শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

স্মৃতিসৌধে মানুষের ঢল

প্রকাশের সময় : ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:২০ এএম, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : হাতে লাল সবুজের পতাকা আর রঙ-বেরঙের ফুল, হৃদয়ে গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা নিয়ে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিলো সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে। বিজয়ের ৪৫ বছর পূর্তিতে আনন্দ-উদ্বেল জাতি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় স্মরণ করলো বীর শহীদদের। সর্বস্তরের মানুষের ফুলের ভালবাসায় সিক্ত হলেন জাতির শ্রেষ্ঠ সৈনিকরা।
সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও এর পর পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই মুক্তিসেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যারা প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল সালাম জানায়। তখন শহীদদের স্মরণে বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। জাতির যে বীর সন্তানদের আত্মত্যাগে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম, কিছুটা সময় নীরবে দাঁড়িয়ে একাত্তরের সেই শহীদদের স্মরণ করেন প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী। পরে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসাবে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে আবারো ফুল দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এরপরে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, ১৪ দল, তিন বাহিনীর প্রধান, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিচারপতি, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকবৃন্দ, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় সেনাবাহিনীর আমন্ত্রিত সদস্যবৃন্দ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর জাতীয় স্মৃতিসৌধ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। পরে লাল সবুজের পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।
বেলা ১১টার দিকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এসময় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, ড. মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ও ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ডা. দেওয়ান সালাহউদ্দিন বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিএনপির অঙ্গ-সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল, মহিলাদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
স্মৃতিসৌধ ত্যাগ করার সময় বেগম খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সাথে কোন কথা না বললেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় মানুষ তার অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। এতে জাতি বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ভোটের অধিকার হারিয়েছে। এমন একটা অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের বীর যারা ছিলেন তারাও আজ অবহেলিত। কোনো রাষ্ট্রীয় প্রোগ্রামে ডাকা হয় না। কারণ তারা বিরোধী মত পোষণ করেন। গোটা জাতি আজ বিভক্ত হয়ে পড়েছে। দুর্ভাগ্য আমাদের, জাতির ঐক্য হরণ করে নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে দর্শনার্থীদের ভিড়ও বাড়তে থাকে।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পু®পস্তবক অর্পণ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-শিক্ষার্থী, সরকারি কর্ম কমিশন, পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের কর্মকর্তাগণ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম দল, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেডিসি), সোনালী ব্যাংক, সচেতন নাগরিক কমিটি, বিআইডব্লিউটিসি ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন, আরকাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তর, বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র, গণ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পশু সম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিএলআরআই), বাংলাদেশ লোক-প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি), বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা চিকিৎসক পরিষদ, বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা জাতীয় যুব কেন্দ্র, সাভার প্রেসক্লাব, আশুলিয়া প্রেসক্লাব, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমী, নজরুল ইন্সটিটিউট, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ), কর্মজীবী নারী, বাংলাদেশ তৃণমূল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাবি কর্মচারী সমিতি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, টেকনিক্যাল এমপ্লয়ীজ এসোসিয়েশন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, গণফোরাম, বিমান শ্রমিক লীগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
প্রসঙ্গত; ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী গণহত্যা চালানোর পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর রমনার রেসকোর্স ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও যুদ্ধে সক্রিয় সহায়তাকারী ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী। আর এর মধ্য দিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করার দিনটি প্রতি বছর উদযাপিত হয়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (4)
চাঁদনী ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৩৬ এএম says : 0
স্বাধীনতার পুর্ণ সুফল পেতে চাই।
Total Reply(0)
সফিক ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০০ পিএম says : 0
বীর সন্তানরা দেশ স্বাধীন করে তাদের দ্বায়িত্ব পালন করেছে। এবার আমাদের পালা ...............
Total Reply(0)
মুরসালিন ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০২ পিএম says : 0
স্বাধীণতা যুদ্ধে জীবন দানকারী সকলের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি।
Total Reply(0)
Farjana ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৬, ২:০৪ পিএম says : 0
amader ke sokol onnayer protibad korte hobe
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন