নিরাপত্তা মানবজীবনের অন্যতম প্রধান কাম্যবস্তু। নিরাপত্তা ছাড়া সুখ ও শান্তি কল্পনাও করা যায় না। প্রাণহানি, সম্পদহানি ও সম্মানহানির ভয় যখন উপস্থিত হয় তখন সুখের সকল উপকরণ বিস্বাদ হয়ে যায়। তাই শান্তিময় জীবনের অন্যতম প্রধান শর্ত নিরাপত্তা। পৃথিবীর সব শ্রেণির মানুষ নিরাপত্তা চায়। সৎ লোকও চায়, অসৎ লোকও চায়। বিশ্বাসীও চায়, অবিশ্বাসীও চায়। অথচ পৃথিবীর সকল নেয়ামতের মতো নিরাপত্তাও আল্লাহ তা’আলার নেয়ামত। তিনিই মানুষকে নিরাপত্তা দান করেন এবং ভীতি ও শঙ্কা থেকে মুক্ত করেন।
মুসলিমজাতির পিতা হযরত ইবরাহীম (আ.) মক্কা নগরীর জন্য তাই প্রথমেই শান্তি ও নিরাপত্তার দুয়া করেছিলেন। মক্কাবাসীর জন্য আল্লাহর কাছে খাদ্য চাওয়ার আগেই তিনি চেয়েছিলেন ‘আমান’ তথা, শান্তি ও নিরাপত্তা।
কোরআন মজীদে ইরশাদ হয়েছে, স্মরণ কর, যখন ইবরাহীম বলেছিল, ‘হে আমার প্রতিপালক! একে নিরাপদ শহর কর, আর এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখেরাতে ঈমান আনে তাদেরকে ফলমূল থেকে জীবিকা প্রদান কর।’ আল্লাহ বললেন, ‘যে কেউ কুফরী করবে তাকে কিছুকালের জন্য জীবনোপভোগ করতে দিব, অতঃপর তাকে জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে বাধ্য করব এবং কত নিকৃষ্ট তাদের প্রত্যাবর্তনস্থল। (সূরা বাকারা : ১২৬)।
বলাবাহুল্য, এ নিরাপত্তা যেমন মানুষের ব্যক্তিজীবনে জরুরি, তেমনি পারিবারিক জীবনেও তা আবশ্যকীয় অনুষঙ্গ। আর ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের শান্তির জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা। একটি সমাজকে শান্তির সমাজ তখনই বলা যায় যখন তাতে জান-মালের নিরাপত্তা থাকে, সম্মানের সাথে জীবনযাপনের নিশ্চয়তা থাকে। শান্তির উপকরণ যেমন শান্তি নয়, তেমনি নিরাপত্তার উপকরণও নিরাপত্তা নয়।
নিরাপত্তা আল্লাহ তা’আলার বিশেষ নেয়ামত। এই নেয়ামত তিনি ব্যক্তি ও সমাজকে তখনই দান করেন যখন আল্লাহর ফরমাবরদারি করা হয়। জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর বিধানের আনুগত্যের দ্বারাই আল্লাহর পক্ষ হতে নিরাপত্তা লাভ করা যায়। পক্ষান্তরে আল্লাহর বিধানের অবাধ্যতা ও নাফরমানী ব্যক্তি ও সমাজকে নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করে। ঐ সমাজে প্রীতি ও একতার পরিবর্তে বিভেদ ও শত্রæতা ছড়িয়ে পড়ে। যারা একে অপরের জান মালের ‘রক্ষক’ হওয়ার কথা তারাই পরস্পরের জানমাল লুণ্ঠন করতে থাকে। ফলে সমাজে বিস্তার লাভ করে ভীতি ও দারিদ্র। শান্তির শত প্রচেষ্টা এবং দারিদ্র বিমোচনের অসংখ্য কর্মসূচী শুধু ব্যর্থই হতে থাকে। আর এই সব কিছু ঘটে আল্লাহবিস্মৃতি ও আল্লাহর নেয়ামতের না-শোকরীর কারণে।
কোরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেখানে আসত সবদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তা আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ অস্বীকার করল। ফলে তারা যা করত তার জন্য আল্লাহ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের। (সূরা নাহল : ১১২)। ঈমানের বিপরীত বিষয় হচ্ছে কুফর ও শিরক। কুফর ও শিরকে লিপ্ত হওয়া দুনিয়া-আখিরাতের নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত করে।
সূরা আনআমে ইরশাদ হয়েছে, তার স¤প্রদায় তার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হল। সে বলল, তোমরা কি আমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হচ্ছ আল্লাহর সম্বন্ধে? তিনি তো আমাকে সৎপথে পরিচালিত করেছেন। আমার পালনকর্তা অন্যবিধ ইচ্ছা না করলে তোমরা যাকে তাঁর শরীক কর তাকে আমি ভয় করি না। সবকিছুই আমার পালনকর্তার জ্ঞানায়ত্ত। তবে কি তোমরা অনুধাবন করবে না? তোমরা যাকে আল্লাহর শরীক কর আমি কিরূপে তাকে ভয় করতে পারি? অথচ তোমরা আল্লাহর শরীক করতে ভয় কর না, যে বিষয়ে তিনি তোমাদেরকে কোনো সনদ দেননি। সুতরাং যদি তোমরা জান তাহলে বল, দুই দলের মধ্যে কোন্ দল নিরাপত্তা লাভের বেশি হকদার? যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে জুলুম দ্বারা কলুষিত করেনি নিরাপত্তা তাদেরই জন্য এবং তারাই সৎপথপ্রাপ্ত। (সূরা আনআম : ৮০-৮২)।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন