রাসূল (সা.) এর আদর্শ ছিল বিনয়ী হওয়া, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ না করা, মানুষের সাথে সদাচরণ করা, কারো দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রতিশোধ না নিয়ে বরং তাঁর বিপদে পাশে দাঁড়ানো, মুসলমানের আচরণের মাধ্যমে অন্য ধর্মাবলম্বীরা ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হবে, ইসলামের সৌন্দর্যে নিজেদের সাজিয়ে সমাজের মাঝে ইসলামকে একটি সুশৃঙ্খল ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ইত্যাদি।
কিন্তু আমরা কী করছি ? প্রায় ১৫ শত বছর পূর্বে মুসলমানের সংখ্যা কত ছিল, আর বর্তমানে কত? স্বল্পসংখ্যক মুসলমানগণ ইসলামের সোনালি যুগ প্রতিষ্ঠা করল আর আজ হাজারগুন বেশি থাকা সত্বেও আমরা কেনো পিছিয়ে আছি? কেনো বিশ্বের আনাচে-কানাচে মুসলমানগণ নির্যাতিত-নিপীড়িত? কেনো এতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মহামারি, জলোচ্ছ্বাস, দাবানলের মতো আল্লাহ প্রদত্ত গজব? এর একমাত্র কারণ আমরা ধীরে ধীরে ইসলাম থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ইবলিশের দেখানো পথে হাঁটছি। অবলীলায় গুনাহের কাজ করে যাচ্ছি, যাতে ন্যূনতম অনুতাপ-অনুসূচনাবোধ করছি না। আজ হারামকে হালাল বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। অন্যায়ভাবে অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করা হচ্ছে। বিদেশে অর্থ পাচার হচ্ছে। প্রতিযোগীতার নামে ক্রমশ প্রতিহিংসা বেড়েই চলছে। পরশ্রীকাতরতা আমাদের কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। মুসলমান নাম, বংশ ও ঐতিহ্য বহন করেও বিধর্মিদের সংস্কৃতিচর্চা করছি। তিনি সবই অবলোকন করছেন যিনি লূত (আ.) সম্প্রদায়কে জমিনে পুতে দিয়েছেন, যিনি নূহ (আ.) এর সম্প্রদায়কে বন্যার পানির সাথে বিলীন করে দিয়েছেন, যিনি ফেরাউনকে অনুসারীসহ পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন, যিনি নমরুদকে লজ্জাজনকভাবে নিশ্চিহ্ন করেছেন।
এরকম অসংখ্য অগণিত গুনাহগারকে তিনি মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস করে ফেলেছেন। সেই মহান রাব্বুল আলামীন আমাদের কৃতকর্মসমূহ দেখছেন। আর মাঝে মাঝে বিভিন্ন আজাব গজব দিয়ে সতর্ক করছেন, যাতে আমরা তাঁর দিকে ফিরে আসি। যাতে আমরা গুনাহ থেকে বিরত থাকি। মনে রাখবেন বড় কোনো গজবের পূর্বে আল্লাহ ছোট ছোট আজাব দিয়ে মানুষদের সতর্ক করেন এরপরও যখন মানুষ তার জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে সঠিক পথে আসে না, তখনই আল্লাহর ক্রোধে মহাগজবে নিপতিত হয়ে মানুষ নিঃশেষ হয়ে যায়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, আর কৃতঘ্ন হয়ো না।” (সূরা বাকারা ১৫২ আয়াত), “তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদের অবশ্যই অধিক দান করব, আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর।” (সূরা ইব্রাহীম ৭ আয়াত)।
বর্তমানে দুনিয়ার যে দিকে তাকাবেন কেবল হাহাকার, বিপদ, আজাব, গজব, অশান্তিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। মনে করবেন না এগুলো কেবল প্রাকৃতিক বিষয় বরং এসব আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তষ্টির বহিঃপ্রকাশ। যা আমাদের গুনাহের দরুন সৃষ্টি হয়েছে। এখনও সময় আছে আল্লাহর পক্ষ থেকে বড়ধরনের কোনো গজব ও আজাব আসার পূর্বেই আমাদের গুনাহ থেকে বিরত থেকে আল্লাহর নির্দেশিত পথ ও রাসূল (সা.) এর আদর্শ অনুযায়ী জীবন অতিবাহিত করা জরুরি। তাহলেই আমরা দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে সফলকাম হবো।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন জুমার বয়ানে বলেন, ১৮ হাজার মাখলুখাতের মধ্যে মানুষ হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। রাসূল (সা.) এর রেখে যাওয়া দ্বীনকে যারা মানবে তারাই হলো মোমেন। ভালো লাগুক আর না লাগুক আল্লাহর হুকুমকে মেনে চলতেই হবে। শ্রেষ্ঠ জাতি মানুষকে পরকালে সম্মানজনক পুরস্কৃত করা হবে। যারা আল্লাহর বিধান মানবে না তারা শত্রু হিসেবে গণ্য হবে। খতিব বলেন, আল্লাহ সর্বশেষ কিতাব আল কোরআন মহানবীর ওপর নাজিল করেছেন। আল্লাহ রাসূল (সা.) উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বলুন আমি তোমাদের মতো একজন মানুষ। রাসূল (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত দান করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল (সা.) গোটা মানব জাতিকে দাওয়াত দিয়ে গেছেন।
বিদায় হজের দিন তিনি আল্লাহকে সাক্ষ্য রেখে সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি কী আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পেরেছি? সকল সাহাবায়ে কেরাম একবাক্যে বলেছিলেন হ্যাঁ। তিনি কোনটা হারাম, কোনটা হালাল সব চিনিয়ে দিয়ে গেছেন। রাসূল (সা.) এর মতবাদ পরিহার করে অন্য কোনো মতবাদ গ্রহণ করা যাবে না। যে ইচ্ছাকৃতভাবে কুফরি মতবাদ গ্রহণ করবে সে জাহান্নামী হয়ে যাবে। দ্বীন না মানার কারণে নবী দোষী হবেন না। সাহাবায়ে কেরাম নবীর আদর্শকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন বলেই তারা কামিয়াবি হয়েছেন।
নবীর বাণীসমূহ মানলে পুরস্কৃত হবেন আর না মানলে জাহান্নামের কঠিন আযাব ভোগ করতে হবে। খতিব বলেন, আল্লাহ মোমেন মোমেনাতদের নফস সত্বা ও মাল জান্নাতের বিনিময় কিনে নিয়েছেন। আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন কিয়ামতের দিন চারটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেউ এক পাও নড়তে পারবে না। তোমার জীবন কী ভাবে ব্যয় করেছ ? যৌবনকাল কীভাবে অতিবাহিত করেছ? ধন-সম্পদ কীভাবে অর্জন করেছ এবং ব্যয় কীভাবে করেছ? অর্জিত জ্ঞান কীভাবে প্রতিপালন করেছ? মনে রাখতে হবে- আল্লাহ বান্দাদের পরীক্ষায় গোল্ডেন ফলাফল পাওয়ার জন্য নবীর মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন