বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

অনাবৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে ফসল

জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

নিজেদের কৃতকর্ম ও গুনাহের দরুন আজ বিভিন্ন বালা-মুসিবতে জর্জরিত। নিজেদের পাপাচার ও গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর আজাব-গজব থেকে কেউ পরিত্রাণ পাব না। আজ তাপদাহ, খড়া, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্নিঝড়, দাবানল, সাগর ও নদীর পানি হ্রাস, অতিবৃষ্টি ও অনাবৃষ্টির ফলে ফসল নষ্ট হচ্ছে, ভূমিধসে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। মনে রাখতে হবে আল্লাহ ছাড়দেন কিন্তু ছেড়ে দেন না। সময় থাকতে আমাদের উচিত ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক জীবনযাপন করা। গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুম্মার বয়ানে খতিব প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক এসব কথা বলেন। খতিব বলেন, মুসলিম উম্মাহ্র জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাতসমূহের মধ্যে লাইলাতুল বরাত অন্যতম। নিজ গুনাহ ও বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি, নেক আশা ও আকাক্সক্ষাসমূহ প্রাপ্তির এক সুবর্ণ সুযোগ আসন্ন পবিত্র শবেবরাত।

শাবান মাসের পুরোটাই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বিশেষ করে পনের তারিখের ফজিতল অপরিসীম। পবিত্র লাইলাতুল বরাতের গুরুত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে খতিব, হাদিসের উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, হযরত আয়শা সিদ্দিকা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজে দাঁড়ালেন এবং এতো দীর্ঘ সিজদা করলেন যে আমার ধারণা হলো তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম, তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল, তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করে আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘হে আয়শা! তোমার কি এ আশঙ্কা হয়েছে?’ আমি উত্তরে বললাম, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশঙ্কা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না’। নবীজি (সা.) বললেন, ‘তুমি কি জানো এটা কোন রাত?’ আমি বললাম, আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলই ভালো জানেন’। তখন নবীজি (সা.) বললেন, ‘এটা হলো অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন, ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন, অনুগ্রহপ্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন। আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের তাদের অবস্থাতেই ছেড়ে দেন’। (শুআবুল ইমান, তৃতীয় খন্ড, পৃষ্ঠা: ৩৮২)।

খতিব বলেন, সমগ্র বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা বিরাজমান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে, জলবায়ু ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটছে অহরহ। সম্প্রতি তুরস্ক ও সিরিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ ভূমিকম্পে তাদের সর্বস্ব হারিয়ে আজ নিঃস্ব প্রায়। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের সিলেট অঞ্চলেও স্বল্পমাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। এসবই আমাদের নিজেদের কর্মফল। আজ বিশ্বের যে দিকেই তাঁকাবেন গুনাহের ছড়াছড়ি। অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম, পাপাচার দৈনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভূক্ত হওয়াটা যেন স্বাভাবিক বিষয়। গুনাহের কাজকে সামাজিকতার চাদরে মুড়িয়ে নিষ্কলুষ করার অপচেষ্টা চলছে সর্বদা। যেই জমিনে আল্লাহপাক তাঁর গোলামির জন্য আমাদের প্রেরণ করলেন, সেই জমিনে আমরা দাম্ভিকতার সাথে জীবন পরিচালিত করছি। আল্লাহর দেয়া হাত, পা, চক্ষু, জিহ্বা, মেধা, জ্ঞান ও প্রজ্ঞাকে তাঁরই বিরুদ্ধে ব্যবহার করছি। হযরত লুত (আ:) এর সম্প্রদয়কে যেসকল গুনাহের জন্য জমিনের সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছিল বর্তমানে তার থেকেও বহুগুণ গুনাহ্ েআমরা লিপ্ত থাকি। হয়তো রহমাতুল্লিল আলামীন প্রিয় নবী (সা.) এর উম্মতহিসেবে আল্লাহ ছাড় দিচ্ছেন।

খতিব বলেন, আসছে পনেরই শাবান পবিত্র লাইলাতুল বরাত আল্লাহর পক্ষ থেকে আমাদের জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। তাই আসুন এ নিয়ামতকে যথাযথভাবে কাজে লাগাই। পূর্বের সব গুনাহের জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করি, নিজের মনের ইচ্ছাসমূহ ব্যক্ত করি মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট, সকল সমস্যা, বিপদ, বালা-মুছিবত, অভাব দূরীকরণের জন্য দু’হাত তুলে মোনাজাত করি, রিজিক, দৌলত, মান ও ইজ্জত বৃদ্ধির জন্য শুধু তাঁরই নিকট প্রত্যাবর্তন করি। ইবাদাত-বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে: নবীজি (সা.) এ রাতে মদিনার কবরস্থান ‘জান্নাতুল বাকি’তে এসে মৃতদের জন্য দোয়া ও ইস্তিফার করতেন। তিনি আরও বলেন, নবীজি (সা.) তাঁকে বলেছেন, এ রাতে বনি কালবের ভেড়া-বকরির পশমের (সংখ্যার পরিমাণের) চেয়েও বেশিসংখ্যক গুনাহগারকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। (তিরমিজি: ৭৩৯)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, যখন শাবানের মধ্য দিবস আসবে, তখন তোমরা রাতে নফল ইবাদত করবে ও দিনে রোজা পালন করবে। (ইবনে মাজাহ)। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ১৪ শাবান দিবাগত রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাত ইবাদত-বন্দেগিতে কাটাও এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা, এদিন সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার আসমানে নেমে আসেন এবং আহ্বান করেন, ‘কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছো কি? আমি ক্ষমা করব; কোনো রিজিক প্রার্থী আছ কি? আমি রিজিক দেব; আছ কি কোনো বিপদগ্রস্থ? আমি উদ্ধার করব’। এভাবে ভোর পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে আহ্বান করতে থাকেন। (ইবনে মাজাহ: ১৩৮৪)। পরিশেষে খতিব সাহেব বলেন, এরাতে নিজেদের পাপ মোচন ও পরবর্তী সময়ে সকল বালা-মুসিবত মুক্ত থেকে আল্লাহর রহমতের চাদরে আবৃত থাকতে পারি ইবাদাতের মাধ্যমে সে চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। তাহলেই দেখবেন ব্যক্তি, সামাজিক, রাষ্ট্রিয় ও আন্তর্জাতিক সকল সমস্যা, বালা-মুসিবত, আজাব ও গজব থেকে পরিত্রাণ পেয়ে সুখি ও সমৃদ্ধ জীবন দান করবেন মহান রাব্বুল আলামিন। মনে রাখবেন, মুসলমানগণ দুনিয়ার কোনো মানুষের নিকট সাহায্য চাইতে পারে না, বরং সকল প্রার্থনা হবে পরাক্রমশালী, সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে। আল্লাহ সবাইকে সহি বুঝ দান করুন, আমিন।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন গতকাল জুমার বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ অত্যন্ত ভালোবেসে আমাদের মোমেন বানিয়েছেন। ইসলামই পুর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আল্লাহর হুকুম মেনে চললে তিনি রহমতের দরজা খুলে দিবেন। খতিব বলেন, প্রাণের প্রধান উৎস হচ্ছে সুপেয় পানি। আল্লাহ তার কুদরতের মাধ্যমে যখন যেখানে প্রয়োজন বৃষ্টির মাধ্যমে পানি দান করেন। তিনি বলেন, নবী (সা.)-এর সুন্নাহ মোতাবেক জীবনযাপন করতে হবে। হালাল উপার্জনের জন্য জমিনে ছড়িয়ে পড়তে হবে। খতিব আসন্ন রমজানের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, সিন্ডিকেট করে অতিমুনাফার ব্যবসাকে ইসলাম নিষিদ্ধ করেছে। রমজান এলেই জনগণকে জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে মানুষকে কষ্ট দেয়া যাবে না। খতিব আল্লাহর প্রকৃত গোলাম হওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে মানুষের কল্যাণে কাজ করার অনুরোধ জানান।

মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, হিজরী বছরের গুরুত্বপূর্ণ মাস শাবান শুরু হয়েছে। শাবানের শুরুতেই শাবানের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্য সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। ভোরের কুয়াশা যেমনিভাবে শীতের আগমনী বার্তা দেয় ঠিক তেমনই শাবান মাস রমজানের আগমনী বার্তা দেয়। মহিমান্বিত শাবান মাস রমজানের আগাম প্রস্তুতির তাগিদ নিয়ে আসে। এ মাসকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবানু শাহরি অর্থাৎ শাবান আমার মাস নামে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি রজব ও শাবানজুড়েই রমজানের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকতেন। তবে শাবান শুরু হলে রমজানের জন্য ব্যাকুল হয়ে দিনক্ষণ গণনা করতেন। উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রা.) বলেন, নবী কারীম (সা.) শাবানের দিন-তারিখের হিসেবের প্রতি এতো অধিক লক্ষ্য রাখতেন, যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না। (সুনান আবু দাউদ: ২৩২৫)। তিনি এ মাসে রমজানের প্রাক প্রস্তুতিমূলক অধিক পরিমাণে নফল রোজা রাখতেন। হযরত উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) কে শাবান ও রমজান ছাড়া অন্য কোনো দুইমাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি। (সুনান আবু দাউদ: ২৩৩৬)। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি নবীজি (সা.) কে শাবান মাসের মতো এতো অধিক (নফল) রোজা রাখতে অন্য কোনো মাসে দেখিনি। এ মাসের কয়েকদিন ছাড়া সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন। (সুনান তিরমিজি: ৭৩৭)। অতএব মুমিনের উচিত রজব মাসে ইবাদতের মাধ্যমে হৃদয় জমিন কর্ষণ করে শাবান মাসে আরও বেশি ইবাদতের মাধ্যমে সেই জমিতে বীজ বপন করা এবং রমজানে সর্বাধিক ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে সফলতার ফসল ঘরে তোলা।

খতিব আরও বলেন, শাবান মাস কিবলা পরিবর্তনের মাস। আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়ার সূত্র মতে, হিজরতের ১৮ মাসের মাথায় শাবানের মধ্যভাগে কিবলা পরিবর্তন হয়। এ মাস বিশ্বনবীর (সা.) প্রতি অগাধ ভক্তি, প্রেম-ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাস। কারণ এ মাসেই দুরুদ পাঠের বিধান সম্বলিত সূরা আহযাবের ৫৬ নং আয়াত অবতীর্ণ হয়। সুতরাং শরীয়ত নির্দেশিত পন্থায় বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করাও এ মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাতকে আমরা ‘শবে বরাত’ বলি। এটি ফারসি শব্দ। শব মানে রাত, বারাআত মানে মুক্তি। শবে বরাত অর্থ মুক্তির রাত। শবে বরাতের আরবি হলো ‘লাইলাতুল বারাআত’ তথা মুক্তির রজনী। হাদীস শরীফে যাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা শাবানের মধ্য রজনী বলা হয়েছে। এ রাতে ইবাদত করা ও পরের দিন রোজা রাখা সুন্নত। হযরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শাবান মাসের মধ্যরাত্রিতে মহান আল্লাহ তার রহমতের ভাণ্ডার নিয়ে সব সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ওই রাতে মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সবাইকেই ক্ষমা করে দেন। (তবারানী)। নবীজি (সা.) আরও বলেছেন, শাবান হচ্ছে আমার মাস। যে কেউ এ মাসে আমাকে সাহায্য করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর বিশেষ রহমত ও বরকত নাযিল করবেন। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সাহায্য করা বলে তার সুন্নতের ওপর আমল করাকেই বুঝানো হয়েছে। তাই যাদের গাফিলতি আছে তারা সর্বদা সুন্নতের ওপর চলার ফিকির ও আমল এ মাসেই শুরু করে দেই। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বেশি বেশি আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন