পাবলিক পরীক্ষাসহ শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও ডারউইনের বিবর্তনবাদ সকল সিলেবাস থেকে বাদ দেয়ার দাবিতে গতকাল রোববার ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। দলের আমীর পীর সাহেব চরমোনাই’র গত ২২ নভেম্বর ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশে জেলায় জেলায় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ এবং জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি কর্মসূচি পালিত হয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা জেলা শাখার উদ্যোগে রোববার বেলা ১১টায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের চত্বরে আয়োজিত স্মারকলিপি প্রদান-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে জনগণের কাছে কোনো দায়বদ্ধতাও নেই। সরকারের হাতে ধর্মীয় শিক্ষা ইসলামী সংস্কৃতি, অর্থনীতি, ভোটাধিকার ও দেশের স্বাধীনতা কোন কিছুই নিরাপদ নয়।
সংগঠনের ঢাকা জেলা দক্ষিণ সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে অন্যানের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ূম, মাওলানা লোকমান হোসাইন জাফরী, বক্তব্য রাখেন ঢাকা জেলা উত্তর সভাপতি হাজী ফারুক খান, ঢাকা জেলা দক্ষিণ সহ-সভাপতি হাফেজ জয়নুল আবেদীন, সেক্রেটারী হাফেজ মাওলানা জহিরুল ইসলাম, ঢাকা জেলা উত্তর সেক্রেটারী মুহাম্মদ হাসমত আলী ও ডা. মো. কামরুজ্জামান।
এছাড়া ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে যেসব জেলায় একযোগে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে সেগুলোর
মধ্যে রয়েছে, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, নেত্রকোনা, জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভিবাজার, সুনামগঞ্জ, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, রংপুর, পঞ্চগড়, চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, রাঙামাটি, কক্সবাজার, পিরোজপুর, বরিশাল, ভোলা, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখাল, বগুড়া, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, পাবনা, নওগাঁ , নাটোর, রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ,বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, ঝিনাইদহ, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইল, মেহেরপুর, মাগুরা, কুষ্টিয়া জেলা। এসব জেলায় স্মারকলিপি পেশের পাশাপাশি পৃথকভাবে বিক্ষোভ মিছিলও হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের নিকট প্রদানকৃত স্মারকলিপিতে ১০ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হচ্ছে- শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়নে অভিজ্ঞ, দ্বীনদার আলেমদেরকে সম্পৃক্ত করা, শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক ও সকল পরীক্ষায় আবশ্যিক করা, ডারউইনের অপ্রমাণিত, ভ্রান্ত ও বিতর্কিত বিবর্তনবাদ শিক্ষার সকল স্তর থেকে বাদ দেওয়া, পাঠ্য পুস্তকের সকল বিষয় হতে অনৈসলামিক ও ইসলামী বিশ্বাসবিরোধী বিষয় ও শব্দসমূহ বাদ দেওয়া, ইসলাম ধর্ম শিক্ষার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে ‘কোরআনুল কারীম’ শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা, মাদরাসা শিক্ষার কারিকুলাম, শিক্ষা নীতিমালা-২০১০ অনুযায়ী মাদরাসা সংশ্লিষ্ট আলেম, দ্বীনদার শিক্ষকদের দ্বারা পুনর্মাজন করা, নৈতিকতাসমৃদ্ধ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে সকল ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের জন্য নিজ নিজ ধর্মীয় শিক্ষার ব্যবস্থা করা। বাংলা, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান ও ইতিহাস বই হতে বিতর্কিত ও ইসলামী আকিদাবিরোধী প্রবন্ধসমূহ বাদ দেওয়া, স্কুল ও মাদরাসার সকল পাঠ্যপুস্তক অপ্রয়োজনীয় এবং অশ্লীল চিত্রমুক্ত রাখা এবং যেহেতু এদেশের সাধারণ জনগণই এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যয়ভারের সিংহভাগ বহন করেন, সেহেতু জোর করে চাপিয়ে দেয়া শিক্ষা ব্যবস্থা নয় বরং এদেশবাসীর ধর্মীয় চেতনার অনুকুল শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা।
এদিকে খুলনা ব্যুরো জানায়, পাবলিক পরীক্ষায় ধর্ম শিক্ষা পূর্বের ন্যায় বহাল, শিক্ষার সবস্তরে ধর্ম শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মিছিলসহ খুলনা জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর ও জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ শেষ করে জেলা প্রশাসক অভিমুখে মোটরসাইকেল মিছিল নিয়ে রওয়ানা হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ খুলনা মহানগর সেক্রেটারী শেখ মো. নাসির উদ্দিন ও জেলা সেক্রেটারী হাফেজ আসাদুল্লাহ আল গালিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ১০ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি খুলনা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মুকুল কুমার মৈত্রের নিকট প্রদান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর জয়েন্ট সেক্রেটারী মাও. ইমরান হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাও. দ্বীন ইসলাম, জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শায়খুল ইসলাম বিন হাসান, মো. সাইফুল ইসলাম, মাও. মাহবুবুল আলম, প্রচার ও দাওয়াহ্ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান, গাজী ফেরদাউস সুমন, মোল্লা রবিউল ইসলাম তুষার, মুফতী আমিরুল ইসলাম, মাও. শায়খুল ইসলাম, প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
বগুড়া ব্যুরো জানায়, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ বগুড়া জেলা শাখার উদ্যোগে স্থানীয় ফতেহ আলী মোড়ে এক গণজমায়েত ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। সংগঠনের বগুড়া জেলা সভাপতি আ. ন. ম. মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সংগঠেেনর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা মো. আব্দুল হক আজাদ।
প্রধান অতিথি বলেন, সরকার তার নির্বাচনী ইস্তেহারে উল্লেখ করেছিল তারা ক্ষমতায় গেলে ইসলাম বিরোধী কোন কার্যকলাপ করবে না এবং মদীনা সনদের আলোকে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকার শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে ইসলাম ধর্ম শিক্ষা বাদ দিয়ে নাস্তিক্যতাবাদী শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে জাতিকে নাস্তিক বানানোর পাঁয়তারা করছে। একটি ৯০ শতাংশ মুসলিম প্রধান দেশে এ ধরনের নাস্তিক্যতাবাদী শিক্ষানীতি বাতিলের জোড় দাবি জানান তিনি।
মনোহরদী (নরসিংদী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকার রোববার নরসিংদী জেলা শাখার স্বারক লিপি প্রদান ও মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসক কার্যালয় যায়। এ সময় ইসলামী আন্দোলন নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আবদুল বারী ফযেজী, সেক্রেটারী মুফতি কাউছার আহম্মেদ ভূইয়া, সহ-সভাপতি আশরাফ হোসেন ভূইয়া, অধ্যক্ষ রাকিবুল হাসান, ডা. ইদ্রিস আলী উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসকের পক্ষে স্মারক লিপি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা আইসিটি) আবদুল্লাহ আল জাকি।
মন্তব্য করুন