মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতী আবদুল্লাহ ফিরোজী গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, হু হু করে বাড়ছে শীতের প্রকোপ। চলমান শীত মৌসুম অনেকের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দরিদ্র ও ছিন্নমূল জনগোষ্ঠী তীব্র এই শীতে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করছেন। খোলা আকাশের নিচে বাস্তুহারা মানুষগুলো খড়কুটা জ্বালিয়ে শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সামনে প্রচÐ শৈত্য প্রবাহের আশঙ্কা থাকায় শীতকেন্দ্রিক দুর্ভোগ আরো বাড়তে পারে। এমতাবস্থায় সমাজের বিত্তবান ও মানবিক গুণসম্পন্ন ব্যক্তিদের দায়িত্ব হচ্ছে অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো।
ইসলাম মানবীয় গুণাবলীর ক্ষেত্রে পরোপকার ও জনকল্যাণমূলক কাজকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ আখ্যা দিয়ে -এর প্রতি উৎসাহ দিয়েছে। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘সূরা কসাস’ -এর ৭৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, তোমরা মানুষের প্রতি তেমন অনুগ্রহ করে (সাদক্বাহ বা যে কোনো উপায়ে) যেমন আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব একটি মুসিবত দূর করবে, আল্লাহ তা’য়ালা কিয়ামতের দিন তার মুসিবতসমূহ দূর করে দিবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবী মানুষকে সচ্ছল করে দিবে, রব্বে কারীম তাকে ইহকাল ও পরকালে সচ্ছল করে দিবেন এবং আল্লাহ বান্দার সাহায্য করবেন যদি বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে’। (সহীহ মুসলিম)।
খতীব আরো বলেন, অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো নববী আদর্শ। কারণ, খেদমতে খালক্ব বা সৃষ্টির সেবা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান ও ইবাদত। এ ব্যাপারে ত্রæটি হলে কেয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। প্রশ্ন করা হবে বস্ত্রহীনদের বস্ত্রদান ও ক্ষুধার্তদের খাদ্যদান সম্পর্কে। বস্ত্রদানের প্রয়োজনীয়তা ও ফজীলত সম্পর্কে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, “কোনো মুসলমান অন্য মুসলমানকে কাপড় দান করলে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জান্নাতের পোশাক দান করবেন।ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করলে আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জান্নাতের সুস্বাদু ফল দান করবেন। কোনো তৃষ্ণার্ত মুসলমানকে পানি পান করালে মহান আল্লাহ তা’য়ালা তাকে জান্নাতের সিলমোহরকৃত পাত্র থেকে পবিত্র পানীয় পান করাবেন”। (সুনান আবু দাউদ)। আসুন, দলমত নির্বিশেষে আমরা অসহায় শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই। মহান আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন।
রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর রহমতিয়া জামে মসজিদের খতিব মুফতি সুলতান মহিউদ্দীন জুমার বয়ানে বলেছেন, নৈতিকতার অভাবে সমাজের সর্বস্তরে অপরাধ প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলছে। শিক্ষিত হওয়ার পরও অনেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। কেননা পুঁথিগত শিক্ষার মাধ্যমে তার ভেতরে আল্লাহর ভয় পয়দা হয় না।
ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা সৃষ্টি হয়, অন্তরে আল্লাহর ভয় সৃষ্টি হয়। যখন মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয় পয়দা হয়, তখন সমাজে দুর্নীতি, মাদক, ধর্ষণ, ছিনতাই, খুন-গুমসহ সকল অনৈতিক কার্যকলাপ সংগঠিত হয় না ।
মুফতি সুলতান মহিউদ্দিন আরো বলেন, ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে মানুষ নানা ধরনের অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ধর্মীয় জ্ঞান না থাকায় তরুণ প্রজন্ম বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অনৈতিক কার্যকলাপ থেকে আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে হলে শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের আবহাওয়া আল্লাহপাকের বিশেষ নেয়ামত উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শীত যত তীব্রই হোক না কেন আল্লাহর হুকুম নামাজ ছাড়া যাবে না। আল্লাহপাকের কাছে গ্রীষ্মকালের রোজা এবং শীতকালের অজু অনেক পছন্দনীয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন