গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর প্রধান ঘাঁটি রাওয়ালপিন্ডিতে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরানের খানের এক সমাবেশে কয়েক হাজার মানুষ ভিড় করে। সেখানে বুলেটের আঘাতে আহত হয়ে বসে থাকা অবস্থায় তিনি বজ্রকণ্ঠে বলেছেন, 'আমি আমার জীবনের চেয়ে পাকিস্তানের স্বাধীনতা নিয়ে বেশি চিন্তিত।' ইমরানের প্রতিটা সমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম বলে দিচ্ছে যে, পাকিস্তানের মানুষ এখন আর সেনাহস্তক্ষেপ চায় না। যদিও জেনারেল বাজওয়া বর্তমান আইএসআই প্রধান এবং অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্ররোচিত করে ইমরানকে জব্দ করার চেষ্টা করছেন। তবে, এটি ক্রমেই ইমরানের জনপ্রিয়তা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে, যা সেনাবাহিনীর মধ্যেও মাথাব্যাথার বিস্তার ঘটিয়েছে। ফলে, এটি পাকিস্তানের নয়া সেনা প্রধানের জন্য সবচেয়ে বড় অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
জেনারেল আসিম মুনির, যিনি পাকিস্তানের শক্তিশালী গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রধান ছিলেন, বর্তমানে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠানের এবং তথাকথিত পাকিস্তানি গণতন্ত্র পরিচালনা করার প্রধান ব্যাক্তি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। দেশটির প্রধানমন্ত্রীরা সেনাপ্রধানদের নিয়োগ করে থাকেন এবং প্রায়শই তারা নিয়োগকারীকে পদচ্যুত করে সেই অনুগ্রহ ফিরিয়ে দেন। এটাই প্রধান কারণ যে, পাকিস্তানের ২২ জন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কেউই পূর্ণ মেয়াদে শাসন করতে পারেননি, এবং এটি পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের চেয়ে ভাল কেউ জানেন না। শাহবাজের বড় ভাই তিনবারের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ১৯৯৮ সালে পারভেজ মোশাররফকে সেনাপ্রধান নিযুক্ত করেছিলেন, তারপর একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পারভেজ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ২০১৬ সালে নওয়াজ জেনারেল বাজওয়াকে নিযুক্ত করেছিলেন এবং সেনাপ্রধানের নির্দেশে সুপ্রিম কোর্ট নওয়াজের গদি কেড়ে নিয়েছে এবং আজীবনের জন্য রাজনীতি থেকে নিষিদ্ধ করেছে।
শাহবাজ শরীফ যদি এখনও জেনারেল মুনিরের কৃপায় ক্ষমতায় থেকে থাকেন, এর কারণ হতে পারে তার পূর্বসূরি ইমরান খান, যাকে জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া ক্ষমতায় আরোহনে সহায়তা করেছিলেন। ইমরান এপ্রিলে অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন, যেখানে আবারও সেনাপ্রধানের হস্তক্ষেপ ছিল। পাকিস্তানের জনপ্রিয় নেতা ইমরান অবিলম্বে জেনারেল বাজওয়াকে তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আঁতাত করে ষড়যন্ত্র করার জন্য অভিযুক্ত করেন। ইমরানের দল উপ-নির্বাচনে ব্যাপকভাবে জয়লাভ করার জেরে গত মাসে তাকে হত্যা প্রচেষ্টার জন্য একজন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লাহ খানকে অভিযুক্ত করেছেন।
ইমরান একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চেয়েছেন এবং এই বিষয়ে চাপ তৈরির জন্য তিনি তার দরের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল পাঞ্জাব এবং খাইবার-পাখতুনখোয়ার বিধানসভা ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া শাহবাজের এখতিয়ার এবং তিনি আগস্টে এর মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। নয়া সেনাপ্রধানের নৈতিক দায়িত্ব সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সমর্থন করার। এদিকে, পাকিস্তানি তালেবানরা যুদ্ধবিরতি ত্যাগ করেছে। আফগান তালেবানদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের সম্পর্ক এখন খারাপ। বন্ড তার মার্কেটে খেলাপি হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে মাত্র এক মাসের আমদানি সম্পন্ন করার জন্য। এবং করোনা মহামারীর ধাক্কা, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বন্যায় জর্জরিত পাকিস্তানের অর্থনীতি কোনও অতিরিক্ত চাপ বহন করতে সক্ষম নয়। অতীতের সেনাপ্রধানরা হয়তো ভেবেছিলেন যে, এই ধরনের ভয়ানক পরিস্থিতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আদতে জেনারেল মুনিরকে পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট হিমশিম খেতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন