পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুত্তাকিন- নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন (সূরা তাওবা, আয়াত :৪)। এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং মনে রেখো নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে আছেন (সূরা বাকারা, আয়াত :১৯৪)। গতকাল জুমার-খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতিব মাওলানা কবি রুহুল আমীন খান জুমার বয়ানে বলেন, দুর্নীতি-দুষ্কৃতিমুক্ত, শান্তি-কল্যাণের আদর্শ সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে আদর্শ মানুষ গড়তে হবে। আসমান থেকে ফেরেশতা নাযিল হয়ে আদর্শ মানুষ গড়ে দিয়ে যাবে না। আমাদেরই সেজন্য উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের নবী, আল্লাহর হাবিব হযরত মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন সর্বকালের সর্বযুগের বিশ্বমানবের জন্যে সর্বোত্তম আদর্শ। তার অনুকরণ ও অনুসরণ ইত্তেবা ও পায়রবির মধ্য দিয়ে গড়ে উঠতে পারে আদর্শ মানুষ, আদর্শ পরিবার, আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র। তিনি তার অনুসারীদের তাকওয়া গুণে ভূষিত করেছিলেন। আল্লাহর ভয় ও মহব্বতে তাদের হৃদয়ে উদ্ভাসিত করে তুলেছিলেন। এরই নাম তাকওয়া। ব্যক্তির মধ্যে এই তাকওয়া গুণ সৃষ্টি হলে সে হয়ে যায় আদর্শ মানুষ। ব্যক্তি নিয়েই পরিবার, পরিবার নিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র।
ব্যক্তিবর্গ আদর্শবান হলে তাদের দ্বারাই আদর্শ সমাজ ও রাষ্ট্র কায়েম হবে। মানব জীবনে তাকওয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করো ( সূরা আল ইমরান : ১০২ আয়াত)। রাসূলেপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের সময় যে আরবীয় জনগণ ছিল মদ্যপায়ী, মাতলামি, উশৃঙ্খলতা ও পাপাচারে লিপ্ত। পরে ইসলাম গ্রহণ করে তাকওয়া গুণে ভূষিত হয়ে তারাই পরিণত হল সর্বকালের সেরা মানুষে। মানুষের অন্তরে যদি এ বিশ্বাস সুদৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, এই পার্থিব জীবনই একমাত্র জীবন নয়; মরণেই শেষ হয়ে যাবে না জিন্দেগীর সফর। মরণের পর শুরু হবে আরেক জীবন। কবরের পরে উঠবে হাশরে। সেখানে বিচারক হয়ে বসবেন আল্লাহপাক বিচার আসনে। দাঁড়াতে হবে তার সামনে হিসাব দেয়ার জন্য। তিনি হিসাব নিবেন জাররা জাররা করে (অনু-পরমানু বরাবর)। সেখানে ফেল করলে যেতে হবে জাহান্নামে।
এর থেকে নিস্তার পাওয়ার সুযোগ নাই, ফাঁকি দেয়ার কোনো উপায় নেই। আর পাস করলে প্রবেশ করতে পারবে অনন্ত সুখের জান্নাতে। পরকালের সেই জীবনই আসল জীবন। সেখানে জড়া নেই, মৃত্যু নেই অশেষ অনন্ত জীবনে থাকবে কেবল সুখ আর সুখ। এটাই প্রকৃত জীবনদর্শন, এটাই মহাসত্য। অন্তরে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেলে সে হবে মুত্তাকি। পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, ইন্নাল্লাহা ইউহিব্বুল মুত্তাকিনÑ নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের ভালোবাসেন (সূরা তাওবা, আয়াত :৪)। এবং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং মনে রেখো নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকিদের সাথে আছেন (সূরা বাকারা, আয়াত :১৯৪)। আর যে ব্যক্তি তার প্রতিপালকের সামনে উপস্থিত হওয়ার ভয় রাখে এবং নিজেকে কু-প্রবৃত্তি থেকে ফিরিয়ে রাখে, নিশ্চয়ই জান্নাত হবে তার আবাসস্থল (সূরা নাযিয়াত, আয়াত: ৪০-৪১ )। অন্যত্র আল্লাহপাক বলেন মুত্তাকিরা থাকবে নিরাপদ স্থানে (সূরা দুখান, আয়াত: ৫১ )। তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত, যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকি (সূরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩ )। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, তাকওয়ার হক কি? এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, কতাদা, হাসান বসরী (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে, তাকওয়ার হক হলো, প্রত্যেক কাজে আল্লাহর আনুগত্য করা, তার আনুগত্যের বিপরীতে কোনো কাজ না করা, আল্লাহকে সর্বদা স্মরণে রাখা কখনো বিস্মৃত না হওয়া এবং সর্বদা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, অকৃতজ্ঞ না হওয়া।
আমাদের সকলকেই এ ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহর ভয় এবং পরকালে তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে জবাবদিহিতার চিন্তা সর্বদা জাগ্রত থাকলে সে ব্যক্তি জীবন-যাপনের ধরন-ধারণ সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে। শয়তানের ধোঁকায়, প্রবৃত্তির তাড়নায় ও পরিবেশের মন্দ প্রভাবে যদি নাফরমানী হয়েও যায় চেতনা ফিরে আসা মাত্রই তাওবা করে তাকওয়া ওয়ালা হওয়ার সাধনায় নিমগ্ন হতে হবে। পদস্খলন তো হতেই পারে। সাহাবায়ে কেরামদের কারো কারো এমনটি হয়েছে, তবে তারা চেতনা ফিরে পাওয়া মাত্র তাওবা করে আরো বেশি মুত্তাকি হওয়ার সাধনায় আত্মনিয়োগ করেছেন। তাদের কেউ কেউ তো কোনো সাক্ষী-প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রাসূলে পাক (সা.) এর কাছে ছুঁটে গিয়েছেন। অকপটে নিজের পাপের কথা নিজ মুখে বলে এর যে দণ্ড হয় তা তার উপর কার্যকর করার জন্য, প্রয়োগ করার জন্য নবীজি (সা.) নিকট আবেদন করেছেন। এবং সেই দণ্ড প্রয়োগ করা হয়েছে। তাতে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। এ হলো তাকওয়ার ফলশ্রুতি। আমাদের কর্তব্য নিজেদেরকে তাকওয়া গুণে ভূষিত করা এবং অন্যাদেরকেও এ ব্যাপারে উৎসাহিত করা। আল্লাহ সবাইকে দ্বীনের ছহি বুঝ দান করুন। আমিন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন জুমার বয়ানে বলেছেন, সৎ ও ভালো কাজের মন-মানসিকতা তৈরি করতে হবে। একজন মোমেনের চিন্তা ফিকির থাকবে সৎভাবে ব্যবসায় এবং স্ব-স্ব দায়িত্ব পালনে সদাজাগ্রত থাকা। খতিব বলেন, হিসাবের দিন হলো আসল কিয়ামত। আর ছোট কিয়ামত হচ্ছে মৃত্যু। ছোট কিয়ামত কবে কখন হবে, তা মহান আল্লাহ গোপন রেখেছেন। তিনি বলেন, একমাত্র রবই সমস্ত লালন-পালন কর্তা। মায়ের গর্ভেও আমাদের লালন-পালন করেছেন এবং পরকালের জিন্দেগিতে নেক্কার বান্দাদের লালন-পালন করবেন। সন্তান যদি নেক্কার হয় তাহলে জান্নাতে মা-বাবার কাছাকাছি থাকার সুযোগ পাবেন। খতিব বলেন, রাসূল (সা.) এর কাছে একজন সাহাবা (রাদি.) জিজ্ঞেস করেন কিয়ামত কবে হবে? রাসূল (সা.) বলেছিলেন, তুমি কিয়ামতের প্রস্তুতি কতটুকু নিয়েছ? নেক্কার বান্দাদের প্রসঙ্গে খতিব বলেন, মৃত্যু বাধ্যতামূলক। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। জান্নাতের দৃশ্য দেখতে দেখতে নেক্কার বান্দাদের মৃত্যু হবে।
মৃত্যুযন্ত্রণা টেরও পাবেন না তারা। কবরে শান্তির ফয়সা হলে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া হবে নেক্কার বান্দাদের। খতিব বলেন, রাসূল (সা.) যে পদ্ধতি ইবাদত বন্দেগী করতে শিখিয়েছেন সেভাবেই ইবাদতে মশগুল হতে হবে। যারা রাসূল (সা.) দেখানো মতে ইবাদত বন্দেগী করবেন তারা আল্লাহর ওলী হয়ে যাবেন। তাদের কোনো ভয় নেই। তিনি বলেন, স্বামী-স্ত্রী উভয় ডাক্তার হয়েও তারা প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেন। এতে বুঝ থেকে ১০০% বিশ্বাস রাখতে হবে ভালো-মন্দের একমাত্র মালিক আল্লাহ। যারা আল্লাহর ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রাখবে না তারা পথভ্রষ্ট বিপদগামী। এদের অনুসরণ করলে ঈমান ধ্বংস হয়ে যাবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন